দেশের ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের কাছে বিনিয়োগযোগ্য বিপুল পরিমাণ তারল্য থাকলেও ঋণ গ্রহীতার অভাবে সে অর্থ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। নানা অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে এগিয়ে না আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে চলা গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট আর অবকাঠামো সমস্যার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। দেশে দৃশ্যত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশি-বিদেশি সব উদ্যোক্তাই শঙ্কিত। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সংশয় থাকায় কোনো উদ্যোক্তাই নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। ঋণের জন্য উদ্যোক্তারা ব্যাংকে তেমন কোনো আবেদনই করছেন না। ব্যাংকগুলোতে সব ধরনের ঋণের আদায়ও কমেছে। ফলে বাড়ছে ঋণ খেলাপির পরিমাণ। আস্থাহীনতা ও অনিশ্চয়তার পাশাপাশি এ অবস্থার জন্য ব্যবসায়িক লোকসানও দায়ী। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী অক্টোবর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এই অলস টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে। এই অর্থ বিনিয়োগে না এলেও আমানতকারীদের সুদ গুনতে হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ অবস্থা থেকে বেরোতে না পারলে কোনো কোনো ব্যাংক লোকসানের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কথায় বলে বাণিজ্যে বসতি লক্ষী। দেশে ব্যবসা বাণিজ্য যত হবে ততই সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। দেশে দৃশ্যত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিদ্যমান পরিস্থিতির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অবস্থাও তেমনি। দেশে দুই বিদেশিসহ সংঘটিত বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড জনমনে যে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে তা থেকে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও মুক্ত নয়। তাদের মনে যে আশঙ্কা ও সংশয় বিরাজ করছে তার অবসানে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাস করে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলায় লাগাম পরাতেও নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।