মৎস্যকুলের মধ্যে ইলিশ সবচেয়ে সুস্বাদু। আর পদ্মার ইলিশ তো তুলনাহীন। বাঙালির সঙ্গে ইলিশের সম্পর্ক একসূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে মর্যাদা লাভের পেছনে বাঙালির মননে ইলিশের সযত্ন উপস্থিতি যে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তা সহজেই অনুমেয়। শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালির নববর্ষ পালনে গত সিকি শতাব্দী ধরে পান্তা-ইলিশ অপরিহার্য উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর অতিথি আপ্যায়নে ভূরিভোজের তালিকায় ইলিশের সগর্ব উপস্থিতি তো এ দেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ইলিশ আর বাঙালির রসনা বহু ক্ষেত্রে সমার্থক বিষয় হয়ে দাঁড়ালেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের আকাল একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। এক কেজির একটি ইলিশ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে কখনো কখনো। ইলিশের আকাল নিয়ে এ কলামেও আমরা কলম ধরেছি দেশবাসীর মর্মবেদনার কথা তুলে ধরতে। আশার কথা জেলেদের জালে এবার অন্য বছরের তুলনায় বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। তারপর সাগর ও নদীতে ইলিশের সমারোহে জেলেরা যেমন খুশি তেমন খুশি সাধারণ ক্রেতারাও। কারণ যে ইলিশ ছিল কদিন আগেও দুষ্প্রাপ্য তা এখন ধরাছোঁয়ার মধ্যে। এমনকি যেসব নদীতে গত দুই-তিন যুগ ধরে ইলিশের দেখা মিলত না সেখানেও ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে গত তিন যুগ ধরে ইলিশ ছিল দুষ্প্রাপ্য। এ বছর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের কড়াকড়ি পদক্ষেপ যে সুফল দিয়েছে নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনা তারই প্রমাণ। তবে এ সাফল্যে আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ থাকা উচিত নয়। চাহিদার তুলনায় ইলিশের জোগান এ মুহূর্তেও আহামরি কিছু নয়। এ অবস্থার উন্নয়নে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশের সুরক্ষায় আরও বেশি নজর যেমন দিতে হবে তেমন নদ-নদীর পরিবেশ রক্ষায়ও যত্নবান হওয়া দরকার। পরিবেশ বিঘিত হলে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসার ক্ষেত্রে হোঁচট যে খায় তা এক সাধারণ সত্যি।