শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

একজন সফল মা

মুফতি আমজাদ হোসাইন

একজন সফল মা

প্রিয় মা! নাম তার ছালেহা। অর্থ পুণ্যবতী, সতী-সাধ্বী, নেককার, পরহেজগার। এই সুন্দর নামটি রেখেছিলেন তোমার পিতা যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ, শাইখুল ইসলাম হজরত হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর আজাল্লে খোলাফাদের একজন মুরশিদে কামেল আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন (রহ.) (ফেনুয়ার হুজুর)। উপযুক্ত বয়সে পিতা তোমাকে একজন যোগ্য ছেলে, কুমিল্লা জেলা, নাঙ্গলকোট উপজেলা, গোহারুয়া গ্রামের মুসলিম পরিবারে, হক ও হক্বানিয়্যাতের পতাকাবাহী, পীরে কামেল হজরত মাওলানা বদিউল আলম (রহ.)-এর হাতে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। তোমার স্বামী তোমাকে শরয়ী পর্দা মোতাবেক রাখার জন্য একান্নভুক্ত সংসার থেকে আলাদা করে আলাদা বাড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন। তুমিও শরিয়ত ও স্বামীর হক যথাযথভাবে আদায় করেছ মা! গোহারুয়া গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ের তুমি ছিলে বিনা বেতনে ধর্মীয় শিক্ষক। কত সৌভাগ্যবান তুমি মা! তোমার পিতার দিকে প্রায় সাড়ে পাঁচশত হাফেজ, আলেম, মুফতি, মুহাদ্দেস দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে দীনের খেদমত করে যাচ্ছেন। তোমার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের মধ্যে প্রায় ৫৫ জনের অধিক হাফেজ, আলেম, মুফতি, মুহাদ্দেস রয়েছে। এমন রতœগর্ভা মা তুমি! তুমি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৬ জানুয়ারি ২০১৫ মোতাবেক ২৩ সফর ১৪৩৭ হি. ২২ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বাংলা রবিবার দিন দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে এই ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিদায় গ্রহণ করেছ মা! বিদায় বেলায় এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করনি, কাউকে সামান্যতম কষ্ট দেওনি। দুপুরে জোহরের নামাজ পড়ে, কোরআন ও অজিফা পড়ে, খানা খেয়ে আরাম করছিলে। আরামের মাঝখানেই অত্যন্ত সহজে ৮০ বছর বয়সে এই দুনিয়াকে বিদায় জানালে মা! মৃত্যু যে এত সহজ আগে জানতাম না। মনে কখনো খারাপ লাগলে, শারীরিক কোনো কষ্টে পড়লে মা! তোমার কাছে দোয়া চাইতাম। তুমি নামাজ পড়ে দোয়া করলে শারীরিক সব রোগ ভালো হয়ে যেত মা! আজ কার কাছে দোয়া চাইব? কার কাছে মনের কথাগুলো মন খুলে বলব? মা-এর মতো আপন বলতে কেউ নেই যে মা! তুমি কীভাবে আল্লাহর এত নৈকট্যতা অর্জন করেছ মা? তোমার প্রতিটি দোয়া আল্লাহপাক কবুল করেছেন। তুমি তোমার ছেলেদের বলতে তোমরা যে আমাকে ঢাকাতে রাখ যদি আল্লাহপাক আমাকে ঢাকাতে মৃত্যু দেন আর তোমরা অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি নিয়ে যাও তখন কত বেগানা পুরুষ আমার লাশকে দেখবে, এটা কীভাবে হয়? তোমরা আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও। আমি যেন বাড়িতেই মরতে পারি। আর মনে রাখবে আমার মৃত্যুর পর তাড়াতাড়ি দাফন কাফন করবা। কোনোভাবেই যাতে কোনো বেগানা পুরুষ আমাকে না দেখে সেদিকে খেয়াল রাখবা। বাস্তবিক হয়েছেও তাই। তুমি বলতে নাহ বাবা! আমার আর ঢাকা যাওয়া হবে না। তোদের বাবা এখানে শুয়ে আছে আমি কীভাবে ঢাকায় নিষ্ঠুরের মতো পড়ে থাকি। এখানে থাকলে তো তোদের বাবার পাশেই যেন থাকলাম। আমরা দুই ভাই কর্মের খাতিরে ঢাকায় থাকি। কিন্তু মনটা সব সময় মার কাছে পড়ে থাকে। মার কথাটিই বাস্তব হলো তিনি স্বামীর বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করলেন। স্বামীর পাশেই তোমাকে সমাধিস্থ করা হলো মা! তোমার কত সৌভাগ্য মা! শত শত আলেম-ওলামা তোমার জানাজায় শরিক হলো, হজরত মা ফাতেমা (রা.)-এর মতো তোমারও জানাজা রাতে হলো। তোমার ছেলেমেয়েদের জামাই, ভাইবোনের ছেলে ও নাতি-পুতিরা যারা হাফেজ আলেম, মুহাদ্দেস, মুফতি তারাই তোমাকে কবরে আল্লাহর কাছে অর্পণ করেছে মা! মাটি দিয়েছে! তোমাদের কবরের দিকে তাকালে মনে হয় তোমরা দুজন কত আরামে এক স্থানে অবস্থান করছ! জান্নাতের সুশীতল ছায়ার সঙ্গে তোমাদের কবরের যোগাযোগ হয়ে  গেছে। তোমার জানাজায় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে যারা বক্তব্য দিয়েছেন সবার কথা একটাই ছিল তুমি ছিলে পর্দানসিন এক ধার্মিক মহিলা। তোমার জানাজায় দেশের প্রখ্যাত আলেমে দীন মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, বারিধারা মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল  মাওলানা নাজমুল হাসান, সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি মুনির হোসাইন, মাওলানা আসআদ আল হোসাইনী, চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রহমানসহ প্রমুখ ওলামা মাশায়েখ বক্তব্য দিয়েছেন। তোমার জানাজা পড়িয়েছেন। তোমার বড় ছেলে ঢাকা চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ মূসা। তোমার ছোট ছেলে বারিধারা মাদ্রাসার একজন নগণ্য খাদেম মুফতি আমজাদ হোসাইন। সবাই তোমার জন্য মাওলার কাছে দোয়া করেছেন তিনি যেন তোমাকে জান্নাতের উচ্চাসনে স্থান করে দেন।  দুনিয়ার সব মুসলিম ভাইবোনদের যদি এমন জীবন হতো তাহলে কতই না ভালো হতো। আল্লাহপাক আমার মাকে জান্নাতের উচ্চাসনে স্থান করে দিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর