রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেবল ডলারভিত্তিক উন্নয়ন টেকসই হবে না

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান

কেবল ডলারভিত্তিক উন্নয়ন টেকসই হবে না

১৯৭১ সালে যদি পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা না হতো তাহলে আমাদের পাকিস্তানের অংশই থাকতে হতো। কিন্তু সেই পাকিস্তানের এখন কী অবস্থা? সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক এমনকি আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সব সূচকে পাকিস্তান আমাদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অর্জন আমাদের তুলনায় অর্ধেকও নয়। স্বাধীন না হয়ে আমরা যদি পূর্ব পাকিস্তান হয়েই থাকতাম তাহলে আমাদের অবস্থা ঠিক একই রকম হতো। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান কেবল পাকিস্তান নয়, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে পাশাপাশি সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় আর্থসামাজিক অনেক বিবেচনাতেই এগিয়ে আছে। স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের প্রথম স্বপ্ন, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মালিক হওয়া, তা সার্থক হয়েছে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে মুক্তিযুদ্ধের বড় প্রাপ্তি কী? তাহলে বলব ‘আমরা পাকিস্তান নামক একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের অংশ নই’- এটিই বড় পাওয়া। পাকিস্তানের অর্ধেক অংশ এখন তালেবানদের দখলে। কেবল তাই নয়, আমেরিকানদের অন্যতম ঘাঁটি পাকিস্তান, সেখানে আকাশ থেকে অনবরত বোমা ও ড্রোন হামলা হচ্ছে এবং জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। এসব দিক থেকে পরিত্রাণ পাওয়া তথা পাকিস্তান নামক দুষ্ট-ভ্রান্ত রাষ্ট্রের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া- এটিই স্বাধীনতার সর্বোচ্চ সাফল্য। এরপরও বলা হয়, যেসব ক্ষেত্রে আমাদের আরও উন্নতি করা এবং এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু এর পেছনেও কারণ রয়েছে। ১৯৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। যে চেতনাগুলো ’৭২-এর সংবিধানের স্তম্ভ হিসেবে সন্নিবেশিত। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আর এই হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের যাত্রার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ পুনরায় একটি পূর্ব পাকিস্তান কায়েম করা হয়; শুধু বাংলাদেশের নামটি পরিবর্তন করার সাহস দেখায়নি। বাংলাদেশ নামেই শুরু হয় পাকিস্তানি কার্যক্রম, পাকিস্তানের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার যা কিছু ছিল, তার সবকিছুই আবার ফিরে আসে। এতে স্বাধীনতার চেতনা বাধাগ্রস্ত হয়। যে স্বপ্ন, চেতনা, ধ্যান-ধারণা নিয়ে মানুষ দেশ স্বাধীন করেছিল তার বিপরীতধর্মী একটি শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে। তারা ক্ষমতায় বসে প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে। 

সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তানের কাজ ছিল হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো এবং ভারতের বিরোধিতা করা। যা এখনো পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অব্যাহত রয়েছে। ভারত ও হিন্দুরা শত্রু; তাদের বিরোধিতা করেই পাকিস্তানের সৃষ্টি। একটি যুদ্ধংদেহী মনোভাবের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকে। ভারতেও কিছু দাঙ্গাবাজ সাম্প্রদায়িক লোক ও দল আছে তারাও ক্ষমতায় যাওয়ার ও থাকার জন্য ধর্মীয় উন্মাদনাকে ব্যবহার করে।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ওই ধ্যান-ধারণা ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে সব রকমের প্রতিক্রিয়াশীলতা সৃষ্টি হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’-এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ জিয়াউর রহমান চালু করেন। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ করা হয়। এভাবেই তারা স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিদের পুনর্বাসন এবং শীর্ষ পর্যায়ের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শাহ্ আজিজসহ অন্যান্য নেতৃত্বকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যত ধরনের পরিবর্তন আনা হয়, তাতে স্বাধীনতার চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বৈষম্যহীন সমাজের আবেদন বিনষ্ট করা হয়। কেবল তাই নয়, এখানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দ্বিজাতিতত্ত্বের চেতনা পুনঃপরস্ফুিটিত হতে থাকে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো— বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। চরম পৃষ্ঠপোষকতা হিসেবে জেনারেল এরশাদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দল ফ্রিডম পার্টিকে অবাধ রাজনীতির সুযোগ প্রদান করেন। এদের নেতৃত্বকে নির্বাচিত করে মহান জাতীয় সংসদে পর্যন্ত নিয়ে বসায়। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে জাতি কেবল রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে যায়নি, বরং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হওয়ার জন্য জাতীয় চেতনাবোধ অর্থাৎ একটি শক্তিশালী সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন নস্যাৎ হয়। ’৯০-এর দশকে পাকিস্তানি ভাব ধারার সামরিক স্বৈরশাসনের পতন হয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে উল্টো যাত্রা থেকে দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। দেশ আবার স্বাধীনতার চেতনায় ফিরে আসে।

চরম বিরোধিতা এবং প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর হয়েছে এবং বাকিদেরও হবে। নানা দিক থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। জাতির জনককে হত্যার পর আমাদের রাজনীতিতে আর একটি উপসর্গ ছিল সামরিকীকরণ। সে সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এমন পর্যায়ে ছিল, কোনো কিছু হলেই উত্তরপাড়া অর্থাৎ সেনাবাহিনীর কথা তোলা হতো। ’৭৫ থেকে ’৯০ পর্যন্ত আমাদের রাজনীতি সেনাবাহিনী বেষ্টিত এবং সরাসরি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রধান পদক্ষেপটি শেখ হাসিনাই নিয়েছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম এবং অবস্থান ক্যান্টনমেন্টে হওয়ার কারণে মানুষের ধারণা ছিল, দেশের রাজনীতি ওই ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সেনানিবাসেই বসবাস করতেন। সামরিক এবং বেসামরিক যে আদলেই হোক না কেন ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ক্যান্টনমেন্ট। এ সুবিধা বিএনপিই সবসময় নিয়েছে। শেখ হাসিনার যত অবদান আছে— তার মধ্যে বড় অবদান হলো ওই দলকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা। এ ঘটনা আমাদের রাজনীতিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহের মধ্যে একটি। কিছু হলেই উত্তরপাড়ায় কী ঘটছে বা সেনাবাহিনীর প্রধান কে আছে, সাভারে জিওসি কে, এ বিষয়ে একসময় পানের দোকানদারও খবর রাখত। সামরিক বাহিনী কখন ক্ষমতা  নেবে? কিন্তু এখন এ রকম আর সম্ভাবনা নেই। এটি একটি বড় পরিবর্তন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন এবং এর আগে-পরে এমনকি ২০১৫ সালের শুরুতে সন্ত্রাসী আন্দোলনও সে ইঙ্গিত বহন করে। নিরপেক্ষ নির্বাচন আন্দোলনকারী জামায়াত-বিএনপি জোটের লক্ষ্য ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করা— যাতে তাদের জন্মদাতাদের বংশধর কেউ ক্ষমতা দখল করে। এ অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়াও আমাদের রাজনীতিতে একটি বড় ঘটনা। এ ধরনের হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কাউকে ক্ষমতায় আনা সম্ভব নয়, এটিও একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।

বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য কতগুলো অর্থনৈতিক টার্গেট ঘোষণা করা হয়েছে। তা হলো আমরা ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হব। ধনী দেশ হওয়ার হিসাব মূলত বিশ্বব্যাংকের মাথাপিছু আয়ের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। আমাদের মাথাপিছু আয় যদি চার হাজার বা সাড়ে চার হাজার ডলারে উন্নীত হয়, তাহলে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকব না, অর্থাৎ উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হব। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এ রকম আয়সমৃদ্ধ দেশ পৃথিবীতে একসময় অনেক ছিল। বর্তমানে যুদ্ধরত দেশ সিরিয়া, মিসর, লেবানন, ইরাক, লিবিয়া মাথাপিছু আয়ের হিসাবে অনেক আগেই উন্নত। কিন্তু সেই রাষ্ট্রগুলো এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, কেবল মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা মানুষের পোশাক-আশাক রাস্তাঘাট, বাড়ি-গাড়ি অথবা খাওয়া-দাওয়া অর্থাৎ ভোগের আধিক্য ভিত্তিক জীবনযাত্রার উন্নয়ন, যা টেকসই উন্নয়ন নয়, সাম্প্রতিককালে তা প্রমাণিত হয়েছে। মানবিক উন্নয়নের সামাজিক সূচক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল। সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে, রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে না, ধর্মীয় হানাহানি এবং বিভেদ থাকবে না— মুক্তিযুদ্ধের এসব চেতনা পরবর্তীকালে নাশ হয়ে যায়। ডলারের হিসাবে দরিদ্র হলেও আমরা মনোভাবের দিক থেকে চল্লিশের দশকেও এখনকার চেয়ে ধনী ছিলাম। এ দেশে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে হানাহানি, সহিংসতা দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য, ইরান, ইরাকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে হানাহানি, সহিংসতা আছে। বাংলাদেশে সুন্নিদের সংখ্যা বেশি এবং শিয়াদের সংখ্যা কম। তারপরও কখনো শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে হানাহানি দেখা যায়নি। এ দেশে তাজিয়া মিছিল এবং শিয়া মসজিদে বোমা নিক্ষেপ এবং গুলি করে মুয়াজ্জিনকে হত্যা করা অতি সাম্প্রদায়িক বিষয়। অর্থাৎ একদিকে আমরা ডলারের হিসাবে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হলাম, অন্যদিকে ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তা-চেতনা সম্প্রসারিত হলো— তাহলে আমাদের অবস্থাও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার মতোই হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে দূরে সরে গিয়ে অসহিষ্ণু জাতিতে পরিণত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হলে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে না।

আমাদের দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে চলবে। আর এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চালাতে গিয়ে কেবল আওয়ামী লীগকেই সবসময় ক্ষমতায় থাকতে হবে— আমি তা বিশ্বাস করি না। যে কোনো একটি দল সবসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে কখনো বিরোধী দল হবে না- বিষয়টি এমনও নয়। এর মানে হলো যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে, তখনই কেবল দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলবে আর অপর কোনো দল ক্ষমতায় এলে দেশ পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করবে— তা হতে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ আমাদের ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল যে হোক না কেন তারা হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আজীবন ক্ষমতায় থাকবে না। অন্য দলও ক্ষমতায় আসবে। আমাদের মূল সমস্যা হলো, দেশের অন্যান্য উন্নয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকা খুব জরুরি। এতে অর্থনৈতিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক থাকবে। অর্থাৎ সামাজিক, শিক্ষা, সামরিকসহ নানা খাতের নীতি ও পরিচালনা নিয়ে ধনাত্মক সমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়নি। একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে, আওয়ামী লীগ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে কেবল ততদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে। কোনো কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে পাকিস্তানি চেতনা ফিরে আসবে। নির্বাচন এলেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আলোচনা, টকশোসহ নানা কর্মসূচি থেকে বুদ্ধিজীবীদেরও বেরিয়ে আসতে হবে। এর পরিবর্তে বুদ্ধিজীবীদের মূল এজেন্ডা যেমন- রাজনৈতিক দল, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের দুর্বলতা দূরীকরণ এবং দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করা, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করার জন্য কী ফর্মুলা নেওয়া যেতে পারে, এসবে মনোযোগ দিতে হবে। তাহলে জাতি এগিয়ে যাবে।

আমার বক্তব্য হলো, অর্থনৈতিকভাবে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, শতচেষ্টা করলেও তা প্রতিহত করা যাবে না। আমাদের অর্থনৈতিক সূচক এমন সক্রিয়, তাতে কেউ না চাইলেও দেশ এগিয়ে যাবে। সমস্যা হলো, দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে তুলনায় আমরা যদি সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকি, তাহলে একপর্যায়ে দেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে খুব চিন্তা করে কাজ করতে হবে। যাতে উভয়ের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য থাকে। কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নই আমাদের কাম্য হতে পারে না। যদি সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন একতালে অগ্রসর হয় তাহলে আমরা ২০৪১ সালের আগেই জাতির জনকের স্বপ্ন-সুখী, সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং সেটাই কেবল টেকসই হবে, কেবল মাথাপিছু ডলারের হিসাবে উন্নয়ন টেকসই হবে না।

 

লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর