রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভোজ্য তেলে অতি মুনাফা

ক্রেতা স্বার্থ রক্ষায় নজর দিন

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এলেও তার সুফল ভোগ করতে পারছে না দেশের সাধারণ ভোক্তারা। আমদানিকারক ও বড় ব্যবসায়ীদের মুনাফা স্ফীত করতেই তা শুধু অবদান রাখছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গত অক্টোবরে প্রতি টন সয়াবিন ৬২৩ ডলার ও পাম ৫৩০ ডলারে লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে প্রতি লিটার সয়াবিন ৫০ টাকা ও পাম তেল ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দেশের বাজারে বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ৭৮ থেকে ৮০ টাকা ও পাম তেল ৬০ থেকে ৬২ টাকায় ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার জন্য মিল মালিকদের দুষছেন। দেশের বাজারে পরিশোধিত তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই বাজারে পরিশোধিত ভোজ্য তেলের দামের ব্যবধান ১০ থেকে ১১ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও একই ধারণা পোষণ করেন। স্মর্তব্য, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ছিল সর্বোচ্চ। ওই বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন ১ হাজার ২৮০ ডলার হিসাবে বিক্রয় হয়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম ছিল প্রায় ১০০ টাকা। প্রতি টন ১ হাজার ২৪৮ ডলার হিসাবে প্রতি লিটার পাম তেল ৯৩ টাকায় লেনদেন হয়। তখন দেশের বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১১০ ও পাম ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্থানীয় দরে লিটারে ব্যবধান ছিল ৭ থেকে ১০ টাকা। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ধস নামায় দেশে দাম কিছুটা কমে এলেও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ব্যবধান অনেক বেশি। ক্রেতাদের প্রতি লিটার সয়াবিন তেল প্রায় ৩০ টাকা ও পাম তেল ২০ টাকা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার সিংহ ভাগই আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেন তেলের দাম। কম দামে কেনা তেলও বিক্রি করা হয় বাড়তি দামে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও তার সুফল ভোগ করতে পারে না সাধারণ ভোক্তারা। ভোজ্য তেল ব্যবসায় বাড়তি দামের জন্য গত এক বছরে কয়েকশ কোটি টাকার বাড়তি আয় করেছেন আমদানিকারকরা। ক্রেতা স্বার্থ রক্ষা সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে তাদের অসহায়ত্ব যেভাবে প্রমাণিত হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেতন হবে এমনটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর