মানুষের দুনিয়া-আখেরাতের কামিয়াবি ও সফলতা তার আমলের ওপর নির্ভরশীল। কাজ করলে ফল পাওয়া যাবে, এটা সর্বজনস্বীকৃত। দুনিয়ার সব মানুষ দুনিয়াবি সফলতার জন্য কাজ করে, কিন্তু আখেরাতের সফলতার জন্য কাজ করতে রাজি নয়। আখেরাতের বেলায় কাজ না করে ফল চায়। মনে রাখতে হবে, আমল ছাড়া সফলতা আসে না। আর শুধু আমল করলেই সফল হওয়া যাবে না, বরং আমল করার আগে আমলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানতে হবে এবং আমলগুলো সহিহ-শুদ্ধভাবে সম্পাদন করতে হবে। দুনিয়াবি যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারে মানুষ নিয়ম-নীতি মেনে চলে। যেমন বাবুর্চি কাজ করার আগে প্র্যাকটিস করে সে সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করে, তারপর বাবুর্চিগিরি করতে যায়। তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনে তারপর নিয়োগ দেয়। কিন্তু দীনের কাজের ব্যাপারে এ বিষয়ে যথেষ্ট শিথিলতা দেখা যায়। মনে হয় শেখার মন-মানসিকতাই নেই।
দুনিয়াবি মাসয়ালা-মাসায়েল এবং দীনি মাসয়ালা-মাসায়েলের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। দুনিয়ার মাসয়ালা-মাসায়েল হলো মানুষের চিন্তাপ্রসূত। এটা পরিবর্তন-পরিবর্ধনশীল; স্থান-কাল-পাত্র-ভেদে তা পরিবর্তন হয়। কিন্তু দীনের মাসয়ালা-মাসায়েল মানুষের চিন্তাপ্রসূত নয়; বরং সেগুলো স্বয়ং আল্লাহপাক তার রসুলের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়েছেন। তাই সেগুলো পরিবর্তন-পরিবর্ধনশীল নয়। সেগুলো সর্বদা একই নিয়মে চলে। স্থান-কাল-পাত্র কিংবা বিশেষ কোনো ব্যক্তির কারণে তাতে কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না। সুতরাং দুনিয়াবিষয়ক মাসয়ালা-মাসায়েলের তুলনায় দীনি মাসয়ালা-মাসায়েল জানার জন্য আরও বেশি আগ্রহের সঙ্গে মেহনত করা প্রয়োজন।
প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রে ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও মাসয়ালা রয়েছে, সে সব মাসয়ালা অবশ্যই জানতে হবে এবং আমলটি ওই মাসয়ালা মোতাবেক হলো কিনা, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমল দুনিয়াবি হোক কিংবা আখেরাতের লক্ষ্য রাখতে হবে, আমলটি মাসয়ালা মোতাবেক হলো কিনা? মাসয়ালা মোতাবেক হলে আমলটি গৃহীত হবে, অন্যথায় গৃহীত হবে না। আমাদের অবস্থা হলো আমাদের মাঝে আমলের আগ্রহ নেই। আর যাদের আমলের আগ্রহ আছে, তাদের আমল সম্পর্কে জরুরি জ্ঞান নেই, আবার যাদের জ্ঞান আছে, তাদের জ্ঞান মোতাবেক আমল নেই। আল্লাহপাক আমাদের যথাযথভাবে আমলের তাওফিক দান করুন।লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।