সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি

আইনের হাত যে অনেক বড় প্রমাণিত হলো

শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে অবশেষে ফাঁসিতে ঝুলতে হলো। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা স্বজাতির বিরুদ্ধে আবিভর্‚ত হয়েছিলেন মূর্তমান জল্লাদ হিসেবে। চট্টগ্রামে গণহত্যা ও নির্যাতন নিপীড়নের স্টিম রোলার চালিয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন সাকা চৌধুরী। পাকিস্তানের সাবেক স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর এই গুণধর পুত্রের হাতে নিহত হন কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের কর্ণধার নূতন চন্দ্র সিংহ। উত্তরপাড়া গণহত্যা ও বণিকপাড়া গণহত্যার অপনায়কও ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধে যাদের বিচার হয়েছে বা বিচার চলছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যার অভিযোগ রয়েছে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ একাত্তরে পরিচিত ছিলেন আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের হোতা হিসেবে ভাবা হয় জামায়াতে ইসলামীর এই সেক্রেটারি জেনারেলকে। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে একাত্তরে ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মবিক্রিত দাসানুদাসরা বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তাদের হাতে নিহত হন শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখকসহ বিপুলসংখ্যক বুদ্ধিজীবী। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তারা রাজনীতির লাইমলাইটে চলে আসেন। এরশাদের আমলে সাকা চৌধুরী ঠাঁই পান তার মন্ত্রিসভায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাকা চৌধুরী এবং মুজাহিদ দুজনই মন্ত্রীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধ হয়নি এমন দম্ভ দেখাতেন মুজাহিদ। আর সাকার দাম্ভিক আচরণও সবার জানা। এই দুই সাবেক মন্ত্রীর ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে আইনের হাত যে অনেক বড় তা প্রমাণিত হলো। রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেও সাবেক দুই মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে পারলেন না। তাদের এই শাস্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী লাখ লাখ শহীদের প্রতি জাতির দায় পূরণ করা হলো। একইভাবে তাদের পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রী ও মন্ত্রী মর্যাদাসম্পন্ন পদের অধিকারী ছিলেন।  মুজাহিদ প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের সেক্রেটারি জেনারেল এবং একজন সাবেক মন্ত্রী। তাদের এ পদমর্যাদা আইন এড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখতে পারেনি। ক্ষমতাদর্পীদের জন্য এ ফাঁসি শিক্ষণীয় হয়ে উঠবে এমনটিও কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর