মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজধানীর নদ-নদী

দখল ও দূষণকারীদের রুখতে হবে

কহর দরিয়া তুরাগ নদ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। দিনে দিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুঁথি সাহিত্য ও রূপকথার সুখ স্মৃতিমণ্ডিত এই প্রিয় নদ। দূষণের কবলে পড়ে তুরাগ নদের পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সুপ্রিমকোর্টের আদেশ কিংবা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমল দিচ্ছে না দখলবাজরা। নদীদূষণের 'অপদেবতারা' দূষণ বন্ধে নিচ্ছে না যথাযথ উদ্যোগ। তুরাগের মতোই হতশ্রী অবস্থা রাজধানীর অন্য তিনটি নদীর। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন টনকে টন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে রাজধানীর চার নদ-নদীতে। মহানগরীর দেড় কোটিরও বেশি মানুষের মলমূত্র ও কলকারখানার বর্জ্য নদ-নদীতে পতিত হওয়ায় পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর গৃহস্থালি ও কলকারখানায় সাত হাজার টনেরও বেশি বর্জ্যের ৬৩ ভাগ বিভিন্ন খাল দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়। নদীতীর দখল করে রাজনৈতিক দলের অফিস তৈরি করা হচ্ছে। ট্রাকস্ট্যান্ড, টেম্পোস্ট্যান্ড, দোকানপাটও তৈরি করা হচ্ছে নদীতীর ভরাট করে। শীতলক্ষ্যা নদীও একই অবস্থার শিকার। দেশের বৃহত্তম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বুড়িগঙ্গা বিনাশে ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল আমলা নিয়ন্ত্রণাধীন থাকা অবস্থায়। একই অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগরীর পরিবেশ সমুন্নত রাখা চার সিটি করপোরেশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তাদের দ্বারা নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ের যে ক্ষতি হচ্ছে তা ক্ষমার অযোগ্য বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। বুড়িগঙ্গা নদীতীরেই মোগল আমলে ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। ঢাকা আজ বিশ্বের মেগা সিটিগুলোর একটি। বুড়িগঙ্গা না থাকলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করা হতো কিনা এটি একটি প্রশ্ন। নারায়ণগঞ্জে শিল্প ও ব্যবসায় কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল শীতলক্ষ্যাকে কেন্দ্র করে। পুঁথি সাহিত্যের কহর দরিয়া তুরাগের সঙ্গে শিল্পনগরী টঙ্গী শুধু নয়, বিশ্ব ইজতেমার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অবিভাজ্য বললেও অত্যুক্তি হবে না। নদ-নদী ও জলাশয়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাদের দায়িত্ব তারাই নদীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। জনগণের ট্যাঙ্রে টাকায় যাদের পোষা হয় দায়িত্ব পালনে তাদের অবহেলার কারণেই রাজধানীর চার নদ-নদীর তীর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার ব্যর্থতাও এ ক্ষেত্রে দায়ী। ঢাকা মহানগরীতে জীবনধারণের পরিবেশ বজায় রাখতে রাজধানীর সব নদ-নদী ও জলাশয়কে টিকিয়ে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে গড়ে তুলতে হবে জনসচেতনতা।

সর্বশেষ খবর