বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নকল ও মানহীন ওষুধ

অপরাধ দমনে কঠোর হতে হবে

বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্বের শতাধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দেশেও এ দেশীয় ওষুধ বাজার দখল করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এটি যেমন আশাজাগানিয়া তেমন হতাশার দিকও কম নয়। হতাশার দিকটি হলো দেশের বাজারেই নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ওষুধ বাণিজ্যের এ অরাজক পরিস্থিতির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধ কারখানাগুলোই মুখ্য ভূমিকা রাখছে। কঠোর মনিটরিং ও কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় ভেজালকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যেসব কোম্পানি নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির দায়ে অভিযুক্ত সেগুলো ঘুরেফিরে বারবার এ তৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীসহ সারা দেশে মাঝেমধ্যেই নকল ওষুধ কারখানায় অভিযান চালিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করা হয় মানহীন ওষুধ প্রস্তুতকারক অনেক কোম্পানির। কিন্তু কোনো কোনো কোম্পানি আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে আবার নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করছে। কেউ কেউ আবার নাম-ঠিকানা পাল্টে নতুন উদ্যমে নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনে নেমে পড়েছে। নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিপণনের ক্ষেত্রে রাজধানীর মিটফোর্ডকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং ফার্মেসিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের কোনো কোনো নেতার ভূমিকা ওপেন সিক্রেট। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ভেজাল ও নিম্নমানের ৩৫ ভাগ ওষুধ তৈরি হয় ভারতে। এর বার্ষিক বাজার মূল্য ৪ হাজার কোটি রুপি বা ৬ হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ ভাগ ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ তৈরি হয় নাইজেরিয়ায়। দেশটির মোট ওষুধের ৪১ ভাগই ভেজাল বা নিম্নমানের। পাকিস্তানে উৎপাদিত মোট ওষুধের ১৫ ভাগ ভেজাল বা নিম্নমানের, যার বাজার মূল্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের বার্ষিক বিক্রি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিক্রির প্রায় শতকরা ১০ ভাগ। মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ ব্যবহার করে। নকল ভেজাল ও মানহীন ওষুধ রোগ নিরাময়ের বদলে জীবন সংহারেই অবদান রাখে।  জনস্বার্থে নকল ভেজাল ও মানহীন ওষুধের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে কঠোর শাস্তির বিধান সংবলিত আইন প্রণয়নের কথা ভাবতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর