শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব

মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

সব প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের সৃষ্টিকুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং আল্লাহর ভয় বা তাকওয়ার গুণ অর্জনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর বিশেষ মর্যাদা লাভের সুযোগ দান করেছেন। সালাত ও সালাম সেই রসুলের (সা.) ওপর যার আদর্শের প্রকৃত অনুসারীদের আল্লাহপাক দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভের নিশ্চয়তা দান করেছেন। উপস্থিত মুসলিম ভাইয়েরা! আমরা মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা পেশ করব। তাকওয়া আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, পরহেজ করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো, একমাত্র আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। যে ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া থাকে তাকে মুত্তাকি বলা হয়। সৎ গুণাবলির মধ্যে তাকওয়া হচ্ছে অন্যতম। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে সে পার্থিব জীবনের লোভে কোনো খারাপ কাজ করে না এবং পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখে। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজকর্ম-কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে তাকে মুত্তাকি বলা হয়। তাকওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য : তাকওয়া মানুষ চরিত্রের অন্যতম সম্পদ। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের মূল ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া। ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবনযাপনের চালিকাশক্তি হচ্ছে তাকওয়া। মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর (সূরা আলে ইমরান-১০২)

আরও ইরশাদ হয়েছে- এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর মনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন। (সূরা বাকারা-১৯৪)। তাকওয়া আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভ করার উপায়। কোরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে- নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন। (সূরা তাওবা-৪)

আল্লাহতায়ালা অপর আয়াতে এরশাদ করেন- মুত্তাকিরা থাকবে নিরাপদ স্থানে। (সূরা দুখান-৫১)

মুত্তাকিরা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহপাকের বাণী- তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি। (সূরা হজুরাত-১৩)

তাকওয়া শুধু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় না, বরং তা জান্নাতে প্রবেশ করতেও সাহায্য করে। যেমন মহান আল্লাহপাকের বাণী- আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল। (সূরা নাযি’আত : ৪০-৪১)

তাকওয়া প্রসঙ্গে রসুল (সা.) থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো, ইয়া রসুলুল্লাহ মানুষের মধ্যে অধিক সম্মানিত কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে অধিক মুত্তাকি বা পরহেজগার। (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রসুল (সা.) আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমাকে হিদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুখাপেক্ষিতা এসব গুণ দান করুন। (মুসলিম)। হজরত আদী ইবনে হাতিম তাই (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে শপথ করে, অতঃপর সে অন্য কিছু এর চেয়ে বেশি তাকওয়াপূর্ণ মনে করে, তবে সে যেন তাকওয়াপূর্ণ বিষয়কেই অবলম্বন করে। (মুসলিম)

কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, তাকওয়া এমন একটি গুণ যা সমাজ জীবনে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে, সমাজে ইতিবাচক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে এবং তাকওয়ার অভাবে মানব চরিত্র পাপকর্মে লিপ্ত হয়ে সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। যার নজির বর্তমান বিশ্বের সর্বত্র বিরাজমান।  পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান সমস্যাসংকুল ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকওয়ার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে যতদিন না তাকওয়া সৃষ্টি হবে, ততদিন মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও মঙ্গল আশা করা যায় না।  তাই বলা যায়, তাকওয়া হলো, মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত জীবনের মুক্তি ও নাজাতের মূল চাবিকাঠি।

সর্বশেষ খবর