মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সরকারের মুনাফাখোরি মনোভাব

বেশি দামে ডিজেল কিনে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনতে গিয়ে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠলেও সরকার নির্বিকার। বিশ্ববাজারে তেলের দাম এক-তৃতীয়াংশ কমে এলেও দেশে তার কোনো প্রভাব পড়েনি সরকারের মুনাফাখোরি ব্যবসায়ীসুলভ মনোভাবের কারণে। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। কৃষকের সেচযন্ত্র চালাতে ব্যবহৃত হয় ডিজেল। দেশের অন্তত ১৩ হাজার পাম্প চলে এ জ্বালানির মাধ্যমে। ন্যায্য দামের চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ বেশি দামে ডিজেল কেনায় তাদের পকেট থেকে শত শত কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। কৃষিপণ্যের বিশেষত ধান-চালের ন্যায্যমূল্য না থাকায় এমনিতেই কৃষক ভালো নেই। বাংলাদেশের কৃষকের চেয়ে অন্য দেশের কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে চাল আমদানি হচ্ছে। ডিজেলের দাম হ্রাস পেলে প্রতি মণ ধান উৎপাদনের খরচ ৫০-৬০ টাকা হ্রাস পাবে। এর ফলে বিদেশি কৃষিপণ্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের কৃষকের সামর্থ্য বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে কৃষি উৎপাদন। স্মর্তব্য, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলের চাহিদা ৫৪ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৫৫৪ টন। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এরপর প্রায় দুই বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এলেও দেশে এর দাম কমানো হয়নি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এখন ডিজেল বিক্রি করে প্রতি লিটারে লাভ করছে ২০ টাকা। গত অর্থবছরে জ্বালানি তেল বাবদ বিপিসি ৪ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করেছে। আর চলতি অর্থবছরে ইতিমধ্যেই বিপিসির মুনাফা ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দেশের মোট সেচ পাম্পের ৮০ শতাংশের ওপরে ডিজেলচালিত। ডিজেলের দাম কমানো হলে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ কৃষক লাভবান হবেন। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে ডিজেলের দাম কমলে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে যাবে। আমরা আশা করব কৃষককে উৎসাহ দিতে হয় ডিজেলের দাম কমানো হবে নতুবা এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর