মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

লাখ লাখ মামলার স্তূপ

বিচারক ও এজলাস বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিন

মামলাজট দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য নিঃসন্দেহে এক মাথাব্যথা। বলা হয় বিলম্বিত বিচার বিচারহীনতার নামান্তর। বিচারক ও এজলাসের অভাবে বিচারপ্রার্থীরা সে বিচারহীনতারই শিকার হচ্ছেন। দেশে এ মুহূর্তে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি। কোনো কোনো মামলা ৩৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলছে। মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব সারা দেশেরই অভিন্ন চিত্র। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা বিচারক ও এজলাস সংকট। জাতীয় আইন কমিশনের প্রতিবেদনেও এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেওয়ানি আদালতগুলোতে মামলা-পরবর্তী পর্যায়ে বিচারপ্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি বিলম্বিত হয় সমন বা নোটিস জারিতে। আর ফৌজদারি মামলা বিচারে দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ অপরাধের তদন্তে তদন্ত সংস্থার কালক্ষেপণ। মামলার দীর্ঘসূত্রতার জন্য বিচারক ও এজলাসের স্বল্পতাই শুধু দায়ী নয়, আইনজীবীদের একাংশের দায়িত্বহীন মনোভাবও অনেকাংশে দায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাদী মামলা দায়েরের পর বিবাদীপক্ষের জবাব দেওয়া বিচারের পূর্বশর্ত। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা বার বার জবাব দাখিলের জন্য সময় নেন। এ কারণে বছরের পর বছর মামলার বিচার শুরুই করা যায় না। এ ক্ষেত্রে বিবাদীপক্ষকে সময় না নিয়ে একতরফা শুনানির ব্যবস্থা করলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।  প্রতিবেদনে দেশের নিম্ন আদালতগুলোতে অন্তত ৫ হাজার বিচারক নিয়োগের প্রস্তাব এবং ২০০ বছর আগের সমন জারির পুরনো পদ্ধতি পরিবর্তনেরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মামলার সাক্ষী হাজির করতে নজরদারির প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় বিচারব্যবস্থার ওপর ভুক্তভোগীদের আস্থায় চিড় ধরছে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপরাধপ্রবণতার রাশ টেনে ধরা বিচারের উদ্দেশ্য হলেও বিলম্বিত বিচার সে উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে। আমাদের বিবেচনায় আইন কমিশনের এ প্রতিবেদন মামলাজট সমস্যার সমাধানে পথ দেখাতে পারে। কমিশনের সুপারিশগুলো আমলে নিলে মামলাজটের অবসান যেমন নিশ্চিত করবে তেমন মানুষের বিচারপ্রাপ্তির অধিকার পূরণে অবদান রাখবে। বিলম্বিত বিচারের অভিশাপ থেকেও মুক্তি পাবেন বিচারপ্রার্থীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর