হেমন্তের শেষ ভাগে শীত যত বাড়ছে দেশের হাওরগুলোতে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে অতিথি পাখির আনাগোনা। দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিসহ, কাউওয়া দীঘি ও বাইক্কার বিলে এবার অতিথি পাখির সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে ঝাঁক ঝাঁক অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠছে হাওর-তীরবর্তী এলাকা। ছোট-বড় ২৩৮ বিলের সমন্বয়ে গঠিত হাকালুকি হাওরে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস থেকেই অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। এ বছর শীত আসতে কিছুটা দেরি হওয়ায় অতিথি পাখিও আসছে দেরিতে। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য হাওর ও বিলেও ইতিমধ্যে অতিথি পাখির আনাগোনা শুরু হয়েছে। পাখির কলতানে মোহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকও মুখরিত হয়ে উঠেছে অতিথি পাখির কলতানে। শীত মৌসুমে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে বিশেষত রাশিয়ার সাইবেরিয়া ও সংলগ্ন এলাকা থেকে অতিথি পাখি আসে আমাদের দেশে। সাইবেরিয়াসহ সংলগ্ন এলাকার আবহাওয়ায় এ সময়ে শুরু হয় তুষার ঝড়ের দাপট। হিমশীতল সে অসহিষ্ণু পরিবেশ থেকে রক্ষা পেতে অতিথি পাখিরা ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের বিলঝিল-হাওরে। যাদের একটা অংশ প্রতিবছর অতিথি হয়ে আসে বাংলাদেশে এবং শীত মৌসুম শেষে স্বদেশে ফিরে যায়। প্রতিবছর বাংলাদেশের হাকালুকি হাওরেই গড়ে ৫০ থেকে ৬০ প্রজাতির লক্ষাধিক পাখির আগমন ঘটে। সারা দেশে অতিথি পাখির আগমন ঘটে কয়েক লাখ। অতিথি পাখি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করছে। পরিবেশ সংরক্ষণেও তাদের অবদান অনন্য। দেশে বিলঝিল-নদনদীসহ জলাশয়ের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় অতিথি পাখির আগমনও কমে যাচ্ছে। দেশীয় পাখির জন্যও টিকে থাকা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অতিথি পাখি শিকার আইনত দণ্ডনীয় হলেও একশ্রেণির লোভী মানুষ সে অপরাধে প্রতিদিনই নিজেদের যুক্ত করছে। বায়ু দূষণ ও পরিবেশ দূষণের কারণেও তাদের আগমন হ্রাস পাচ্ছে। এ বিষয়ে সতর্ক না হলে অতিথি পাখির নিরাপত্তায় জনসচেতনতা গড়ে না উঠলে তা দেশের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য বিসংবাদ হয়ে দাঁড়াবে। যা কাম্য হওয়া উচিত নয়।