কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে যুক্ত করতে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল বা সুড়ঙ্গ পথ তৈরির প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সুড়ঙ্গ পথে সরাসরি যুক্ত হবে। চট্টগ্রাম মহানগরী আনোয়ারা উপজেলা এলাকায়ও বিস্তৃত হবে। একনেকের অনুমোদন অনুযায়ী ২০২০ সালের আগেই বাস্তবায়িত হবে এই ‘স্বপ্নের প্রকল্প’। এটি বাস্তবায়িত হলে চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি দু’টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প অনুমোদনের মধ্য দিয়ে দেশের আধুনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হয়েছে। টানেল নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রাম একটি অন্যতম আধুনিক নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর নিচে তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ নির্মাণ করে একদিকে চট্টগ্রাম শহরের বন্দর এলাকা ও অন্যদিকে আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প নানা কারণে তাৎপর্যের দাবিদার। এ প্রকল্পটি সফল হলে দেশের অন্যান্য নদীতেও সুড়ঙ্গ পথ বা টানেল নির্মাণের দ্বার খুলে যাবে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রেখেই নির্মিত হবে সুড়ঙ্গ পথ। সেতু নির্মাণ যোগাযোগ ক্ষেত্রে একই উদ্দেশ্য পূরণ করলেও তাতে নদীর স্বাভাবিক গতি কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতু পথের চেয়ে সুড়ঙ্গ পথের নিরাপত্তা এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব বেশি বলেও ধারণা করা হয়। আমরা আশা করব, প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নেবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এবং সে সূত্রে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বড় প্রকল্পের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলের ক্ষেত্রে তার পুনরাবৃত্তি হবে না আমরা এমনটিই দেখতে চাই।