শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিড়ম্বনার নাম যানজট

দেশের অর্থনীতির জন্যও সর্বনাশ ডেকে আনছে

যানজট রাজধানীর দেড় কোটি মানুষের কাছে এক নিত্য বিড়ম্বনার নাম। নগরবাসীর মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে এই ভয়াবহ সমস্যা। জাতীয় অগ্রগতির জন্যও তা অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ঢাকা শহরের যানজট ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ সমস্যা দেশের অর্থনীতিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে সে বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। বিনিয়োগ বোর্ডের উপ-পরিচালক সঞ্জয় চক্রবর্তীর ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার যানজটের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা বর্তমান জিডিপির প্রায় সাত শতাংশ। বিশ্বের আর কোনো দেশে যানজটের কারণে এত আর্থিক ক্ষতি হয় না। শুধু যানজট দূর করা গেলে বাংলাদেশের জিডিপি ১৩ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে। যানজটের আর্থিক ক্ষতির এই হিসাব তৈরিতে যাতায়াতের অতিরিক্ত সময়, সামাজিক মূল্য, যাতায়াতে দেরির কারণে আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি, যানবাহন চলাচলের অতিরিক্ত খরচ, পরিবেশগত ক্ষতির খরচ ও সড়ক দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক ক্ষতির খরচ যোগ করা হয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যানজটের কারণে যে সময় নষ্ট হয়, তার আর্থিক ক্ষতি ৫৬১ কোটি ডলার, যানজটের শিকার ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য পক্ষের ব্যয় ৩৯৩ কোটি, সামাজিক মূল্য ২৮০ কোটি ও যানবাহন পরিচালনায় অতিরিক্ত ব্যয় ১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার হিসাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৩৫ শতাংশের জোগান আসে ঢাকা শহর থেকে। ঢাকার যানজটের আর্থিক ক্ষতির যে চিত্র গবেষণায় উঠে এসেছে তা দেশের উন্নয়ন বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ, আর প্রবাসী-আয়ের প্রায় সমান। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। রাজধানীর যানজট সম্পর্কে পরিচালিত গবেষণাটি সময়ের বিচারে প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। যানজট এমনই এক আপদ যার ভয়ে বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজধানীতে আসতে নিরুৎসাহিত হন। গবেষণাপত্রে যানজট সমস্যার সমাধানে দুই ধরনের কৌশলগত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।  এর একটি হলো ঢাকা মহানগরীতে মানুষের যাতায়াত কমিয়ে আনা। দ্বিতীয়টি হলো এ সমস্যার সমাধানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ। আমাদের মতে, সব প্রস্তাবের বাইরে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অনেক বেশি জরুরি। যেখানে সেখানে পার্কিং, রাজপথ ফুটপাথ অপদখল বন্ধ করতে পারলে এ সমস্যার জট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর