বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
ইতিহাস

গাযান খানের ইসলাম

সুলতান গাযান খানের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ একটি কৃতিত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে চিহ্নিত হইয়া রহিয়াছে। তাহার পূর্বে মোঙ্গল নৃপতিদের মধ্যে একমাত্র তাগুদাই (আহমদ) ব্যতীত অপর সকলেই পৌত্তলিক ছিলেন। তাগুদাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়া আহমদ নাম ধারণ করেন। ইহার ফলে সৈন্যবাহিনী তাহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তিনি ধৃত ও পরে নিহত হন। কেবলমাত্র সুলতান গাযানই ইসলামে দীক্ষা লাভ করেন নাই বরং তাহার সঙ্গে তাহার অসংখ্য অনুচরও ইসলামের ছায়াতলে আসেন। ম্যালকমের মতে, তাহার এক লক্ষ এবং ব্রাউনের বর্ণনা অনুযায়ী দশ হাজার অনুগামী ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। ধর্মভীরু ও নিবেদিতপ্রাণ গাযান ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। ডগলাস ব্যারেটের মতে, পারস্যদেশীয় অনুগামীদের সহায়তায় ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দে গাযান ক্ষমতা লাভ করিয়া পাগড়ির ব্যবহার প্রচলন করেন এবং মঙ্গলগণ স্থায়ীভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তিনি ইসলামের বিধান মানিয়া চলিতেন। ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে একটি আদেশ জারি করিয়া তিনি অনৈসলামিক কার্যকলাপ বন্ধ করিয়া দেন। যেমন- মদ্যপান, বেশ্যাবৃত্তি, কুসিদ গ্রহণ প্রভৃতি। হালাকু খানের বর্বরোচিত অভিযানে ইসলাম বিপণ্ন হইয়া পড়ে, কিন্তু গাযানের ধর্মীয় নীতির ফলে ইসলামের লুপ্তপ্রায় মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ঘটে। হালাকু খান ধ্বংসলীলায় উন্মত্ত থাকেন কিন্তু তাহার প্রপৌত্রের যুদ্ধাভিযানে জনপদ বিলীন হয় নাই। হত্যালীলাকে গাযান ঘৃণা করিতেন এবং অহেতুক রক্তপাতে তাহার অনীহা ছিল। বাগদাদ জয় করিয়া হালাকু আট লক্ষ নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করেন, কিন্তু গাযান খান দামেস্ক অধিকার করিয়া কোরআনের নামে একটি হুকমনামা জারি করেন। সাইকুস যথার্থই বলিয়াছেন, ইসলামের প্রভাবে মোঙ্গলদের ব্যবহারে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তাহা লক্ষ্য করা যাইবে দামেস্ক অধিকৃত হইবার পর গাযান খানের ব্যবহারে। তিনি শিয়া মতাবলম্বী ছিলেন। তিনি মুদ্রায় কলেমা খোদাই করিবার নির্দেশ দেন। গাযান খানের সহিষ্ণুতা, মহানুভবতা ও ধর্মপরায়ণতার ফলে দুর্ধর্ষ মোঙ্গল জাতি একটি সুসভ্য ও প্রগতিশীল জাতিতে পরিণত হয় এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে অবিশ্বাস্য অবদান রাখিতে সক্ষম হয়।

সর্বশেষ খবর