শিরোনাম
রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

পরিবেশ রক্ষায় ইসলাম

মওলানা সেলিম হোসাইন আজাদি

পরিবেশ রক্ষায় ইসলাম

ইসলাম পরিবেশ রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। পরিবেশের বিপর্যয় রোধে রয়েছে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। এ নির্দেশনা না মেনে চলার কারণে দূষিত পরিবেশের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। ভালো পরিবেশ, উন্নত জীবন ধারণের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি পরিবেশের প্রতি ছিলেন খুবই যত্নবান।

আমাদের এ সুন্দর পরিবেশ মহান আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কল্যাণ ও জীবন ধারণের প্রয়োজনে পরিবেশে বিদ্যমান যাবতীয় জিনিসও আল্লাহ তৈরি করেছেন। তিনি কোনোটাই অপ্রয়োজনে তৈরি করেননি। এ বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আল্লাহতায়ালা বলেন, পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে’ (সূরা আল-বাকারার ২৯)। অন্যত্র বলেন তোমরা কি দেখ না, নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহতায়ালা তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নিয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন’ (সূরা লুকমান)। আল্লাহপাক আমাদের পরিবেশে উপস্থিত ভূমিকে মানুষের কল্যাণে কীভাবে নিয়োজিত করেছেন তার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তা তারা ভক্ষণ করে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝরনা। যাতে তারা ফল পায়।’ (সূরা ইয়াসিন ৩৩) বৃষ্টি নিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা ও আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপন্ন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে।’ (সূরা আল-বাকারা ২২)

পরিবেশ ও জীবন ধারণের অন্যতম উপকরণ হচ্ছে পানি বিশুদ্ধ রাখা। পানি বিশুদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন নবী (সা.)। তিনি পানির উৎস যেমন নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। মহানবী (সা.) পানিতে আবর্জনা, মলমূত্র ও বর্জ্য ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা লা’নত আনয়নকারী তিন প্রকার কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখ। তা হলো পানির উৎসসমূহে, রাস্তাঘাটে ও বৃক্ষের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা কেউ বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে তাতে অজু কর না।’

পরিবেশ সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে নিজেদের দেহ-মন, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। এ ব্যাপারে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দূষণমুক্ত কর এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন রাখ।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইমানের ৭২টি শাখা। তার মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর সর্বনিæ হচ্ছে পথঘাট থেকে ক্ষতিকারক জিনিস দূর করা।’ পরিবেশ বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের প্রতিটি নাগরিককেই সচেতন হতে হবে। এটা ইমানেরই একটি শাখা।

ইমানের দায়িত্ব থেকেই আমাদের পরিবেশ রক্ষার প্রতি এগিয়ে আসা প্রয়োজন।  যত্রতত্র ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।  নর্দমায় আবর্জনা ভরে ভরাট করলে তা ফের আমাদের ঘরে, রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে ভেসে চলে আসবে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

 

 

সর্বশেষ খবর