শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গণতন্ত্র ও সুশাসন

টেকসই উন্নয়নের নিশ্চয়তা দেয়

বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখন একটি বিশ্ব মডেল। রূপকথার ফিনিক্স পাখির উপমা তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের এ সাফল্যের জন্য। ভস্মের মধ্য থেকে উড়াল দেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে রূপকথার ফিনিক্স পাখি। বাংলাদেশের বাস্তবতা ছিল অভিন্ন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের শীর্ষ দরিদ্র দেশের একটি। মুক্তিযুদ্ধে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বুড়িগঙ্গা পাড়ের এ দেশটি। দেশের এক কোটি মানুষ ঘরবাড়ি সহায়-সম্পত্তি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। দেশের মধ্যে অন্তত দুই কোটি মানুষও নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। ভিটেমাটি ছেড়ে যারা পালাতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সহায় সম্পত্তি লুটপাটের শিকার হয়। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারায় ৩০ লাখ মানুষ। হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। চাষাবাদে ব্যবহূত বলদের বেশির ভাগ দখলদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের ভূরিভোজের জন্য ব্যবহূত হয়। স্বাধীনতার পর শূন্য হাতে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। এক কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন, সাত কোটি মানুষের খাদ্য সংস্থান, বিশাল সংখ্যক মানুষের চিকিত্সার ব্যবস্থা করা জাতির সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। রাস্তাঘাট, স্থাপনা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। অথচ রাজকোষ ছিল আক্ষরিক অর্থেই শূন্য। সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজ বিশ্বের যে ৫-৬টি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। এ সাফল্য আশাজাগানিয়া হলেও তা কতটা টেকসই তা সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। অগ্রগতির এ ধারাকে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। আর সময়ের পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয়েছে গণতন্ত্র ও সুশাসনের মাধ্যমেই উন্নয়ন টেকসই হয়। অবাঞ্ছিত ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথযাত্রা বিঘ্নিত হয়েছে অসাংবিধানিক শাসনের কালো ছায়ায়। দেশে আজ ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং দুর্নীতির যে বিষবৃক্ষ বেড়ে উঠছে তা সামরিক শাসকদেরই অবদান। এ বিপদ ঠেকানোর জন্যও গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথকে বেছে নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে তুলতে হবে আস্থার পরিবেশ। এটি আজ সময়ের দাবি এবং তা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর