বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কাজী জাফর : রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

মোস্তফা জামাল হায়দার

কাজী জাফর : রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

Some people are born great, some achieve it, and some people have greatness thrust upon them.@ William Shakespeare

বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতিতে বহুল বিতর্কিত, অথচ বহুল গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত একটি নাম কাজী জাফর আহমদ। আর এই গুরুত্ব তথা নক্ষত্রসম ঔজ্জ্বল্য তিনি অর্জন করেছিলেন জন্মসূত্রে নয় বা সৌভাগ্যের বরপুত্র হিসেবে নয়, কিংবা অদৃষ্টের চাপিয়ে দেওয়া সুযোগ আর ঘটনা প্রবাহের কাকতালীয় কারণেও নয়।  কাজী জাফর আহমদের যা কিছু অর্জন, যা কিছু সাফল্য তা তিনি ছিনিয়ে এনেছিলেন অক্লান্ত পরিশ্রম, দৃঢ়চিত্ততা ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। সারাটি জীবন তিনি সব প্রতিকূলতা ও পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে অসীম সাহসে বুক বেঁধে লড়াই করেছেন অকুতোভয়ে। কখনো সাফল্য পেয়েছেন, কখনো পাননি। কখনো নন্দিত হয়েছেন, কখনো নিন্দিত হয়েছেন। কিন্তু চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তিনি জনগণের হৃদয়ের মণিকোঠায় তার স্থায়ী আসন নিশ্চিত করে নিয়েছেন। কারণ কখনোই তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। জনগণের সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, আশা-আকাক্সক্ষা, হাসি-কান্না বিস্মৃত হননি। জনগণও তার কাছ থেকে কোনো দিন দূরে সরে যায়নি।

কাজী জাফর আহমদ তার ৭৬ বছর ১ মাস ২৬ দিনের মোটামুটি দীর্ঘ জীবনে অন্তত ৫০টি বছর এদেশের রাজনীতিতে দৃপ্ত পদচারণ করে অসংখ্য রাজনৈতিক ঘটনাবলির প্রত্যক্ষ নায়ক অথবা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। কাজী জাফরের রাজনৈতিক জীবন শুরু ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে। দেশের ছাত্ররাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে তার অগ্রণী ভূমিকা সবারই জানা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেন কাজী জাফর ও তার সহযোগীরা। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি বা ইউপিপি। ইউপিপি মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সারা দেশে তার সাংগঠনিক কাঠামো সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। তারপরে এলো একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার সেই অশুভ ঘোষণা। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে গণতন্ত্রের শব ব্যবচ্ছেদ করে পার্লামেন্টে পাস হয়ে গেল একদলীয় শাসন ব্যবস্থা। তারপর গঠিত হয় বাকশাল।

ইউপিপিসহ সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়ে গেল। বাকশালে যোগদানের প্রশ্নে কাজী জাফর ও তার সাথীদের মধ্যে তীব্র মতদ্বন্দ্ব দেখা দিল এবং একপর্যায়ে ছদ্মবেশে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। আন্তর্জাতিক বন্ধু খোঁজার প্রয়াসে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গমন করেন। কিছুটা সফলতাও লাভ করেন। কিন্তু সেই মুহূর্তেই বাংলার বুকে সংঘটিত হলো শতাব্দী কালের সবচেয়ে শোচনীয় ট্র্যাজেডি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হলেন কতিপয় বিপথগামী সামরিক অফিসারের হাতে। এত বড় নির্মম হত্যাকাণ্ড, এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা বাংলার ইতিহাসে আর কখনো সংঘটিত হয়নি।

অচিরেই কাজী জাফর দেশে ফিরে এলেন। ফিরে এসেই তিনি টঙ্গীতে গেলেন। সেখানে তাকে গ্রেফতার করা হলো। খন্দকার মোশতাক তখন রাষ্ট্রপতি। এমনিতেই দেশব্যাপী একটি থমথমে অবস্থা বিরাজমান। শাসকগোষ্ঠী কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হোক, তা চাইছিল না। রাশেদ খান মেননসহ আমরা সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কাজী জাফরকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর অবিশ্বাস্য নাটকীয়তার সঙ্গে অতি দ্রুত ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হতে থাকে। সেসব ঘটনার বিশদ বর্ণনা তুলে ধরা এখানে সম্ভব নয়। লক্ষ্যও নয়।

জেনারেল জিয়াউর রহমানের সমর্থনে কাজী জাফরের সেদিন এগিয়ে আসা ও পরবর্তীকালে মন্ত্রিসভায় যোগদানের বিষয়টি এখানে মুখ্য আলোচ্য বিষয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সেদিনের মেজর জিয়ার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা কারও অবিদিত নয়। তার শ্যালক সাঈদ এস্কান্দার ছিল আমাদের দিনাজপুর জেলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও আমাদের গোপন পার্টির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডার। সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের পক্ষ থেকে তার দুলাভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করাটা ছিল তার দলীয় assignment. 

খন্দকার মোশতাক ও তার ট্যাঙ্কবাহিনীর বঙ্গভবনভিত্তিক মেজরদের বিরুদ্ধে যখন জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি অংশ ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ক্ষমতা দখল করে, জেনারেল জিয়াকে তখন তারা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে বন্দী করে ফেলে। কিন্তু অচিরেই সিপাহি-জনতার আরেক অভ্যুত্থানে জিয়া মুক্ত হন এবং তিনি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ কমান্ড হাতে নেন। কিন্তু পূর্ণ কমান্ড ও কন্ট্রোল সেই মুহূর্তেই প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন কি? পারেননি। চারদিকে তখন চরম অরাজকতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে অফিসার নিধনের তথাকথিত শ্রেণি সংগ্রামে সাধারণ সৈনিকরা বিভ্রান্ত ও বিপথগামী। চেইন অব কমান্ড একেবারে ভেঙে গেছে।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জেনারেল জিয়া সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভের আশায় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভা ডাকলেন। টঙ্গীর হাজার হাজার শ্রমিক কাজী জাফরের নির্দেশে সেই জনসভায় যোগদান করে জনসভাকে সফল করেন। ধীরে ধীরে সারা দেশের স্বতঃস্ফ‚র্ত জনসমর্থন জিয়ার দিকে বৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে জেনারেল জিয়া যখন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করেন তখন ইউপিপি সেই ফ্রন্টে যোগদান করা না করার প্রশ্নে চরম মতানৈক্যের সংকটে নিপতিত হয়। তিন দিন ধরে ইউপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভা চলতে থাকে এবং এরই একপর্যায়ে সভাপতি ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফর আহমদ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে ইউপিপির যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ভেঙে গেল ইউপিপি। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগদান করে ইউপিপি ভেঙে ফেলা সেদিন কতটুকু সঠিক হয়েছিল, সেটা বিচার্য বিষয়। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে যখন জিয়াউর রহমান ফ্রন্ট ভেঙে দিয়ে বিএনপি গঠন করলেন তখন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে গিয়ে জিয়াবিরোধী ক্রুসেডে আত্মনিয়োগ করাটা কতটা সঠিক হয়েছিল- সেটা আরও বড় বিচার্য বিষয়। রাজনীতিতে দ্বৈতভাবনার জন্য অনেক সময়েই ভয়ানক মাশুল গুনতে হয়। এ কথা যখন বলা হয় কাজী জাফর সামরিক শাসকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন, তখন একই সঙ্গে এই বিবেচনা করা দরকার যে জিয়াউর রহমান আর পাঁচটা সামরিক অভ্যুত্থান বা মিলিটারি ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেননি। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সাধারণ সৈনিকরা তাকে মুক্ত করে এনে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। বরং তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেন। অতীতকে ফিরিয়ে এনে আমাদের আকাক্সক্ষার আদলে ইতিহাসকে সাজানো যাবে না। তবে এ কথা সত্যি, সেদিন কাজী জাফর ও তার সঙ্গীরা জিয়াউর রহমানের পাশে দাঁড়িয়ে দেশ ও জাতিকে একটি নতুন কোনো   sense of direction হয়তো দিতে পারতেন। এ কথা কে না জানে, off-shore drilling মাধ্যমে তেল-গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া থেকে শুরু করে তার জাতীয়তাবাদী চেতনা ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি দিন দিন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছিলেন। তার ব্যর্থতা- তিনি এদেশের সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কাছে টেনে আনতে পারেননি। আর এদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহের ব্যর্থতা, তারা বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারেননি। এরপরের অধ্যায়গুলো আরও বিভ্রান্তিকর। আরও বেদনাদায়ক। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড, তার শূন্যতাজনিত কারণে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের অবসর গ্রহণ এবং সর্বশেষে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ ইত্যাদি ঘটনাবলির সবটুকুই যেন একটি সাজানো নাটক। একটি অত্যন্ত ক্ষমতাশালী remote control যোজন যোজন দূর থেকে যেন ঘটনাগুলো সংঘটিত করতে তৎপর ছিল। এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণের পরে যখন দেশব্যাপী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল, কাজী জাফর আহমদ সেই আন্দোলনে শরিক হন। তারই উদ্যোগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭-দলীয় ঐক্যজোট গড়ে ওঠে। জোয়ার ভাটার মতো আন্দোলন কখনো তীব্রতা লাভ করে, কখনো ঝিমিয়ে পড়ে। তবে কখনোই একবারে থেমে যায়নি। এরই বিভিন্ন পর্যায়ে জেনারেল এরশাদ শুরু করেন দল ভাঙার কৌশলী তৎপরতা। দক্ষ জাদুকরের মতো একজন একজন করে বিভিন্ন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করতে থাকেন তিনি। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিও ঘোষণা করেন।

৭-দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনে আমরা একসঙ্গে থাকব বলে আমাদের মনে ছিল তীব্র প্রত্যাশা। কী আন্দোলনে, কী নির্বাচনে ৭-দলীয় জোট একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যাবে- এমন একটি ঐক্যবদ্ধ ঘোষণার অপেক্ষায় সবাই যখন উন্মুখ, ৭-দলীয় জোটের সবচেয়ে বৃহৎ দলের পক্ষ থেকে বলা হলো : আন্দোলন এক জিনিস, আর নির্বাচন আরেক জিনিস। আমরা এখন আন্দোলনের কথা ভাবছি। নির্বাচনের কথা পরে ভাবব। স্পষ্টতই সেদিন অপর শরিক দলগুলো কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়ে।

এই সময়টা ছিল কাজী জাফরের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটকাল। ৪২/৪৩, পুরানা পল্টনে ইউপিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে বসে প্রায়ই দেখতাম অদূরে দাঁড়িয়ে আছে বিশেষ স্থান থেকে প্রেরিত একটি সাদা গাড়ি। পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে একে একে অনেকেই চলে যেতেন সেই গাড়িতে চড়ে। উত্তর গোলার্ধের দিকে তাদের অভিযাত্রা। ক্রমে ক্রমে কাজী জাফর সাথীহারা, সঙ্গীহারা হতে থাকেন। রনো-মেননের পরে মান্নান-নোমানকেও তিনি হারিয়েছেন জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে সরে আসার সময়। বিরোধী শিবিরেও কাজী জাফরের ৬০-এর দশক অথবা ৭০-এর দশকের সেই অগ্নিঝরা ইমেজ কিছুটা মলিন হচ্ছে। এ যেন না ঘরকা, না ঘাটকা একটা পরিস্থিতি।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ততদিনে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের যুগ শুরু হয়ে গেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। গ্লাস্তনস্ত, পেরেস্ত্রোইকার যুগ চলছে। সমাজতন্ত্র থেকে তারা অনেকে দূরে সরে গেছে। গণচীনে চার কুচক্রীর তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিপরীতে দেং শিয়াওপিং-এর নেতৃত্বে নতুন চিন্তাধারার যুগ সূচিত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত উৎপাদন ব্যবস্থা ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তাভাবনা আসতে লেগেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার অমোঘ আহ্বান অপেক্ষাকৃত কম উচ্চারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের দিশাহারা বিভ্রান্ত বামপন্থি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব এড়াতে পারেনি সেদিন। সেই মুহূর্তে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকটটাই বড় হয়ে দেখা দেয়।  Existential challenge রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকটে পড়েই কেবল কাজী জাফর আহমদ জেনারেল এরশাদের সঙ্গে যোগদান করেন- এ কথা বললে মনে হয় ষোলআনা সঠিক বলা হবে না। পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ও বিদ্যমান জাতীয় পরিস্থিতিতে তিনি হয়তো বিবেচনা করেছিলেন ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে থেকে জনগণের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত কিছু কাজ করার কথা এবং সেই লক্ষ্য সাধনে তিনি ব্রতী হয়েছিলেন।

এ সময়ে সরকারের ভূমি সংস্কার কার্যক্রম, ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ, ভিটেমাটিহীন নিঃসম্বল মানুষদের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য গুচ্ছগ্রাম সৃজন, পুরান এয়ারপোর্টের ময়দানে বিশাল কৃষক সমাবেশ থেকে কৃষি ঋণের সব সুদ মওকুফের ঘোষণা, জাল যার জলা তার নীতিমালা প্রণয়ন ও সরকারের অন্য সব গণসম্পৃক্ত সিদ্ধান্তে কাজী জাফরের উদ্যোগ ও সহযোগিতা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। ক্ষমতার উচ্চাসনে আরোহন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে বিত্তবৈভব ও বিলাস-ব্যসনে গা ভাসিয়ে দেওয়ার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত আমরা হরহামেশাই দেখতে পাই। কিন্তু কাজী জাফর আহমদ ছিলেন এর বিরল ব্যতিক্রম। জীবনের শেষ মুহূর্তে ঢাকায় একটি বাড়ির অর্ধাংশ ছাড়া কিছুই রেখে যাননি তিনি। তার শুভানুধ্যায়ীদের অনুদানে তার চিকিৎসা হয়। রাজনৈতিক প্রশ্নেও তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপস করেননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনে তিনি এরশাদের দোদুল্যমানতা ও অবশেষে আত্মসমর্পণ নীতির তীব্র বিরোধিতা করে তার সঙ্গে সব সম্পর্কছেদ করেন। এরপরও তাকে নিয়ে হয়তো বিতর্ক চলবেই। বিতর্ক তাদের নিয়েই হয়- যাদের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। যারা যুগস্রষ্টা।  যারা নক্ষত্রের উজ্জ্বল্য নিয়ে রাজনীতির ঊর্ধগগনে চিরদিন বিচরণ করেন। কাজী জাফর আহমদ তাদের একজন। কাজী জাফর অমর হোক।

                লেখক : রাজনীতিক।

E-mail: [email protected]

সর্বশেষ খবর