বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এ মৃত্যুর দায় কার

ঢাকনাহীন ম্যানহোল যেন মৃত্যুফাঁদ

রাজধানীর শ্যামপুরের পালপাড়ায় ইসলাম হোসেন নীরব নামের এক শিশু স্যুয়ারেজ লাইনের ভিতরে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। বুধবার বিকালে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল নীরব। এ সময় খেলার এক সাথী দুষ্টুমি করে তাকে ধাক্কা দিলে সে খোলা ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যায়। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর রাত সোয়া ৮টায় তার লাশ উদ্ধার করা হয় স্যুয়ারেজের শেষ প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা শিশু নীরবকে উদ্ধার করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। শেষ পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তখন সে বেঁচে নেই। স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনা না থাকায় জীবন দিতে হলো নীরবকে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর ওয়াসার পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে প্রাণ হারায় জিহাদ নামের এক শিশু। সে মর্মান্তিক মৃত্যুর এক বছর না পেরুতেই একই ধরনের দুর্ঘটনায় আরেক শিশুকে প্রাণ হারাতে হলো। ওয়াসার পরিত্যক্ত পাইপ যদি ঠিকমতো বন্ধ করে দেওয়া হতো তবে খেলার সময় শিশু জিহাদের পাইপের মধ্যে পড়ে যাওয়ার ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো। শ্যামপুরের পালপাড়ার স্যুয়ারেজ লাইনের ম্যানহোলে ঢাকনা থাকলে নীরবকে এভাবে মরতে হতো না। গরিব বাবা-মাকে একমাত্র সন্তান হারিয়ে দুঃখের সাগরে ভাসতে হতো না। রাজধানীর স্যুয়ারেজ লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু সে দায়িত্ব তারা আদৌ পালন করছে কিনা মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে ওঠা খোলা ম্যানহোলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। প্রায়ই ম্যানহোলে পড়ে আহত হয় পথচারীরা। এগুলো মানুষের জীবনও যে কেড়ে নেয় শ্যামপুরের দুর্ঘটনায় তা প্রমাণিত হলো। স্যুয়ারেজ লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব যেহেতু ঢাকা ওয়াসার সেহেতু এ ধরনের দুর্ঘটনার দায় তারা এড়াতে পারে না। দেশের মানুষ চায় যাদের গাফিলতিতে নীরবকে প্রাণ দিতে হলো তারা যেন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হয়। নীরবের বাবা-মা তাদের সন্তানকে আর কিছুতেই ফিরে পাবেন না, তবে তারা যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পান সেটি নিশ্চিত হওয়া দরকার। ঢাকনাহীন ম্যানহোল মৃত্যুফাঁদ হয়ে আর কারোর জীবন যাতে কেড়ে না নেয় সে নিশ্চয়তা পেতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর