শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

সৃষ্টির সেবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম উপায়

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম

পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

সৃষ্টির সেবা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্তুত ইল্ম ও বক্তৃতার দ্বারা মানুষের মস্তিষ্ককে বশীভূত করা যায় কিন্তু মানুষের অন্তরকে তেমন প্রভাবিত করা যায় না। মানুষের অন্তর প্রভাবিত হয় সেবা ও খিদমতের দ্বারা। এই সেবা বা খিদমত দুভাবে করা যায়— ১. আত্মিক ২. বৈষয়িক। বৈষয়িক সেবার তুলনায় আত্মিক সেবার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে কোরআন ও হাদিসে  আত্মিক সেবার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) খায়বার যুদ্ধের প্রাক্কালে হজরত আলী (রা.)-কে উদ্দেশ করে বলেছিলেন— ‘আল্লাহর কসম। তোমার দাওয়াতে আল্লাহ যদি মাত্র একজন মানুষকেও হিদায়াত দান করেন তবে তা তোমার জন্য লালবর্ণের (মূল্যবান) উটের মালিক হওয়া অপেক্ষাও অনেক উত্তম।’

বৈষয়িক খিদমতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে কোরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে : ‘আল্লাহর মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত মুসাফির সাহায্যপ্রার্থীগণকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থদান করলে, সালাত কায়েম করলে ও জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থসংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে— এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকী।’ (সূরা বাকারা, ২:১৭৭)।

মানব সেবার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘কওমের নেতা সফরের অবস্থায় তাদের খাদেম থাকবে। যে ব্যক্তি খিদমতের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অগ্রগামী হবে, কেউ তাকে আমলের মাধ্যমে পেছনে ফেলতে পারবে না। অবশ্য শহীদ ব্যক্তি পারবে।’

জনসেবা এবং খিদমতের মূর্তপ্রতীক ছিলেন রসুলুল্লাহ (সা.)। সেবার এ গুণটি তার মধ্যে নুবুওয়াতপ্রাপ্তির আগেও বিদ্যমান ছিল। প্রথম ওহিপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন এবং ঘটনা হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর কাছে বর্ণনা করলেন। তখন তিনি নিম্নোক্ত বাণী দ্বারা নবী করিম (সা.)-কে সান্ত্বনা দিলেন।

‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়ের প্রতি সদাচরণ করেন, অসহায় ব্যক্তির বোঝা বহন করেন, নিঃস্ব ব্যক্তির অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেন। মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহায়তা দান করেন।

মূল কথা হলো, ইসলাম মানুষের সেবা ও খিদমতের জন্য, সমাজের উপকারের জন্য নিজের যথাসর্বস্ব বিলিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে। যাতে সমাজ থেকে অশান্তি ও অবজ্ঞা দূর হয়ে নেমে আসে সমাজ জীবনে শান্তির ফল্গুধারা। ইসলাম শুধু মানুষের সেবার প্রতিই উদ্বুদ্ধ করে না, বরং আল্লাহর সব সৃষ্টির প্রতি সেবাদানের ব্যাপারেও অনুপ্রাণিত করে।

সর্বশেষ খবর