মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্যাংক ঋণের উচ্চ হারের সুদ

বিনিয়োগের প্রধান প্রতিবন্ধক

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা কোনটি— এ নিয়ে বিতর্ক অনেক দিনের। আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, বিদ্যুত্ ও গ্যাসের অভাব বিনিয়োগের জন্য যে বাধা এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যি। তবে এসব বাধা অতিক্রম করার পরও বিনিয়োগকারীরা হোঁচট খাচ্ছেন ব্যাংকিং খাতের কারণে। দুনিয়ার যেসব দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। দুই অঙ্কের ব্যাংক সুদ নিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা আর বাঘের পিঠে চড়া সমান হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ব্যাংক ঋণ খেলাপি ঋণে পরিণত হওয়ার পরিমাণও এ দেশে মাত্রাতিরিক্ত বেশি। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দীর্ঘদিন যাবত্ ব্যাংক ঋণের মাত্রাতিরিক্ত সুদের ব্যাপারে অভিযোগ করে আসছেন এবং তারা তা এক অঙ্কে সীমাবদ্ধ করার তাগিদ দিচ্ছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে এই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া গেলে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা চলছে তা কেটে যাবে। অলস টাকা পড়ে থাকার কারণে ব্যাংকগুলো যে সমূহ সংকটে পড়ছে তার অবসান হবে। পাশাপাশি ঋণ খেলাপ প্রবণতার রাশও টেনে ধরা সম্ভব হবে। ব্যাংক ঋণের অতি উচ্চহার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ সত্যটি অর্থমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ব্যাংকের চড়া সুদকে বিনিয়োগের বড় বাধা বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, দেশের বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে তেমন সহযোগিতা পান না। অর্থমন্ত্রীর এ মূল্যায়ন সমস্যার গ্রন্থিমোচনে তাগিদ সৃষ্টি করলে তা দেশের বিনিয়োগের জন্য সুখবর বলে বিবেচিত হবে। সরকার ব্যাংক সুদের হার নির্ধারণ করে দিলে বিশেষত তা এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে বিনিয়োগকারীরা স্বস্তিবোধ করবেন। দেশে বিনিয়োগ বাড়লে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে তেমন বাড়বে রাজস্ব। দ্রুত মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার যে স্বপ্নকল্প সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে তা অর্জন করা সহজতর হবে। দেশের ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেয় দেশবাসীর আমানতের টাকা থেকে। দেশের মানুষের কল্যাণে সে অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করতেই ব্যাংক ঋণের সুদের হার কীভাবে কমানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগী হতে হবে।

সর্বশেষ খবর