শিরোনাম
রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আমাদের ধূলিতে কোনো রক্তের দাগ নয়

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ

আমাদের ধূলিতে কোনো রক্তের দাগ নয়

ক. বইপুস্তকে প্যারিস নামটি পড়ার আগেই বিশ্বনন্দিত কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে সেই শৈশবেই প্রথম শুনি রূপময় প্যারিসের নাম। ভূপেন হাজারিকার সেই কালজয়ী গান ‘আমি এক যাযাবর’-এর শুরুতে ‘আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে/ভলগার রূপ দেখেছি/অটোয়ার থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে প্যারিসের ধুলো মেখেছি।’ শুধু আমি নই, লাখোজনের মনের হৃদয়ে প্যারিস তখন থেকেই জায়গা করে নেয় বললে ভুল হবে না। প্যারিসের কত কীর্তি, কত গল্প। ফরাসি সৌরভ- সে তো তুলনাহীন। আবার মোনালিসার রহস্যময় হাসি, এরও জম্ম ফ্রান্সে।  যারা শিল্প-সাহিত্য চর্চা করেন তাদের কাছে এই প্যারিসের আবেদন বরাবরই ভিন্ন। গল্পে-কথায় প্যারিসের কত উদাহরণ। প্যারিস এক স্বপ্নের শহরই বটে। পর্যটন তীর্থ বলে অতিপরিচিত বিশ্বব্যাপী। আইফেল টাওয়ার, ডিজনিল্যান্ড- কত কী এই শহরে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেখানে উপচে পড়ে। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটকের আনাগোনায় কর্মমুখর হয়ে ওঠে প্যারিস নগরী।

সেই সৌরভ ছড়ানো অতুলনীয় বিস্ময়কর প্যারিস সৌন্দর্যের বদলে এখন আতঙ্কের এক সাক্ষী। প্যারিসের সব সৌন্দর্যই যেন ঢাকা পড়ে গেছে। ১৩ নভেম্বর কালাশনিকভের বুলেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মানুষের এই শহর। ঘাতকদের অকস্মাৎ এক আক্রমণে ১২৮ জন নিহত হয়। আহত হয় কয়েকশ মানুষ। রক্তাক্ত হয় প্যারিস নগরী। আতঙ্ক আর আর্তচিৎকারে প্যারিস যেন কেঁপে ওঠে। কিছুই নয়, নিজেদের চিরায়ত নিয়মেই মানুষগুলো জমা হয়েছিল ক্লাব, বার আর রেস্টুরেন্টে। হামলাকারীরা ওখানেই টার্গেট করে। একযোগে মোট ছয়টি স্থানে হামলা চালায়। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে দ্রুতই এ খবর পৌঁছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। প্যারিসে দ্রুতই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। স্কুল-কলেজ বন্ধের কথাও বলা হয়। এ হামলার ঘটনা বিশ্ববাসীকে খানিকটা বিস্মিতই করে। স্বভাবতই আলোচনার ঢেউ ওঠে সর্বত্র। তবে সবার আগেই আইএস (ইসলামিক স্টেট) এই হত্যার দায় শিকার করে বিবৃতি পাঠায়। প্যারিসে এই হত্যা কেন- এমন জবাব খুঁজছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞরা। একেকজন একক রকম মন্তব্য করছেন। কারও মতে, সিরিয়া নিয়ে যে বর্তমান সংকট সেটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই ইসলামী জঙ্গিরা প্যারিসে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে উইকিলিকস বলছে ভিন্ন কথা। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করে আলোচিত ওয়েবসাইট ‘উইকিলিকস’ প্যারিস হামলার জন্য আমেরিকা ও তার মিত্রদের অভিযুক্ত করেছে বলে আমাদের দেশের একটি টিভি চ্যানেলের অনলাইনে বলা হয়েছে। অনলাইনে আরও বলা হয়, হামলার পর এক টুইট বার্তায় উইকিলিকস বলে, বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও লিবিয়ায় চরমপন্থিদের অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফল এটি। পরের দিন আরেক টুইট বার্তায় ওয়েবসাইটটি বলে, প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইরাক ও সিরিয়ায়ও ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এই দুই মৃত্যুর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যে উগ্রপন্থিদের প্রতিপালন করেছে তার সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। এদিকে প্যারিসে যা ঘটেছে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্যারিসের ভয়াবহ রক্তাক্ত ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেরই প্রোফাইল পিকচারে ফ্রান্সের পতাকা দেখা যায়। এ নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই মন্তব্য করেন, গাজাতে যখন শত শত নিরীহ শিশুকে হত্যা করা হলো তখন কেন এরকম প্রতিবাদ হলো না। সব মৃত্যুরই তো প্রতিবাদ হওয়া উচিত। দেশের প্রতিভাবান এক তরুণ পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে যেমনটি বলেছেন, ‘পৃথিবীর সব খুন যদি আপনাকে পীড়া না দেয়, এরচেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই।’ খ. আসলে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে পুরো বিশ্বেই এখন এক জটিল অবস্থা চলমান। মুসলিম বিশ্বের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তবে এই মুহূর্তে সিরিয়া সংকট সব কিছুকে উম্মাতাল করে ফেলেছে। এর মাঝে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থান বিশ্বরাজনীতিটাকেই পাল্টে ফেলেছে। আইএস নিয়ে বিতর্ক চলছে আমাদের দেশেও। আইএস আছে কী নেই এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা চালাচালি হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বিষয়টি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেশে পরপর দুই বিদেশি নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘এদেশে আইএসের মতো কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। এ ধরনের অপপ্রচার সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য অন্য কিছু নয়।’ গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টও একই কথা বলে যে, তাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্যই নেই। আইএস আছে কী নেই সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটি ঠিক, অনেক ঘটনাপ্রবাহ আমাদের যে জটিল এক পরিস্থিতির মুখোমুখি করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সম্প্রতি ফের দিনাজপুরে আরেক বিদেশি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা আমাদের জন্য আরও বিপদাপন্ন এক সময়কেই যেন আহ্বান করছে। যা হচ্ছে যা ঘটছে সেটি যে টার্গেট করেই করা হচ্ছে তা অনুমিত। নইলে একজন নিরীহ পাদরি সাইকেলে চড়ে যাওয়ার পথে কেন দুর্বৃত্তদের লক্ষ্যে পরিণত হবে। এর আগে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে দুই বিদেশিকে হত্যা করা হয়। বিদেশিদের প্রতি এই হামলা জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্যতাই প্রকাশ করছে। এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সবারই উচিত এ ধরনের ঘৃণ্য হামলার বিরুদ্ধে সজাগ থাকা। আমরা একটা বিষয় খেয়াল করছি, যে বিদেশিদের টার্গেট করে হামলা করা হচ্ছে তারা মূলত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গেই জড়িত। তাদের জীবনযাপনও খুবই সাধারণ। কিন্তু কেন যে তারা হামলার শিকার হচ্ছে সেটা আসলেই রহস্যাবৃত। তবে যে বা যারাই এ হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক তারা এক অর্থে আমাদের দেশের জন্য মহা এক সর্বনাশ ডেকে নিয়ে আসছে। গ. দেশে এখন যে অবস্থা চলমান তাতে রাজনীতিতে আমরা এক ঘনকালো আঁধার দেখছি। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছে না, আবার কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলেও কথা বলার জন্য পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে না। আগে রাজনীতিতে ঘোর অন্ধকার সময় দেখা গেলেও বিবদমান দলগুলোর মাঝে রাজনৈতিক সংলাপ ডাকা হয়েছে। দলের উচ্চপর‌্যায়ের নেতানেত্রীরা একসঙ্গে বসতেন। মন-প্রাণ খুলে কথা বলতেন। রাজনীতির সংকট উত্তরণে আলাপ-আলোচনা চলমান থাকত। কিন্তু এখন ঠিক উল্টা অবস্থা। মনে হচ্ছে রাজনীতির মাঠে দুই পক্ষই একেবারে অচেনা। মুখ দেখাদেখিও বন্ধ প্রায়। ঠিক এরকম অবস্থায় বিএনপি থেকে যে সংলাপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা ক্ষমতাসীনরা কার্যত নাকচ করে দিচ্ছে। ফলে মানুষের মনে এক ধরনের সংশয়, ভয়-ভীতি থেকেই যাচ্ছে। আমরা একটা বিষয় খেয়াল করছি, বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ইতিবাচক বক্তব্য দেওয়া হলেই দ্রুত সেটিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা এবং এক ধরনের রাজনৈতিক তোলপাড় তৈরি করার প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। সম্প্রতি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখনই জাতীয় সংলাপের প্রস্তাবের কথা বললেন, তখনই সেটা নিয়ে সরকার ও তার মন্ত্রী-এমপিরা নানারকম নেতিবাচক মন্তব্য করছে। রাজনীতিতে সংলাপ সব সময়ই জরুরি। চরম শত্রুতার সময়েও পাকিস্তান আমলে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার সঙ্গেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও সংলাপ হয়েছে। জিয়া এরশাদের আমলেও বহুবার সংলাপ হওয়ার নজির রয়েছে। এর আগেও একাধিকার সংলাপের প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া সর্বশেষ আহ্বানে বলেছেন, সরকার কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে ফিরে আসবে এবং একটি জাতীয় সংলাপ সূচনার পরিবেশকে উম্মুক্ত করবে। খালেদা জিয়ার এ বিবৃতি প্রদানের পরপরই আমরা দেখলাম ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের সহযোগী সবাই এটি নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলা শুরু করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বললেন, খালেদা জিয়া সংলাপ ভিক্ষা চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিক্রিয়ায় বললেন, কীসের সংলাপ? এখানে উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পরপরই বেগম খালেদা জিয়া প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলেন, সরকার অবৈধ হলেও তিনি সংলাপ চান। এরপর থেকে তিনি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে একাধিকবার সংলাপের প্রস্তাব দেন। কিন্তু যতবারই তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন ততবারই সেটা ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক নাকচ হয়েছে। ঘ. বর্তমান যে অবস্থা চলমান তাতে করে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সন্তুষ্টি আছে কিনা এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। বিশেষ করে যারা নিতান্তই সাধারণ জনগণ বলে পরিচিত, যারা কোনো দলীয় বৃত্তে বন্দী নয়, তারা একেবারেই সন্তুষ্ট নয়। এর প্রধানতম কারণ হলো- অনিশ্চিত নাগরিক নিরাপত্তা। ধরপাকড় এবং গণগ্রেফতারের নামে সাধারণ মানুষ খুবই নিরাপত্তাহীন জীবনযাপন করছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা হয়তো বলতে পারেন যারা সন্দেহভাজন তাদেরই গোয়েন্দা বা আইনের লোকজন গ্রেফতার করছে। কিন্তু না, সে সীমারেখা বহু আগেই লঙ্ঘিত হয়েছে বলে বিএনপি বারবার বলে আসছে। একেবারেই কোনো দলের সঙ্গে কোনোকালেই যোগাযোগ ছিল না এরকম অনেকই কিন্তু গ্রেফতার, হয়রানির শিকার হয়েছে। যারা দল করেন, দলীয় সমর্থক তাদের কথা বাদই দিলাম। কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্য, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে। পবিত্র সংবিধানেও এ কথা স্পষ্ট বলা আছে। আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ প্রায়শই সংবিধানের মর‌্যাদা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু সেই মর‌্যাদা কারা লঙ্ঘন করছে সেটাও দেখার বিষয়। মৌলবাদের উত্থান নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। রাষ্ট্র কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর অপরাধমূলক কার্যক্রম সমর্থন করবে সেটা হতে পারে না। যে বা যারাই জঙ্গিপনায় লিপ্ত থাকুক না কেন সেটা দেখার এখতিয়ার রাষ্ট্রের আছে। তবে এটাও সত্য, একটি রাষ্ট্রে যদি গণতন্ত্র না থাকে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি কমে আসে তাহলে রাষ্ট্র আপনাআপনিই বিকল হতে বাধ্য। গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো- দমন নিপীড়নের বদলে রাজনীতিতে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা পুরোই উল্টোটা। বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য যত প্রক্রিয়া আছে সরকারের পক্ষ থেকে সেগুলো এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে বিএনপিকে নিয়ে অনেক ধরনের বিব্রতকর সংবাদও পরিবেশিত হচ্ছে। বিএনপি ভেঙে নতুন বিএনপি তৈরি হচ্ছে এ প্রচারও চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু বিএনপির ভোট-সমর্থকরা এতে করে যে খুব একটা বিচলিত হচ্ছে তা মনে হয় না। প্রায় সময়ই বলা হয় বিএনপি ৫ জানুয়ারির ভোটে না গিয়ে ভুল করেছে। হয়তো ভুলই করেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তারাও কোনো ভুল করেনি? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সব ভোটার ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিল? মোটেও তা সম্ভব হয়নি। স্বভাবতই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়েই গেছে। প্রশ্নগুলো থাক- যখন সময় হবে তখন এ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ গবেষণা হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে বড় বেশি প্রয়োজন একটি জাতীয় সংলাপ। গায়ের জোরে যে যত কথাই বলুক সংলাপের বিকল্প কিছু নেই। খুব সাধারণ মানুষেরই প্রশ্ন, সংলাপ করতে সরকারের বাধা কোথায়? কেন সংলাপে বসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সরকার। ক্ষমতাসীন দলগুলোর পক্ষ থেকে সংলাপ প্রশ্নে যেসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে সেগুলো সংলাপে বসে বলা হলেও প্রমাণ হতো আমরা রাজনৈতিক আচার-আচরণের প্রতি কিছুটা হলেও শ্রদ্ধাশীল। ক্ষমতাসীনদের অনেকেই মনে করতে পারেন সংলাপে বসলেই বিএনপি হয়তো নতুন নির্বাচনের কথা বলবে। তাই বিএনপির সঙ্গে আর বসা নয়। কিন্তু সংলাপটা যত না বিএনপির আকাক্সক্ষা আমার মনে হয় এর চেয়ে বেশি আকাক্সক্ষা সাধারণ জনগণের। যে জনগণ দল মতের বাইরে থেকে নিরাপদ ও শান্তিতে জীবনযাপন করতে চায়। যে জনগণ দুটো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে চায়। এ কারণেই মনে হয় কারও ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিবেচনায় না নিয়ে জনগণের স্বার্থেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসা উচিত।

সবশেষে প্যারিসের ধূলিমাখার কথায় ফিরে যাব। বিশ্ববরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকা যে প্যারিসের ধূলি মেখে গৌরাবান্বিত হয়েছিলেন এখন আমরা দেখছি সেই প্যারিসের রক্ত মেখে নতুন এক প্রহেলিকা তৈরি করেছে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। সেই রক্তের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এখন কতটা নিরাপদ? কতটা নিরাপদ এদেশের সাধারণ জনগণ? দীপন হত্যাকাণ্ডের পর সম্প্রতি বগুড়াতে মসজিদে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা নতুন শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। এর মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য এখন খুবই জরুরি। যে ঐক্যের জন্য দরকার সবার অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সংলাপ। যে সংলাপে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সিভিল সোসাইটিসহ সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। একটি জাতীয় সংলাপই এখন তাই সব সংকট উত্তরণের সবচেয়ে জরুরি উদ্যোগ হতে পারে।  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এ দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপটাই এখন বড় বেশি জরুরি। দোষারোপ নয়, তাদের পরস্পরের সহনশীল আচরণই পারে এ দেশে সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে।  আমাদের ধূলিতে আর কোনো রক্তের দাগ দেখতে চাই না।   

লেখক :  চেয়ারম্যান, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

[email protected]

সর্বশেষ খবর