দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী ধূমপায়ীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই এ উদ্বেগজনক প্রবণতার কথা স্বীকার করেছেন। গত বৃহস্পতিবার তার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। জানিয়েছেন আগামী মার্চ থেকে সব তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের উভয় পাশে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। স্মর্তব্য, দেশে প্রতিবছর ১৪ দশমিক ছয় শতাংশ পুরুষ ও পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ নারী তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যান। প্রায় ৪৫ শতাংশ পুরুষ ও দুই শতাংশ নারী ধূমপান করেন। ৩ শতাংশ ছেলে ও ১ শতাংশ মেয়ে ধূমপানে আসক্ত। এ ছাড়া পুরুষের মতো নারীরাও বিভিন্ন তামাকদ্রব্য নিয়ে থাকেন। তামাক শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি। ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য রোগের অন্যতম কারণ এটি। আজ থেকে ৫২৩ বছর আগে কলোম্বাস আমেরিকা জয় করেছিল। আমেরিকার আদিবাসীদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল সে দেশের অধিকার। এ পাপের ফল ভোগ করছে এখন সারা পৃথিবী। ইউরোপীয়রা আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের কাছে শিখেছিল ধূমপান বা তামাক ব্যবহারের কুপ্রথা। তারপর তারা সারা দুনিয়ায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয় ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের রীতিনীতি। এই উপমহাদেশে সম্রাট আকবরের আমলে প্রচলিত হয় ধূমপানের কু-প্রথা। স্বাস্থ্যের জন্য মহাউপকারী এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন ইত্যাদি প্রতারণামূলক বক্তব্যের মাধ্যমে তারা মোগল সম্রাটকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়। কালক্রমে ধূমপান প্রথা বা তামাক ব্যবহার বাংলা মুল্লুকেও ছড়িয়ে পড়ে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামাকের ব্যবহার বন্ধে তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী রাখা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তবে তামাক নামের ভয়াবহ আপদের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে তামাক ব্যবহারের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকা উচিত। দুনিয়ার সব ধর্মে নেশাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে মসজিদের ইমাম এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জার পুরোহিতরা ধর্মপ্রাণ মানুষকে সচেতন করলে তা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।