মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কে আপিল করবেন বা করতে পারেন?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

কে আপিল করবেন বা করতে পারেন?

একটা নির্বাচন নিয়ে যে এত ষড়যন্ত্র হতে পারে এর আগে কখনো ভাবিনি, ভাবার কোনো প্রয়োজনও পড়েনি। সোনার বাংলা প্রকৌশলীকের ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছিল এক-দেড় মাস আগে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন কয়েকটি চ্যানেলে দেখা গেল, সোনার বাংলা ঋণখেলাপি। চেয়ারম্যান হিসেবে তাই আমি নির্বাচন করতে পারব না। যাচাই-বাছাইয়ের আগে কোনো প্রার্থী সম্পর্কে এমন প্রচার নির্বাচনী নীতিমালার বরখেলাপ।  নির্বাচনী আইনে একজন প্রার্থীকে যে কোনো অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে দায়মুক্ত থাকতে হয়। ঠিক তেমনি কোনো অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানও ওই সাত দিনের মধ্যে নতুন কোনো দায় সৃষ্টি করতে পারে না। দেনার দায়ে যাতে প্রার্থী হতে না পারি তার জন্য কি এই ছলাকলা? অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের জন্যে এটা শুভ নয়। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি অগ্রণী ব্যাংক যে আচরণ করেছে ভাবিকাল এর জবাব নেবে। ক’দিন শুনলাম, উল্টো বাতাস বইবার প্রধান কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার সব সময়ই সন্দেহ ছিল অমন অন্যায় প্রধানমন্ত্রী কেন করবেন? ওরকম জঘন্য অন্যায় করে তিনি কী পাবেন? তার লাভ কী? কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কায়মনে চান আমি সংসদে যাই এবং সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরি। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী বর্তমান অর্থ মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. রাজ্জাক সম্পর্কে শুনছি, আমি যাতে নির্বাচনে অযোগ্য হই সে জন্য তিনি নাকি মরিয়া হয়ে লেগেছেন। যেহেতু আওয়ামী লীগ করেন তাই লাগতেই পারেন, তাতে দোষ কী? ড. রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীতে ছিলেন। স্বাধীনতার পর অনেকবার খামে ভরে সোনার বাংলা থেকে তাকে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। তার জন্য সোনার বাংলাকে সাহায্য করবেন সেটা আশা না করলেও সোনার বাংলা তার শত্রুতা পাবে, ন্যায়বিচার পাবে না এটাও তো ভাবতে পারি না। মাঝে একদিন ড. রাজ্জাকের বাড়ি গিয়েছিলাম, সেদিনও তাকে এসবের সঙ্গে জড়িত বলে মনে হয়নি। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের পর তার পেরেশানি এবং আপিল করার জন্য চারদিকে দৌড়াদৌড়ির কারণে অগ্রণী ব্যাংকের অন্যায্য কর্মকাণ্ডের অংশীদার না ভেবে এখন আর পারছি না।

 

 

রিটার্নিং অফিসার অন্যায়ভাবে আমার স্ত্রী এবং আমার মনোনয়ন গ্রহণ করেননি। আমরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম ১১ তারিখ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের চিঠি ছিল ১২ তারিখের। আইনত ১২ তারিখের চিঠিতে কোনো কাজ হওয়ার কথা নয়। হয়তো স্বর্গ থেকে কল টিপে দেওয়ায় কলের পুতুলরা স্বর্গের নির্দেশ পালন করেছে। গিয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনে। ধারণা ছিল নির্বাচন কমিশন তাদের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে আমাদের যুক্তি গ্রহণ করবে। আমি সাধ্যমতো কাগজপত্র এবং যুক্তি তুলে ধরেছিলাম তাতে মনোনয়ন বহাল করা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের কোনো গত্যন্তর ছিল না। তারাও নাকি চলে স্বর্গের নির্দেশে। কোনো এক ব্যক্তি নাকি প্রধানমন্ত্রীর নামে তাদের পরিচালনা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে ভালো কাজ করলে না হয় চলত। কিন্তু এসব কাজে প্রধানমন্ত্রীকে জড়ানো কেন? অযথাই বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে ছোট করা, দেশেও একটা অশান্তি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা। বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে গিয়েছিলাম। এখনো আমার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে, তাই গিয়েছিলাম। বসেছিলাম একেবারে পেছনের দিকে। এখন তো দেশ সবদিকে ভাগ হয়ে গেছে। হাইকোর্টে এখন অবকাশ চলছে। তারপরও জরুরি বিচার আচার শুনতে কয়েকটি বেঞ্চ কাজ করছে। আমাদের রিট করা হয়েছিল মঙ্গলবার বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী এবং কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের কোর্টে। তারা পরদিন শুনতে চেয়েছিলেন। সকালে কোর্টে গিয়ে দেখি অ্যাটর্নি জেনারেল বসে আছেন। সেদিনের কার্যক্রম তালিকায় প্রথম ছিল আমার রিট। আমাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী অত্যন্ত সুন্দরভাবে আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। কমিশনের পক্ষে দাঁড়ান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। কোর্ট সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন তুলে, ‘আপনি দাঁড়াচ্ছেন কেন? নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ দাঁড়াবেন?’ জনাব মাহবুবে আলম বলেন, তিনি সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা। তাই সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব জায়গায় অংশ নিতে পারেন। কোর্ট তার কথা মানতে চায়নি। তারপরও তিনি লম্বা সওয়াল করেছেন। সবকটি সওয়ালই তার বিরুদ্ধে গেছে। তার প্রথম প্রশ্ন ছিল, ঋণটি পুনঃ তফসিল করা হয়নি, ১০ বছরের সময় বা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র জুনিয়র দুজন বিচারপতিই অ্যাটর্নিকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘১০ বছরের সুযোগ দিলেন সেটা কিসের সুবিধা? পুনঃ তফসিল না হলে তিনি অন্য ব্যাংকের সুযোগ পাবেন? তিনি একজন রাজনৈতিক মানুষ। এই ১০ বছর তিনি কোথাও নির্বাচন করতে পারবেন? তিনি নিজেই নিজের ফাঁসির দড়ি গলায় পরলেন? তাকে কি খুদিরাম বাঘা যতিনের দলে ফেলছেন? আপনার কথায় এখানে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই তো বেশি। পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের পর অগ্রণী ব্যাংক হেড অফিস বাংলাদেশ ব্যাংককে ঋণটি পুনঃ তফসিল এবং সিআইবি তালিকা থেকে সোনার বাংলার নাম কেটে দিতে বলেন। সে অনুসারে নাম কেটে দেয়। তাহলে এটা পুনঃ তফসিল হলো না কী করে? যে শাখা থেকে ঋণ দিয়েছে, সেই শাখা ঋণটি পুনঃ তফসিল হয়েছে এবং বিশ্রেণিকৃত হিসেবে বিবেচিত হবে বলে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। তারপর গ্রাহক হিসেবে তাদের আর কী করার ছিল বা আছে? সবার ক্ষেত্রে আইন হবে এক রকম, কাদের সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে আরেক রকম- এটা কেমন কথা?’ তারপরও অ্যাটর্নি জেনারেল একথা ওকথা বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার কোনো বিষয়-সম্পত্তি যাতে নিলাম না হয় সে জন্য ১০ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। অথচ ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ বলেছে, ‘স্মারকটি পর্যালোচনান্তে পরিষদ লক্ষ্য করেন যে- (ক) ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অপরিসীম অবদানের জন্য তিনি বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত হন; (খ) ঋণগ্রহীতা ইতিপূর্বে কোনো সুদ মকুফ সুবিধা ভোগ করেননি; (গ) ঋণ হিসাবটি দীর্ঘদিন যাবৎ মন্দ হিসাবে শ্রেণীকৃত এবং (ঘ) আদালতের মাধ্যমে ঋণ আদায় সময়সাপেক্ষ।’ তারাই বলেছে, আদালতের মাধ্যমে ঋণটি আদায় করা সময়সাপেক্ষ। একপর্যায়ে কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপুটি অ্যাটর্নি দাঁড়ান। তিনি বলেন, প্রার্থীর ব্যাংকের সঙ্গে কী সম্পর্ক, তিনি খেলাপি নাকি খেলাপি নন, সেটা কমিশনের বিবেচ্য নয়। কমিশন খেলাপি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংকের চিঠি পেয়েছে, তাই তার মনোনয়ন বাতিল করেছে। তিনি ঋণখেলাপি না হলে তার মনোনয়ন বৈধ হবে এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

কোর্ট রায় দেন আমার মনোনয়ন বৈধ, আমাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু কেন যেন অ্যাটর্নি জেনারেল জিনিসটা প্রায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে সব প্রচার মাধ্যমকে বলেন, সরকার পক্ষে তিনি আপিল করবেন। এখানে সরকার কিসের পক্ষ? সরকার কী করে পক্ষ হলো? সরকার তো কোনো পক্ষ নয়। তাই আগ বাড়িয়ে তার সরকার পক্ষ আপিল করবে বলা আইন সিদ্ধ নয় এবং সংবিধানবিরোধী। দুই দিন পর শুনলাম নির্বাচন কমিশন আপিল করবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কি প্রতিপক্ষ? তার আপিল করার এখতিয়ার কোথায়? রিটার্নিং অফিসার মনোনয়ন বাতিল করায় আমরা নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলাম।

তাদের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ায় হাইকোর্টে গেছি। এখানে নির্বাচন কমিশনেরও প্রতিপক্ষ হওয়ার কথা না। নির্বাচন কমিশন এখানে আদালতের মতো। কত ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রায় জজকোর্টে আপিল হয়। জজকোর্টের রায় হাইকোর্টে যায়। জজকোর্টের কোনো মামলা হাইকোর্টে আপিল হলে জজকোর্ট কি প্রতিপক্ষ হয়ে আপিল করে? কখনো করে না। তাহলে ইলেকশন কমিশন কীভাবে আপিল করবে এটা আইনের বরখেলাপ হবে না? আপিল যদি করতেই হয় তাহলে করবেন যারা সত্যিকারের প্রতিপক্ষ তারা। আর রিটার্নিং অফিসার প্রার্থীকে একবার প্রতীক বরাদ্দ করলে নির্বাচন স্থগিত চলে, আপিল চলে বলে শুনিনি। নিশ্চয়ই আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতেই পারে। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর পায়ের সামনে বর্তমান বাজার মূল্যের ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র বিছিয়ে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে যৌবন ঝরিয়েছি। আমার ওপর অমন অবিচার না হলে কার ওপর হবে? বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত যুদ্ধাপরাধের বিচার। যুদ্ধাপরাধীরাও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমি পাব না।

ব্যাপারটা কি ছেলেখেলা? সোনার বাংলাকে ঋণখেলাপি দেখিয়ে নির্বাচনে আমাকে অযোগ্য করার চেষ্টা হলে বাংলাদেশে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। এখনো যে ৫৭ হাজার কোটি টাকা মন্দ ঋণে পড়ে আছে। যাদের ৫০০ কোটি টাকার ওপর ঋণ তাদের ১২ বছর ওইসব ঋণ নিয়ে কোনো প্রশ্নও করা যাবে না বলে গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এক পরিপত্র জারি করেছে। আর আমাদের এ ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে টানাটানি। সোনার বাংলাকে খেলাপি দেখালে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক দিনে স্থবির হয়ে যাবে। আমরা প্রতিদিন কোর্টে যাব বড় বড় দলীয় ঋণখেলাপিদের নিয়ে রিট করতে। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল উত্তেজনা বশে যাই বলুন, ভেবেচিন্তে কাজ করবেন। ইচ্ছা হলেই সব জায়গায় গায়ের জোরে এগুবেন না।

ধীরে ধীরে দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কোথাও আশ্রয় পাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের শেষ ভরসা আদালত। সোনার বাংলা প্রকৌশলীকের ঋণ নিয়ে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ আদালতে যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ন্যায়-নীতি, আইন লেশমাত্র ছিল না। আদালতের রায় শোনামাত্রই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রচার মাধ্যমকে বলেন, সরকার পক্ষ আপিল করবে। এখানে কোনোভাবেই সরকার পক্ষ আপিল করতে পারে না। অযথা তার আপিলের কথায় সাধারণ মানুষ এবং ভোটাররা বিব্রত, বিভ্রান্ত। ২৫ অক্টোবর রবিবার সারা দিন বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল করেছেন আজ তার শুনানি হবে। অথচ গতকাল যখন এ লেখা লিখছিলাম তখন পর্যন্ত মামলাটি কোর্টে তালিকাভুক্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১১৮ এর ৪ উপধারায় কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং যে কোনো নির্বাচনে সরকারি ব্যক্তিবর্গ প্রতিষ্ঠান তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবে। সেই নির্বাচন কমিশন যদি হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্টে পক্ষ হয় তাহলে একজন প্রার্থী হিসেবে তার প্রতি আস্থা রাখব কী করে? আগেই বলেছি, জজকোর্টের কোনো রায়ে অসন্তুষ্ট কোনো ব্যক্তি হাইকোর্টে গেলে কোনো দিন কোথাও কোনো কোর্ট ক্ষুব্ধ হয়নি, ক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এখানে যদি কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তাহলে তো তারা প্রতিপক্ষই হয়ে গেলেন। তারা নির্বাচন পরিচালনার সব অধিকার হারিয়ে ফেলবেন। তখন নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজন হবে। আমার জন্য বা কালিহাতী উপনির্বাচনের জন্য নির্বাচন পরিচালনার অন্য কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে কী? নিশ্চয়ই তা হবে না। আগে ভাবতাম না, এখন ভাবি একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর এত জুলুম কেন? তবে কি ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর ওপর যে অন্যায়-অবিচার হয়েছে, যেসব জুলুম হয়েছে, তার রাজনৈতিক ভাবাদর্শে বিশ্বাসী বলে আমার ওপর সেসব জুলুম ফিরে এসেছে? ’৬২ তে মোনায়েম খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ক্ষমতায় থাকতে শেখ মুজিবকে সূর্যের মুখ দেখতে দেব না।’ আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেই সূর্যের মতো আলোকিত করে কারাগার থেকে বের করেছিলেন। বরং মোনায়েম খান ক্ষমতা হারিয়ে পরপারে যাওয়ার আগে বহু বছর সূর্যের মুখ দেখেননি। জুলুমের সীমা যখন অতিক্রম করে তখন আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে, আল্লাহ সহ্য করেন না। আমি মারাত্মক সমস্যায় আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মায়ের মতো বোন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা তার চারপাশে দুষ্ট লোকেরা অপকর্ম করে তার দায়ভার তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সত্যিই দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বাধাগ্রস্ত সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ। তারা ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত সরকার করতে চায়, সে অধিকার বা ক্ষমতা কারোরই হরণ করা উচিত না। দেশের মানুষ হাসিমুখে একবেলা না খেয়ে থাকতে তৈরি। কিন্তু তারা ভোট না দিয়ে থাকতে চায় না।  তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্র যেমন অপরিহার্য, তেমনি গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান সরকারি প্রভাবমুক্ত অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন- যা আমাদের নেতা, রাজনৈতিক পিতা সারা জীবন আশা করেছেন। আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেবেন। যা হওয়ার হয়ে গেছে।  এখন সামনের দিনগুলো নিখাদ গণতন্ত্রের জন্য তার প্রচেষ্টা হবে একেবারে বিশুদ্ধ।

লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর