শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামের শান্তির আহ্বান ও নাগরিক দায়িত্ব

মুফতি মাও: মহিবুল্লাহ হীল বাকী আন নদভী পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

ইসলাম চিরশান্তি, কল্যাণ ও মানবতার ধর্ম। একজন মানুষের ইহকালে সুন্দর, নিরাপদ জীবনযাপন আর শান্তির পরিবেশ গড়তে যা কিছু প্রয়োজন এবং পরকালের মুক্তি ও কল্যাণ সাধনে যা যা করণীয় সবকিছুর পরিপূর্ণ ও সুস্পষ্ট আহ্বান ইসলামই মানব জাতির কাছে তুলে ধরেছে। ইসলামের মূলমন্ত্র আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-

‘নারী অথবা পুরুষ যেই ইমানদার হয়ে ভালো কাজ করবে অবশ্যই আমি তাকে একটি পবিত্র জীবনযাপনের সুযোগ করে দেব এবং অবশ্যই পরকালে তাকে তার কর্মকাণ্ডের চেয়েও আরও উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করব।’ বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-

‘প্রকৃত মুসলমান সে, যার হাত এবং জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে।’

প্রিয় নবীর এ ঘোষণায় এ বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি মুসলমানের দাবিদার অথচ তার হাত থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়, অর্থাৎ তার হাতের কলম, লাঠিসোঁটা, অস্ত্র, বোমা, গ্রেনেড ও অন্যান্য মুসলিম তথা অমুসলিমের ওপর আঘাত হানছে, শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে অথবা তার মুখের কথায় অন্যকে কষ্ট দিচ্ছে, হেয়প্রতিপন্ন করছে, মানমর‌্যাদা ক্ষুণ্ন করছে, মিথ্যাচার, পাপাচার, পরনিন্দা, পরচর্চার মতো অশ্লীল বাক্যাবলী উচ্চারিত হচ্ছে সে ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান নয়। কেননা এগুলো অশান্তির জম্ম দেয়, প্রচার ঘটায়।

ইমানদার তথা প্রকৃত মুসলমানের বৈশিষ্ট্য এটাই হওয়া দরকার যা আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘আর প্রকৃত মুমিন যখন নির্বোধদের মুখোমুখি হন, ওদের বলেন, তোমাদের শান্তি হোক।’ মহানবী (সা.) শিশু-কিশোর থেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠ, বয়ঃবৃদ্ধ সবাইকে যে শিষ্টাচারপূর্ণ তালিম দিয়েছেন তাতেও শান্তির আহ্বান, শান্তি প্রচারের কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, সালামের চর্চা কর। আরও বলেছেন, ‘পরিচিত, অপরিচিত সবাইকে সালাম দাও।’ মহানবী (সা.) খেলায়রত বালকদেরও বলতেন, ‘তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।’

তৎকালীন আরবের মরুপ্রান্তরে বর্বর যুগের অশান্ত মানব গোষ্ঠীর মাঝে সারা বিশ্বে শান্তি কায়েমের লক্ষ্যে ইসলামের ধারক ও বাহক, শান্তির দূত বিশ্বনবী ও শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব ঘটে। রাহমাতুল্লাহিল আলামিন এবং তাঁর সাহাবারা (রা.) সেই বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলেন যা বিশ্ব গুণীজন কর্তৃক স্বীকৃত।

আজকের এই অশান্ত পৃথিবীতে বাংলাদেশে বিদেশি হত্যা, পুলিশ হত্যা, শিশু রাজন-রাকিব হত্যা এবং প্যারিসের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আবার সেই জাহেলিয়া যুগকেই স্মরণ করায়।

এই বর্বরতাকে প্রতিহত ও নির্মূল করতে হলে সব দেশের সব নাগরিককে সচেতন ও নিষ্ঠাবান হতে হবে।  বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলিম নাগরিককে ইসলামের শান্তির আহ্বানকে আরও দায়িত্বশীল ও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই এ অশান্তির দাবানল নির্বাপিত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর