শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ইতিহাস

হোদায়বিয়ার সন্ধি

শাকিল জাহান

হোদায়বিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলামের পরবর্তী যাবতীয় সাফল্যের মূলে ছিল এ হোদায়বিয়ার সন্ধি। এটা ইসলামের পক্ষে এক মহাবিজয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একে পরাজয়মূলক একটি সন্ধি চুক্তি বলে মনে হলেও আল্লাহতায়ালা এ সন্ধিকে ইসলামের ‘নিশ্চিত বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন। আল্লাহপাক কোরআনে বলেন : ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাকে প্রকাশ্য বিজয় দান করলাম।’ হজরত ওমর (রা.) এ সন্ধির কতিপয় শর্তের ঘোরবিরোধী ছিলেন; কিন্তু অহি নাজিল হওয়ার পর হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাকে ডেকে এটা পড়ে শুনালেন। হজরত ওমর (রা.) এটা শুনে খুব খুশি হলেন এবং তার নৈরাশ্যের ভাব কেটে গেল।  এতদিন পর্যন্ত মুসলমান ও অমুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক মেলামেশা ছিল না। এ সন্ধির ফলে মুসলমানরা অমুসলমানদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা এবং নিজ ধর্ম প্রচারের সুযোগ লাভ করল। অমুসলমানরা মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে তাদের আন্তরিকতা, সদাচার, সদ্ব্যবহার ও সচ্চরিত্রে যেমন মুগ্ধ হলো, তেমনি ইসলামের মহত্ত¡ও উপলব্ধি করতে লাগল। ফলে অমুসলমানদের অন্তঃকরণ আপনা-আপনি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিকদের মতে, হোদায়বিয়ার সন্ধির পর থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত যত লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তত আর কখনো হয়নি। এ সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদের জীবনী লেখক যহুরী বলেন, ‘পৌত্তলিকদের মধ্যে এমন কোনো বিবেচক লোক ছিল না যে,  ইসলামের ছায়াতলে আসতে প্রলুব্ধ হয়নি। খালিদ বিন-ওয়ালিদ ও আমর বিন আসের মতো শ্রেষ্ঠ বীরদ্বয় এ সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।’ ঐতিহাসিক ইবনে হিশাম বলেন, ‘মুহম্মদ (সা.) যেখানে ১৪০০ লোক নিয়ে হোদায়বিয়াতে গিয়েছিলেন, সেখানে দুই বছর পর ১০ হাজার লোক নিয়ে মক্কা অভিযান করলেন।’ এ সন্ধি দ্বারা ইসলামের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় মর‌্যাদা বৃদ্ধি পায়।

কুরাইশরা এতদিন পর হজরত মুহাম্মদের (সা.) রাজনৈতিক সত্তা ও তার দলের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে সমগ্র আরবের একজন নেতা এবং উদীয়মান শক্তি ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা- এ ধারণা তাদের প্রথম জম্মাল। এ চুক্তি সম্পাদনের ফলে মক্কার পবিত্র কাবাগৃহের ওপর কুরাইশদের একচেটিয়া আধিপত্য নষ্ট হয় এবং এর সার্বজনীন গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর