মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়া

হঠকারিতার বদলে ওদের ক্ষমা চাওয়া উচিত

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির পর পাকিস্তান সরকার এবং সে দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা ধৃষ্টতার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সন্দেহ নেই, ফাঁসিতে ঝোলা দুই যুদ্ধাপরাধী ছিলেন আপাদমস্তক পাকিস্তানি। যে মাটিতে জন্ম, সে দেশের বদলে তারা হাজার মাইল দূরের পাকিস্তানকে আপন বলে ভাবতেন। স্বভাবতই পাকিস্তানিদের কেউ কেউ  তাদের আপনজনদের ফাঁসিতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হতেই পারে এবং সেটি অপ্রত্যাশিতও নয়। তবে তারা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে যেভাবে প্রশ্ন তুলেছে এবং ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অজুহাত তুলে একাত্তরের বিষয়াদি ভুলে সামনের দিকে তাকানোর যে উপদেশ দিয়েছে তা শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, ধৃষ্টতার শামিল। বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার হচ্ছে তা দুনিয়ার ইতিহাসে দৃষ্টান্তস্থানীয় হিসেবে বিবেচিত হবে। সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলেছে পাঁচ বছর ধরে। আসামিপক্ষ নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের যে সুযোগ পেয়েছেন তা দুনিয়ার আর কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজে দেওয়া হয়নি। বিএনপি ও জামায়াতের ওই দুই নেতাকে পাকিস্তানি হিসেবে নয়, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সাজা পেতে হয়েছে। ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির দোহাই দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ ভুলে যাওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান, তা প্রকারান্তরে তামাশার নামান্তর। সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে একাত্তরের ক্ষত এড়িয়ে যেতেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সে সময়ে যারা স্বজন হারিয়েছেন, নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার একটি অলঙ্ঘনীয় বিষয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মাধ্যমে সে অধিকারকেই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করব পাকিস্তান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে নিজের চরকায় তেল দেবে। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে দায়িত্বহীন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। হঠকারিতা নয়, একাত্তরের ঘটনাবলি সম্পর্কে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিজেদের সভ্যসমাজের অংশ হিসেবে ভাবার বিজ্ঞতা দেখাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর