শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঐশীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ

যে সমাজ তাকে মাদকাসক্ত করেছে তারা দায় এড়াতে পারে না

পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যার দায়ে তাদের একমাত্র কন্যা ঐশী রহমানকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক সাঈদ আহমেদ। পরিকল্পিতভাবে একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং মামলার আলামত নষ্ট করার দায়ে তাকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে। ঐশী যেভাবে তার বাবা-মাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তাতে সর্বোচ্চ সাজা তার প্রাপ্যই ছিল এবং এ বিষয়ে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। এ বিবেচনায় বলা যায়, মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারে আইন তার নিজস্ব পথে চলেছে। অপরাধীকে বিচারের মাধ্যমে প্রাপ্য শাস্তি দিতে বিচারকসহ মামলা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ন্যায়ানুগ ভূমিকাই পালন করেছেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডকে অন্য সব অপরাধের মতো ভাবার সুযোগ আছে কিনা তাও একটি বিবেচ্য বিষয়। মামলার রায় সম্পর্কে সুধীজনদের মন্তব্যে সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বাবা-মা হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমান আমাদের নষ্ট সমাজেরই এক প্রতীকী রূপ। যে সমাজ ঐশী রহমানকে মাদকাসক্ত এবং খুনি হতে মদদ জুগিয়েছে, তারা এর দায় এড়াতে পারে না। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজের বাসা থেকে মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে পুলিশ ২০১৪ সালের ৯ মার্চ নিহত দম্পতির একমাত্র কন্যা ঐশী রহমানকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। গত বছরের ৩০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের হত্যাকাণ্ড মাদকাসক্তির থাবা কীভাবে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে গ্রাস করছে সে সত্যকেই স্পষ্ট করেছে। সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যর্থতা জনক-জননীর জন্যও যে বিয়োগান্তক পরিণতি বয়ে আনতে পারে এ হত্যাকাণ্ড তারই সাক্ষী।  সন্তানদের প্রতি বাবা-মার যথাযথ নজরদারি থাকলে তাদের যে অকাম্য পরিণতির শিকার হতে হতো না তা অনেকটাই অনুমানযোগ্য। মাহফুজুর ও স্বপ্না রহমান হত্যাকাণ্ডে বিচারিক আদালত রায় দিয়েছেন আইনের মধ্য দিয়ে। সমাজ এবং অন্য কাউকে অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত করার সুযোগ আইনে নেই।  তারপরও এ রায় আমাদের পুরো সমাজকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তবে এ ঘটনা থেকে সবাই শিক্ষা পেলে সেটি হবে এক বিরাট অর্জন। ঐশী রহমান হওয়ার বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাওয়ার সেটিই হবে প্রকৃষ্ট উপায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর