মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ কি অপরাধ? 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ কি অপরাধ? 

 আমার জন্ম কালিহাতী। সেখানে ১০ নভেম্বর উপনির্বাচন। এক সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। পরে নানাজনের চাপাচাপিতে অংশ নিতে রাজি হয়েছিলাম। সেই মতো ১১ অক্টোবর সস্ত্রীক মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। মনোনয়ন নিয়ে যে খেলা দেখলাম তা বলার মতো না। মনে হয় জগৎ এমন জালিয়াতি আগে কোনো দিন দেখেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুঞ্জন রয়েছে, আমি নির্বাচন করি এটা নাকি আপনি চান না। আবার আপনার আশপাশের লোকদের মুখে এও শুনেছি, ‘বজ্র নির্বাচন করলে দোষ কী?  করতে চায় করুক না।’ এর কোনটা ঠিক কিছুই জানি না। এত বড় পদে অধিষ্ঠিত থেকে আপনি এত নিচু কাজ করবেন? মন সায় দেয় না, বুক ভারি হয়ে আসে। সেদিন ভাতিজা শেখরকে ফোন করেছিলাম, আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের একটা সময় করে দিতে। তিন দিন যায় আদৌ সময় পাব কিনা জানি না। মনে হয় আপনি ভালো নেই। অনেক কিছুই হয়তো আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। বাতাসের অনুকূলে চলতে হয়। কিন্তু তারপরও আপনার কাছে বিচার দিচ্ছি, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এসব আপনার দেখা উচিত। সন্তানের মতো আমার তিন বোন ও অনেকগুলো ভাই আছে। কিন্তু বড় বোন ছিল না। সে অভাব আপনি এক সময় পূরণ করেছিলেন। আপনার যত্ন ভুলিনি, ভুলবও না। আপনাকে অনেক চিঠি লিখেছি, আপনিও লিখেছেন। নির্বাচনের পর আবার একটি চিঠি লিখব। হয়তো উত্তর পাব না, কিন্তু লেখা হয়ে থাকবে। ১৯ আগস্ট টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। তার আগে প্রায় ৩০ বছর পর আপনাকে লিখেছিলাম। কিন্তু উত্তর পাইনি। আপনার মনে থাকার কথা, জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক আদালতে বিশ্বজিৎ নন্দীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী বিশ্বজিৎ নন্দীর সেই ফাঁসির আদেশ ’৮২ সালের সেপ্টেম্বরে কার্যকর করতে গেলে সারা দুনিয়ার নেতাদের চিঠি দিয়েছিলাম। সোভিয়েত রাশিয়ার ব্রেজনেভ, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, ব্রিটেনের মার্গারেট থেচার, তুরস্কের ডেমিরেলসহ আরও অনেককে। প্রায় সবাই উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার কাছ থেকে সেদিনের চিঠির উত্তর পাইনি। উত্তর দেননি বা পাইনি সেটা নিয়ে বলার কিছু নেই। কারণ সে চিঠি কোনো প্রধানমন্ত্রীকে ছিল না, মায়ের মতো এক বোনকে ছিল।

সে যাক! সময় বড় নিয়ামক শক্তি। আমি নির্বাচনে দাঁড়ালে যদি কারও কোনো ক্ষতি হয়, কোনো অসুবিধা হয় সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু কোনো কিছুতে কেউ চরম অন্যায়ের আশ্রয় নিলে তার ফল ভালো হয় না। আল্লাহতায়ালা সুশাসককে যেমন বেহেশতে নেবেন, খারাপ শাসককে তেমনি দোজখে নেওয়ার কথা বলেছেন। কোনো কারণ না থাকলে কেন আপনি সুশাসক হবেন না? আপনি আমার স্ত্রীকে ভালো করেই চেনেন, অত্যন্ত সাদামাটা একটা মেয়ে। আমার প্রার্থিতা না হয় বাতিল হলো, যে একসঙ্গে এখন পর্যন্ত লাখ টাকা গুনে দেখেনি, যার নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, নির্বাচন করতে গেলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন। সে জন্য একটা অ্যাকাউন্ট করা হয়েছিল। সেই মানুষটাকেও কেন প্রতারণা করে ভোটে দাঁড়ানোর অযোগ্য করা হলো? এমনটা করার কোনো মানে হয়?

এখন ব্যাংকের কথা বলি। সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রাঃ) লিমিটেড শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ’৭২ সালে গঠিত হয়। তখন উত্তরা ব্যাংকের সঙ্গে ছিল আমাদের লেনদেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হলে প্রতিবাদ প্রতিরোধে এক কাপড়ে ঘর ছাড়ি। ওই সময় রোডস অ্যান্ড হাইওয়েজের কাছে সোনার বাংলার পাওনা ছিল ১ কোটি ২০ লাখের উপরে। ১৬ বছর পর দেশে ফিরে সে পাওনা আর পাইনি। আবার নতুন করে শুরু হয় ’৯১ সালে। ’৯৪ সালে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। যা ২০০৪-০৫ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৪ কোটিতে উন্নীত হয়। সুদকে আসল ধরে মঞ্জুরি দেয়। সেভাবেই টাকা বাড়তে থাকে। ওই একই সময় আমরা প্রায় ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সুদ এবং অন্যান্য চার্জ দেই। গত ৩-৪ বছর যাবৎ একটি জমি বিক্রি করে ব্যাংকের বকেয়া একবারে শোধ করার বারবার চিঠি দিয়েছি। সর্বশেষ ১২/০৮/২০১৫ইং তারিখে চিঠির প্রেক্ষিতে ২৬/০৮/২০১৫ইং তারিখে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়, ঋণটি ১০% সুদে ১০ বছরে শোধ করতে হবে। সাধারণ গ্রাহক যেমন কোনো অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানে লগ্নি করে ঠিক তেমনি মনে হয় ব্যাংক যেন সোনার বাংলা প্রকৌশলিকের ওপর একটি ফিক্সড ডিপোজিট করেছে। অগ্রণী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ ২৬ তারিখ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে উল্লেখ করে,

‘ক) ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কাদের সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অপরিসীম অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হোন। খ) ঋণ গ্রহীতা ইতিপূর্বে কোনো সুদ মওকুফের সুবিধা ভোগ করেননি।

গ) ঋণ হিসাবটি দীর্ঘদিন যাবৎ মন্দ ঋণ হিসেবে শ্রেণিকৃত এবং ঘ) আদালতের মাধ্যমে ঋণ আদায় সময় সাপেক্ষ।’ এসব কারণে ব্যাংক সব বিধিবিধান পরিপালন করে ১০,৮৮,২৬,৪২৩ টাকা ১০% সুদে ১০ বছরে পরিশোধের অনুমোদন করে। পরিচালনা পরিষদের ৪২৭তম সভার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে ০৮/০৯/২০১৫ইং তারিখে অনুমোদনের জন্যে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃ তফসিল অনুমোদন করলে তাদের ডাটাবেইজে মন্দ ঋণের তালিকা থেকে সোনার বাংলাকে বাদ দেয়। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, টাঙ্গাইল শাখা সেই মতো ১৩/০৯/২০১৫ইং তারিখে বোর্ডের সিদ্ধান্ত আমাদের অবহিত করে। আমরা খুশি হই। সময় গড়াতে থাকে। ১ সেপ্টেম্বর বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী সংসদে উপস্থিত হয়ে তার সদস্যপদ ত্যাগ করেন। আমি ওই সময় ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্ত্রী গীতাদির শ্রাদ্ধ্য অনুষ্ঠানে দিল্লি ছিলাম। ঢাকা ফিরে শুনলাম, আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নানা জল্পনা-কল্পনা। সত্যিকার অর্থে তখনো আমার কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু তবু অনেকের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলাম। মনোনয়নপত্র দাখিল না করলে অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান যে এত জালিয়াতি করতে পারে তা বুঝতে পারতাম না। প্রথম নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হয়েছিল ৩০ সেপ্টেম্বর, যাচাই-বাছাই ছিল ৩ অক্টোবর, ভোটগ্রহণ ২৮ অক্টোবর। পরে আবার তফসিল পরিবর্তন করে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ১১ অক্টোবর, যাচাই-বাছাই ১৩ অক্টোবর। আমি এবং আমার স্ত্রী শুদ্ধভাবে ১১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র দাখিল করি। ওই দিনই রিটার্নিং অফিসার বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি লিখে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক আমার সংস্থার নাম মন্দ ঋণ তালিকায় দেখায়। অথচ ১১/১০/২০১৫ইং তারিখেও সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা মন্দ ঋণ তালিকায় ছিল না। একটি ভালো ঋণ মন্দ তালিকায় নিতেও ৯০ দিন সময় লাগে, আমার ক্ষেত্রে সেসব আইনকানুনও মানা হয়নি। যে কারণে ১৩ তারিখ যাচাই-বাছাইয়ে আমাদের দুজনের মনোনয়ন গ্রহণযোগ্য নয় বলে ঘোষণা করেন। অথচ নির্বাচনী আইনের ১২ ধারার ‘ড’তে স্পষ্ট বলা আছে- ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের ৭ দিন পূর্বে প্রার্থী সকল অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানে দায়মুক্ত থাকবেন। কোনো খেলাপি হবেন না।’ ৭ দিন তো দূরের কথা, সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রাঃ) লিঃ মনোনয়নপত্র দাখিলের ১ দিন আগেও কোনো খেলাপি ছিল না। আইনের দৃষ্টিতে এখনো খেলাপি নয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত লাখ হাজার ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে তাদের কারও ক্ষেত্রে এমন করা হয়নি। পুনঃ তফসিল করে একবার ডিক্লাসিফাই আবার যাচাই-বাছাইয়ের দিন ক্লাসিফাই দেখানো এটা কোনো আইনের কথা নয়। অগ্রণী ব্যাংক লিঃ, প্রধান কার্যালয় ১১ তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে, ঋণটি ভালো ঋণ না দেখিয়ে মন্দ দেখাতে। ১১ তারিখে চিঠির জন্য অগ্রণী ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদি অগ্রণী ব্যাংককে কারণ দর্শাতেই হয় তাহলে সিআইবিতে নাম তোলা হবে কেন? তবে কি এটা শুধু নির্বাচনে যাতে দাঁড়াতে না পারি তার কৌশল? এ তো দেখছি কাউকে ফাঁসি দিয়ে পরে বিচার বসানো। পুনঃতফসিল করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে আমার অবদানের কথা বলা হয়েছে। এখন দেশে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তাদেরও তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সোনার বাংলা প্রকৌশলিক বা আমি এমন কী অপরাধ করলাম যে যুদ্ধাপরাধীরা যে সুযোগ পায় তার কানাকড়িও আমরা পাব না? রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি যাতে ভেঙে না পড়ে, সচল থাকে তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের অনেক সুবিধা দিয়েছে। ৫০০ কোটি টাকার উপরে যাদের ঋণ তাদের ১২ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। ১২ বছরের মধ্যে তাদের ঋণখেলাপি তো দূরের কথা এ নিয়ে কোনো আলোচনাও করা যাবে না। এ তো দেখছি সেই নিরীহ মাস্টারের অবস্থা। এক মাস্টার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে ২০০ টাকা উঠাতে ব্যাংকে গিয়েছিলেন। চেক লিখতে গিয়ে দেখেন পাশে একজন লিখছে ‘৫ লাখ টাকা মাত্র’। সেটা দেখে মাস্টারের ভিরমি খাবার অবস্থা। হায় হায়! ৫ লাখ যদি মাত্র হয় তাহলে ২০০ কী হবে? অনেকক্ষণ চিন্তা করে কূলকিনারা না পেয়ে লিখেন ‘২০০ কিছুই না।’ ক্যাশিয়ার চেক নিয়ে টাকা দিতে গিয়ে ‘২০০ কিছুই না’ দেখে তাজ্জব বনে ম্যানেজারের কাছে ছোটেন। ম্যানেজার গ্রাহককে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, মাস্টার সাহেব, এ কী লিখেছেন? ‘কেন? পাশে একজন লিখছিল, ৫ লাখ মাত্র। ভাবলাম আমি কী লিখব! গরিব মানুষ মাস মাস টাকা জমাই। বাজার করতে দুই-একশ তুলি। ৫ লাখ মাত্র হলে ২০০ কী হবে? তাই লিখেছি কিছুই না।’ আমার অবস্থাও তেমন। ৫০০ কোটির ওপর ঋণীদের ১২ বছর কেউ জিজ্ঞাসাও করবে না। আমাদের ১০ কোটি সময় দিয়েছে ১০ বছর। সেখানেও নির্বাচনে অযোগ্য করতে কত ছলাকলা। তবে মুক্তিযুদ্ধ শেষে টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে যে অস্ত্র বিছিয়ে দিয়েছিলাম তার বর্তমান বাজার মূল্য অবশ্য অবশ্যই ১০-১৫ হাজার কোটি টাকার চেয়ে বেশি হবে।

 

 

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বহু জায়গায় দেখছি, তার সারা জীবনের সাধনাই ছিল সরকারি প্রভাবমুক্ত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। কালিহাতী উপনির্বাচনে তেমনটা হলে আপনার সরকারের আমলে একটা সুন্দর নির্বাচন হতে পারে- এটা যেমন বলতে পারতেন, নির্বাচন কমিশনও একটা ভালো নির্বাচন করতে পারে সেটা দেখার সুযোগ পেত। বঙ্গবন্ধু কত জায়গায় বলেছেন, ‘চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী।’ এখন অনেক ক্ষেত্রে তেমনটাই দেখছি। আমার বড় মেয়ে কুঁড়ি আজ প্রায় ১৫ দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। যে জন্য ওর মা স্বস্তিতে নেই। তবু তাকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিলে গিয়েছিলাম। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ৪ উপধারায় আছে, ‘নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। কমিশন এই সংবিধান ও আইনের দ্বারা পরিচালিত হবে।’ কমিশনের সামনে একের পর এক দলিল উত্থাপন করেছি। সাধারণত যে কোনো বিচারকার্যে যুক্তিতর্ক শেষে গ্রহণ বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু কমিশন তেমনটা করেনি। ঘরে গিয়ে হয়তো কারও সঙ্গে আলাপ করে আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণা না করেই পিয়নের হাতে কাগজপত্র দিয়ে মুখ লুকিয়ে চলে গেছেন। এটাও এক মস্ত বড় সংবিধান লঙ্ঘন। শুনে শুনে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। এসবই নাকি করেছে বা করছেন দেবদূত হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তি। ভদ্রলোকের অতীত খুব সুখের নয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে মোস্তাক মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান তিনি খুবই দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন। জিয়া, এরশাদ কারও সঙ্গে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হয়নি। কিছু দিন আগে ছাত্রলীগের এক সভায় নিজেকে জাহির করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘পুলিশদের, ক্যাডারদের ম্যানেজ করে আমরা নির্বাচন করে সফল হয়েছি। ছাত্রলীগের কর্মীরা বায়োডাটা দাও। শুধু তোমাদেরই চাকরি হবে।’ শুনেছিলাম, এরপর থেকে আপনার গণভবনের দরজা তার জন্য বন্ধ। তারপরও তিনিই নাকি এসব করেন? রাস্তাঘাটে শুনি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি না। তাই নিবেদন করি, সময় থাকতে ব্যাপারগুলো ভালো করে দেখুন ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গল হবে। একটা ছোট্ট ঘটনা বলি।

’৭৩ সালে তখনো বিরোধ ছিল, তবে এতটা অভদ্রভাবে নয়। তখন ভদ্রতা শালীনতার একটা সীমারেখা ছিল। কী এক কারণে কাদেরিয়া বাহিনীর বিশেষ ব্যক্তি ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফজলুর রহমানের মা ছিলেন স্কুল-কলেজের লেখাপড়া ছাড়া স্বশিক্ষিত এক অসাধারণ মহিলা। তিনি বারবার আসতেন আর বলতেন, ‘বাবা, তুমি বললে বঙ্গবন্ধু শুনে না, এটা বিশ্বাস করব? আমার পোলারে জেলখানা থেকে ফিরিয়ে এনে দাও।’ তখন সংসদ ভবন ছিল এখনকার তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। সেখানে গিয়ে ফজলুর রহমানের মুক্তির কথা বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম। তারপর চলে গিয়েছিল বেশ কয়েক দিন। কিন্তু তার মুক্তি হয়নি। একদিন রাত ৯-১০টার দিকে ধানমন্ডির বাড়িতে গিয়েছিলাম। সিঁড়ির মুখে ছাদের উপর ফণী ভূষণ মজুমদার, বগুড়ার এনার্জি মিনিস্টার মফিজ চৌধুরী, গাজী গোলাম মোস্তফা আরও কার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বসেছিলেন। আমি যেতেই ফণীদাকে উদ্দেশ করে তিনি বলছিলেন, ‘দেখেন, আমি যখন উঠছিলাম তখন আমাকে আটকে রাখতে হুজুর মওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছে কতজন কত চেষ্টা করত। আজ কাদেরের হয়েছে সে রকম। আপনিই বলুন, নিজের শক্তিতে কেউ উঠলে নিচে থেকে পায়ের আঙ্গুল ধরে তাকে ফেরানো যায়? কাদেরের এক কর্মী জেলে। কাদের বললে আমি শুনব না তা তারা বিশ্বাস করবে?’ এই বলে কাছে বসিয়ে বলেছিলেন, ‘তুই চিন্তা করিস না। কয়েক দিনের মধ্যে ওকে ছেড়ে দেব।’ যদিও তিনি তা পারেননি। দু-এক দিন পর হাইকোর্ট তাকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আমিও হাইকোর্টে যেতে চাই আইনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে, দেশে আইনের শাসনের মর্যাদা দিতে।  আপনি ভেবে দেখবেন, দেশে সুন্দর আইনের শাসন, অবাধ সরকারি প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন আপনার জন্য মঙ্গল বা রক্ষাকবচ, নাকি অন্য কিছু।

 লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর