মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
দৃষ্টিপাত

শিশু নির্যাতন বন্ধ হোক

ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

সিলেটে শিশু রাজন হত্যা মামলায় কামরুলসহ চারজনের ফাঁসি, একজনের যাবজ্জীবন ও তিনজনকে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আদালত। গত রবিবার একই দিনে খুলনার আদালতে শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায়ে শরিফ ও মিন্টু খান নামের দুজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ৮ জুলাই সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে ভ্যান চুরির অভিযোগে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। পক্ষান্তরে খুলনায় শিশু রাকিবকে হত্যা করা হয়েছিল পাম্পের মাধ্যমে পেটে হাওয়া ঢুকিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে ঘটনাটি প্রচার হলে সর্বস্তরের মানুষ এর প্রতিবাদ করে। শুধু রাজন বা রাকিব নয়, এরকম হত্যাকাণ্ড এর পর আরও হয়েছে। রাজন ও রাকিব হত্যার মামলা যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। পাশাপাশি শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে অন্য যেসব মামলা চলমান রয়েছে সেগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই হবে।

গণমাধ্যমে চোখ রাখলে এরকম শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমাদের প্রায়ই চোখে পড়ে। বর্বরোচিত ও পাশবিক কায়দায় নির্যাতনের শিকার হয় কোনো না কোনো শিশু। প্রতিকারহীন এসব শিশু নির্যাতনের কারণে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে শিশু নির্যাতন।

সিলেটের রাজনের পর খুলনায় একই কায়দায় শিশু নির্যাতনের ঘটনা সারা জাতিকে হতবাক করেছিল। একের পর এক শিশু নির্যাতন আমাদের চরম সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্রকেই তুলে ধরে। শিশুদের প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। অথচ আমরা শিশুদের মানবিক মূল্যবোধের দৃষ্টিতে দেখা তো দূরের কথা দরিদ্র ও পথশিশুদের প্রতি সর্বনিম্ন সহনশীলতার দৃষ্টিভঙ্গিও পোষণ করি না। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের (অনুচ্ছেদ-৩৪, শিশু আইন) মতে, শিশুর হেফাজতের দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি শিশুটির প্রতি কোনো অমানবিক আচরণ করতে পারবে না বা শিশুটিকে অরক্ষিত অবস্থায় কোথাও ফেলে রেখে যেতে পারবে না এবং এ ধরনের অবহেলার মাধ্যমে যদি শিশুটির ক্ষতি হয় তাহলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে শিশু আইনে বিবেচিত হবে। দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের টনক তেমন একটা নড়ছে না। এই নিষ্পৃহতার জন্যই সমাজে শিশু নির্যাতন না কমে বরং বাড়ছে। নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না, বিবেক কথা বলে না। তবে আমার আশা, অসহায় শিশু-কিশোরদের প্রতি মানুষ একটু সহানুভ‚তিশীল হবেন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে।

পারিবারিক আইনে শিশুর ভরণপোষণ, শিশুর হেফাজত, সঠিক প্রতিপালন নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি শিশুই জন্মের পর যথাযথ সেবা পাওয়ার অধিকারী। শিশুরা একটি জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার বিধায় শিশুর প্রতি যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিটি ব্যক্তিকেই শিশুর বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে শিশু আইনের এ ধারাটি নির্দেশনা দেয়। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে আজকের শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিতে পারবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের। কিছু কিছু ঘটনাকে শুধু বর্তমানের মধ্যে সীমিত ভাবলে ভুল ভাবা হয়। শিক্ষার মতো ক্রমবিকাশমান ক্ষেত্রটির বেলায় এ কথা শতভাগ প্রযোজ্য। কারণ এক্ষেত্রের বাধা-বিপত্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ভবিষ্যতের বিপদ-আশঙ্কা লুক্কায়িত থাকে। তাই বলছি, শিশুদের শিকলে বেঁধে রাখা তাদের মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এটি দেশের প্রচলিত আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ।

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম।

e-mail: [email protected]

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর