বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নেই

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নেই

ইসলাম একটি সর্বকালীন ও সর্বজনীন মতাদর্শ, চিরশান্তি ও পরম মানবতার ধর্ম। ঐক্য, সৌহার্দ্য, সাম্য মৈত্রী, সহিষ্ণুতা ও নিরাপত্তার প্রতীক এ ধর্ম। হত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বোমাবাজি ও অশ্লীলতা ইত্যাদি চরমপন্থি কর্মকাণ্ডের অস্তিত্ব ইসলামে মোটেই নেই।  নাশকতামূলক কার্যক্রম ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না। অস্থিতিশীল পরিবেশ ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ইসলামে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আত্মঘাতী হামলা সম্পূর্ণ অবৈধ ও মহাপাপ। ইসলামের পতাকায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ অশ্লীলতা গর্হিত ও ঘৃণ্য অপকর্মের শামিল। জিহাদ আর সন্ত্রাস এক নয়। অন্যায়, অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টির নাম হলো সন্ত্রাস। শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি মানেই সন্ত্রাস ও ফাসাদ। আর এসব নির্মূলে একমাত্র শরিয়তসম্মত শান্তিপূর্ণ শুভ পদক্ষেপ শিক্ষা দেয় ইসলাম। ইসলাম কোনো প্রকার সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। গায়ের জোরে কাউকে মুসলমান বানানোর একটি মাত্র ঘটনাও ইসলামের ইতিহাসে নেই। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, “ইসলামে কোনো জবরদস্তি নেই।” (বাকারা-২৫৬)। ইসলামের নবী সা. সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়েছেন। যারা পাথর ছুড়ে মারে তাদের ফুলের মালা, আর যারা পথে কাঁটা পুঁতে তাদের জন্য ফুল বিছিয়ে দেওয়া তার আদর্শ। দীর্ঘ ১৩টি বছর মক্কায় আবু জাহেল গংদের সন্ত্রাস সহ্য করেছেন। সহ্য করেছেন ১০ বছর মদিনায় তাদের আক্রমণ ও অপবাদের ঝড়। এমনকি মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক দিনে যখন রসুল (সা.) ১০ হাজার সাহাবি নিয়ে জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করলেন, সেদিন চিরশত্রু পৌত্তলিকদের সমুচিত শাস্তি প্রদানের অপূর্ব সুযোগ গ্রহণ করেননি। ভীতসন্ত্রস্ত শত্রু মক্কাবাসীদের কোনো ভর্ত্সনা পর্যন্ত করলেন না। রসুল (সা.) অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে নিঃশর্তভাবে ঘোষণা করলেন, ‘আজকের দিনে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, তোমাদের অনুতাপের কোনো কারণ নেই, যাও তোমরা আজ মুক্ত।’ রহমতে আলমের কণ্ঠে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আনন্দে প্রায় দুই হাজার লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়। ক্ষমার মাধ্যমে তিনি মানবতার সেবা করেছেন। তলোয়ারের মাধ্যমে নয়। নয় প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার মাধ্যমে।

ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কেন? ইসলাম শান্তির ধর্ম। অশান্ত বিশ্বে শান্তির শ্বেত কপোত উড়াতেই ইসলামের অভ্যুদয়। ইসলামের অনুসারীরা সর্বত্রই সমাজের কাছে শান্তি-শৃঙ্খলা, মানমর্যাদা ও সংহতির প্রতীক। মুসলমানরা বিশেষত আলেম-ওলামারা সমাজে যে ‘গুডউইল’ সৃষ্টি করেছেন একশ্রেণির হিংসুটে মানুষের কাছে তা গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই একটি কুচক্রী মহল ইসলামের নামে কালিমা লেপন করতে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। যার অংশ হিসেবে ইসলামী বেশভূষাধারী কিছু লোক দিয়ে সাম্প্রতিককালে বোমা হামলা, অশ্লীলতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখ এ ধরনের কোনো বিধ্বংসী কাজে কখনোই সায় দেননি। হঠাত্ করে এ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী ইসলামী চেতনার নামে যা করে যাচ্ছে তা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতপক্ষে এসব কিছুর পরিকল্পনা এসেছে বিধর্মীদের কাছ থেকে। তারা মীর জাফর শ্রেণির কিছু দাড়ি-টুপিওয়ালাদের হাতে বোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলে দিয়ে তাদের ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের পর আত্মস্বীকৃতির মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে ধরা দিয়ে আপন উদ্দেশ্যে তারা অনেকটা সফলও হয়েছে। এদেরই ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে আজ আলেম সমাজ ও ইসলামের প্রতি মানুষের একটা চরম বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। বিনা তদন্তেই ইসলাম ধর্মকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। মুসলমানদের উগ্র মৌলবাদী আর সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ইসলামের নাম উচ্চারণ করে কলঙ্কিত করা হচ্ছে ইসলামের পবিত্র বিধানকে। আর এসবই একদিন মুসলমানদের হত্যার ইস্যুতে পরিণত করতে পারে। অনেক স্থানে অবৈধ কাগজপত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়।

কোথাও অশ্লীল কর্মকাণ্ডের ঘোষণা, ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়ে আরম্ভ হয়। এগুলো কি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য হচ্ছে? না! এসবই হলো ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের অবমাননা ও হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে। আর একই উদ্দেশ্যে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের উত্তরসূরিরা দাড়ি-টুপি পরে ইসলামকে কলুষিত ও ওলামাদের ষড়যন্ত্রের বিষোদগার বানানোর চক্রান্ত শুরু করেছে।  একটি হাদিস এ পরিসরে উল্লেখ করা জরুরি মনে হচ্ছে। জনৈক ব্যক্তি সা’দ (রা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহতায়ালা কি বলেননি যে, ‘তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনা ফাসাদ দূরীভূত হয় এবং দীন আল্লাহর জন্য হয়।’

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর