বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মমতা যা বললো আমাকে

তসলিমা নাসরিন

মমতা যা বললো আমাকে

আমার স্বামী ব্যবসা করে, আর আমি মতিঝিলের একটি ফার্মে প্রাইভেট সেক্রেটারির চাকরি। বেতন ভাল। আমি দেখতেও ভাল। লোকে বলে, তাছাড়া আয়নায় দেখি। এই চাকরিটি দিনে দু’বার ছেড়ে দেবার উপদেশ দেয় আনিস; আনিস আমার স্বামীর নাম। আমি কোনও যুক্তি খুঁজে পাই না, কেন আমি চাকরিটি ছাড়ব। আজকাল পনোরো হাজার টাকা কি চাইলে পাওয়া যায়? আনিস যে খুব বড়সড় কোনও ব্যবসা করে তাও নয়। তারও হঠাত্ হঠাত্ কপর্দকহীন বছর পেরোয়। তখন আমার টাকায় দিব্যি সংসার চলে। আনিসকে এ নিয়ে আমি কখনও অহংকার করে বলি না যে দেখ এই খাতে এত ঢালছি, ওই খাতে অত। আনিসের ব্যবসা মাঝে মাঝেই জমে ওঠে, ঘরে বেশ টাকা আসতে থাকে তখন, বুঝি। আনিস নতুন প্যান্ট-শার্ট বানায়, বড় বড় রুই মাছ থাকে বাজারের থলেয়, রাত করে বাড়ি ফেরে, মুখ থেকে ভুরভুর করে মদের গন্ধ বেরোয়। আর সেই মদ খাওয়া অবস্থায় সে আমাকে ডাকে-‘মমতা, এদিকে এসো।’

আমি যে হাতের কাজ সব সেরে তার কাছে যাব তা সে মানবে না। তক্ষুনি যেতে হবে। গেলে তার প্রথম কথাই হবে ‘তোমার ফার্মের এমডি একটা আস্ত বদমাশ সেটা তুমি জানো?’

এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেওয়া যায় না। প্রথম প্রথম আমি এরকম উত্তর দিতাম যে সে লোক বদমাশ হলে আমার কী। তাতে সে আরও ক্ষেপে গিয়ে বলে ‘তুমি কি বলতে চাও সে লোক তোমাকে নিয়ে বিছানায় যায়নি?’

আমি যদি বলি- ‘না।’ আনিস আমার গালে শক্ত দুটো চড় দিয়ে বলবে- ‘মিথ্যে কথা।’ তার প্রশ্নের উত্তর না দিলেও সে বলবে- ‘এমডি আলমগীর তোমার সঙ্গে শুয়েছে।’ সে এত চিত্কার করে ‘বেশ্যা, ছেনাল, মাগী’ শব্দগুলো উচ্চারণ করে যে লজ্জায়-ঘৃণায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। আশেপাশের ফ্ল্যাট থেকে সকলেই আনিসের এই চিত্কার-চেঁচামেচি উপভোগ করে। উপভোগ করে এইজন্য বললাম, কারণ এই সব মারধর চিত্কার করবার পর পরদিন সকালে যখন প্রতিবেশীরা খবর নিতে আসে, জিজ্ঞেস করে কী হয়েছিল ভাই অথবা ভাবী, আগ বাড়িয়ে আনিসই তাদের শোনায় যে এই সংসার তার জন্য নরকের মত। এই সংসারে যে সে কীভাবে টিকে আছে তা সে-ই জানে। প্রতিবেশীরা আনিসের জন্য মায়ায় এবং মমতায় কাতর হয়ে ওঠে। আমাকে যাবার আগে ওরা উপদেশ দিয়ে যায়- ‘স্বামী যেভাবে চায় সেভাবে থাকো, অযথা গন্ডগোল কর কেন?’

আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে আনিস এরকমই বুঝিয়েছে, এই সংসারটি আমার উদাসীনতার কারণেই এমন উচ্ছন্নে যাচ্ছে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ভাল হচ্ছে না। ঘরের কাজে আমার মন নেই। মন পড়ে থাকে বাইরে। চাকরিটি ছেড়ে দিতে কিছুতেই রাজি নই। কারণ তার সঙ্গে তেরো বছর বিয়ে হয়েছে, তবু আমি নিশ্চিত নই তার সঙ্গে বাকি জীবন আমার থাকা সম্ভব কি না। হতেও তো পারে আমাকে একদিন সে ডিভোর্স করলো, হতেও তো পারে আমাকে সে চাপ দিয়ে রাজি করিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করলো।  আমি কোনও আশঙ্কাকে একেবারেই ঝেড়ে বিদেয় করি না।

চাকরিখানা তাই ছেড়ে দেবার আমি কোনও যুক্তি দেখি না। লোকে বলে, আনিসও বলে, পিএস মানেই এমডি’র পোষা মেয়েমানুষ। পিএস পদটি চাকরি হিসেবে সম্মানজনক নয়, একথা আমার মানতে ইচ্ছে করে না। আমার দশ বছরের চাকরি জীবনে আলমগীর সাহেব প্রয়োজনের বাইরে আমার সঙ্গে একটি কথাও বলেননি। আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ তিনি কখনোই করেননি। অথচ আমার এক ডাক্তার বান্ধবীকে তার প্রায়বৃদ্ধ  প্রফেসর রোগী দেখবার নাম করে চেম্বারের দরজা বন্ধ করে উলঙ্গ করে ছাড়তেন। ডাক্তারি তো খুব সম্মানের পেশা লোকে বলে, তবে? আমার এমডির সঙ্গে আনিসের যে পরিচয় নেই তা নয়। আনিস প্রায়ই এসে তাঁর সঙ্গে রাজনীতি, অর্থনীতি, ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি বিষয়ে কথাবার্তা বলে, লোকটি যে আপাদমস্তক ভদ্রলোক তা জেনেও আনিস বাড়িতে বসে এমডি এবং আমাকে নিয়ে অশোভন সম্পর্কের ইঙ্গিত করে।

আমাদের ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে। দীপ আর দোপাটি। ওরাও আনিসের মদ খাওয়া, আমার সঙ্গে রাত-বিরেতে চিত্কার করা, গালিগালাজ এসব সম্পর্কে সব জানে। একদিন দীপ আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল- ‘মা বেশ্যা মানে কি? তুমি কি বেশ্যা?’

-‘কেন একথা বলছ তুমি?’ দীপকে আমি স্কুলের টিফিন বক্সে টিফিন দিতে দিতে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।

 দীপ বলল- ‘বাবা যে তোমাকে বেশ্যা বলল সেদিন!’

পাঁচ বছর বয়সের ছেলে, ওরও শব্দের মানে জানবার কৌতূহল জাগে। আমি অনেকক্ষণ চুপ হয়ে রইলাম। কোনও উত্তর দিতে পারিনি দীপকে। কারণ একবাক্যে তার বাবার কথাটি উড়িয়ে দিলে তারও প্রশ্ন জাগবে বাবা কেন তবে মিথ্যে কথা বলে। আমি প্রসঙ্গ পাল্টে বলি- ‘তোমার স্কুল আজ তাড়াতাড়ি ছুটি জানো তো? আজ কিন্তু আমরা শিশু পার্কে যাবো।’ দোপাটির বয়স দশ। ও চুপচাপ মেয়ে। আমাকে কোনও প্রশ্ন করে না কোনও বিষয়ে। তবে আনিসের চেয়েও আমাকে বেশি পছন্দ করে বুঝি। আমি অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে আবার যখন রান্না ঘরে দৌড়োই, সে বলে- ‘এত কাজ করলে পরে তোমার জ্বর হবে।’

‘কাজ করলে বুঝি জ্বর হয়?’ আমি হেসে বলি।

আসলে এত কাজ করলে তোমার যে কষ্ট হবে এই কথাটির বদলে সে বলে জ্বর হবে। সম্ভবত কষ্টের চেয়ে জ্বরকে তার ভয়ঙ্কর মনে হয় বেশি। তাই ভয়ঙ্করের অধিক্য বুঝিয়ে সে আমাকে নিরস্ত করতে চায় কষ্ট থেকে। কিন্তু আমার কি বসে থাকলে চলে। আমার ভাত-তরকারি রাঁধতে হবে, সকলকে খাওয়াতে হবে। বাড়িতে কাজের মানুষ একেবারেই পাওয়া যায় না। তাই একা হাতেই সব সামলাতে হয়। আনিস আবার জুয়ো খেলার আসর বসায়। ড্রইংরুমে মধ্যরাত অবধি জুয়ো চলে আমি আনিস এবং তার বন্ধুদের জন্য রান্না চড়াই, সকলকে খাইয়ে-টাইয়ে ঘুমাতে যাই। আনিস জুয়োয় বেশির ভাগই হারে। ওর জুয়ো খেলায় আমি কখনও বাধা দিই না, বাধা কেন দেব, তাঁর নিজের যদি ইচ্ছে করে টাকা ওড়াবে, তবে আমার আপত্তি করা উচিত নয়, অন্যের সাধ-আহ্লাদকে নষ্ট করবার অধিকার আমার নেই। আজকাল জুয়ো অনেকেই খেলে, আমারও বেশ ভাল লাগে তাস খেলা। টাকা দিয়ে আমিও ক’দিন খেলেছি, কিন্তু এ এক বিচিত্র নেশা, খেললে কেবল খেলতেই ইচ্ছে করে। তাই একেবারেই দূরে থাকি জুয়োটুয়ো থেকে।

হঠাত্ করে আনিসের হাতে অনেক টাকা এসেছে। আমি জানি এই টাকার উত্স কী। তবে টাকা পেয়ে এবার সে অদ্ভুত একটি কাণ্ড করেছে, বলেছে সে বিয়ে করবে। বিয়ে করবার কারণ সে জানিয়েছে তার জন্য একটি ‘ঘরোয়া মেয়ে’ প্রয়োজন, যে মেয়ে ঘরে থাকবে, চাকরি-বাকরি করবে না, স্বামীর সেবাযত্ন করবে। 

 

মেয়ে নাকি ঠিকও হয়েছে একটি। শুনে আমি কোন আগ্রহ দেখাই না। যা হয় হবে। নিয়মিত অফিস করি, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করানো, রান্না করা, ঘর গোছানো সবই আমি নিঃশব্দে করে যাই। আনিস রাতে বাড়ি ফিরে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়েই বলে- ‘বিয়ে করব না কেন, নিশ্চয় করব। বিয়ে করবার বয়স তো আমার আর চলে যায়নি।’

হ্যাঁ বিয়ে আনিস ঠিকই করে, তবে বিয়ের আগে আমাকে ডিভোর্স দেয়। ডিভোর্স লেটারে আমার দোষ উল্লেখ করে আমি দুশ্চরিত্র মেয়ে, অফিসের যার-তার সঙ্গে আমি শুই। আমাকে ঘরে রাখা ঠিক নয়।

চমত্কার একটি মেয়ে। একুশ বছর বয়স। মফস্বলের সরল মেয়ে। বোকা বোকা, দেখতে সুন্দর। মেয়েটিকে সত্যি সত্যি আনিস একদিন বিয়েই করে বসে আমার সঙ্গে তের বছরের সম্পর্ক ঘুচিয়ে। আমি মেয়েটিকে দোষ দিই না, আনিসকেও না।

ছোট একটি বাড়ি ভাড়া করি। বাড়িতে দীপ আর দোপাটিসহ উঠি। আর আগের বাড়িতে নতুন বউসহ আনিস থাকে। আমাকে অনেকেই বলেছিল বাপের বাড়ি, ভাইয়ের বাড়ি কারও বাড়ি ওঠ গিয়ে। আমি রাজি হইনি। রাজি হইনি কারণ আমি জানি ওরা সবাই আনিসের ঢং-এ কথা বলবে, বলবে ‘স্বামী যখন চায়নি চাকরিটা তুই কর, তখন ছেড়ে দিলেই পারতিস। এত কেন মোহ চাকরির প্রতি, তবে আনিস যা অভিযোগ করে, ঠিকই করে নিশ্চয়ই।’

আনিস সুখেই আছে খবর পাই। দীপ আর দোপাটিকে নিয়ে যাবার জন্য সে লোক পাঠায়। আমি ওদের দিই না। তাছাড়া ওরা যেতে চায় না। খবর পাঠিয়েছে সে কেইস করবে, কেইসে নিশ্চয় জিতবে কারণ সন্তানের ওপর মায়ের অধিকার তো দুধ খাওয়ানো পর্যন্ত। দুধ ছাড়লেই সন্তান পিতার সম্পদ। এত অমানবিক আইন দেশে বিরাজ করে ভাবতেই আমার গা শিউরে ওঠে। আর তাছাড়া ছেলেমেয়েদের ও নিতেই বা চায় কেন। ওর এখন নতুন ছেলেমেয়ে হবে। ওর এখন ঘরোয়া মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার। ওই সংসার আগের ঘরের ছেলেমেয়েরা ধুলো-পায়ে ঢুকবে- এ তো আনিসের পছন্দ হবার কথা নয়। সম্ভবত আমাকে কষ্ট দেওয়াই ওর আসল উদ্দেশ্য।

আমি চাকরিটি করেই যাচ্ছি। বেতনের পয়সায় বাড়িভাড়া এবং বাকি খরচ চলে যায়। দীপকে নিয়ে গেছে আনিস, দোপাটি আমার কাছে। দোপাটি যেহেতু মেয়ে, ওকে নেবার আগ্রহও কম ছিল আনিসের। দোপাটির লেখাপড়ার খরচ জোগাতে আমার কষ্ট হয় খুব। আমি চাচ্ছি না ওকে এখনকার স্কুল ছাড়িয়ে কোনও কম বেতনের স্কুলে ভর্তি করাতে। দোপাটি অবশ্য একদিন নিজেই বলে- ‘মা, আমরা না হয় প্রতিদিন মাছ মাংস না খেলাম, আমি কিন্তু আলু ভর্তা খুব পছন্দ করি।’

ও কেন এ কথা বলে, আমি বুঝি। আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে ও আমার টাকা বাঁচাতে চায়। আমাকে টাকা পয়সা নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা করতে দিতেও রাজি নয়। আমরা, আমি আর দোপাটি সলাপরামর্শ করে খরচ অনেকটা কমিয়ে আনলাম সংসারের। এমডি’কে একদিন জানালাম আমি যেহেতু একা থাকি এবং আমাকেই সব খরচ জোগাতে হয়, আমার বেতন আরও কিছু বাড়িয়ে দিলে আমার কিছু উপকার হয়।

এমডি চোখ কপালে তুলে বললেন- ‘কেন, একা থাকেন কেন? আনিস সাহেব কোথায়?’

-‘ও তো আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।’

-‘কেন?’

-‘এর মধ্যে আরেকটি বিয়েও করেছে।’

-‘অ্যাবসার্ড। বলছেন কী আপনি! আর আপনি একা থাকবেন কী করে! একা একটি মেয়ে মানুষের পক্ষে কি বেঁচে থাকা সম্ভব?’

এমডি আমাকে অবাক করলেন। তিনি আমার স্বামীহীনতাকে মোটেও ভাল চোখে দেখছেন না। দিন দিন আমার সঙ্গে তাঁর সংঘাত বেড়ে যায়। চোখ কুঁচকে একদিন বললেন- ‘আপনাকে তো ভদ্র মেয়ে বলেই জানতাম। আনিস সাহেব কেন আপনাকে ডিভোর্স দিল? পুরুষ মানুষ কি আর সহজে কাউকে ডিভোর্স দেয়?’

সমাজে সবার মুখে এই একই ধরনের কথা। লাট সাহেব থেকে চাকর পর্যন্ত। আমি যাব কোথায়! অফিসের হেডক্লার্ক মাসুদ সাহেব, যে আমাকে সবসময় খুব সমীহ করে চলত, সে একদিন বলল- ‘আপা কোথায় বাসা নিয়েছেন, একদিন আপনার হাতের রান্না খেতে যাব।’ বলেই হা হা করে হাসতে লাগল। তারপর আমার মনে হল আমার একটু গা ঘেঁষেও যেন সে দাঁড়াল।

আমি নতুন চাকরি খুঁজতে লাগলাম। ভাল একটি চাকরি পেয়েও গেলাম গুলশানের এক বড় অফিসে। এক্সপেরিয়েন্সটা কাজে দিয়েছে। ভাবছি এখানেও যদি ওরকম হয় তবে আর অভিমান করে আবার নতুন চাকরি খুঁজব না। প্রতিবাদ করব। স্বামী ছাড়াও যে বেঁচে থাকা যায় এ কথা আমাকে প্রমাণ করতেই হবে। সঙ্গে স্বামী থাকাই যে ভাল এবং ভদ্রমেয়ের পরিচয় আর স্বামী না থাকা যে খারাপ মেয়ের লক্ষণ তা ঠিক নয়। আমাকে প্রতিবাদ করতে হবে। আর খারাপ ভালর যে বিচার— তাও আমার বড় অদ্ভুত লাগে।

নতুন চাকরিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। বেতন ভাল। তাছাড়াও বিকেলে একটি হ্যান্ডিক্রাফটের দোকানে সেলসগার্লের কাজ নিয়েছি। দোপাটিকে দু’জন টিচারের কাছে পড়াতে পারছি। আলু ভর্তা সবসময় থাকছে না, মাছ মাংসও পাতে আসছে। মানুষের জীবন আসলে এক উত্তাল সমুদ্র, ঢেউ কোথাও থেমে থাকে না, গতিময় এবং প্রাণময় জীবন মানুষের। একটি যুবকের সঙ্গে এর মধ্যে পরিচয় হয়, নতুন অফিসে আমার সহকর্মী। বয়সে আমার চেয়ে দু’বছরের ছোট। সেই যুবকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে হতে আমার এমন হয় যে, তার সঙ্গ আমার খুব বেশি ভাল লাগে। বাড়িতেও সে আসে। একদিন সে আমার দু’কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল- ‘কী মমতা, আমাকে ভালোবাসো?’

আমি চোখ বুজে উত্তর দিলাম ‘হাঁ।’

তারপর দু’জনই আমরা আমাদের মন আর শরীরের প্রয়োজনে বিছানায় যাই। এই সম্পর্কের জন্য আমার কোনও লজ্জা বা সঙ্কোচ হয় না। যুবকের নাম কায়েস। কায়েস আমাকে ভালোবাসে, আমিও কায়েসকে। কায়েসের বউ বাচ্চা আছে, ওদের প্রতি সে যথেষ্ট আন্তরিক। তার আন্তরিকতা আমাকেও মুগ্ধ করে। কায়েসের  সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে দোপাটিকে আমি বলেছি- ‘ও আমার বন্ধু। ওকে আমার স্বামী করব না কখনও। তবে বন্ধুত্বের সম্পর্কটি কতদূর যায় না যায়, সে একেবারেই আমার ব্যক্তিগত।’ দোপাটি মাথা নেড়ে হেসেছে। অর্থাত্ মা, তোমাকে আমি ভালবাসি। তুমি তোমার যা ভাল লাগে, কর।

দীপকে হোস্টেলে দিয়ে দিয়েছে আনিস। নতুন ঘরে তার বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে। দোপাটিও বড় হয়েছে। কলেজে পড়ে। আর আমি সব মিলিয়ে ভাল আছি। চাকরি থেকে ফিরে দোপাটির সঙ্গে গল্প করা, গান শোনা, পড়বার জন্য ওকে ভাল ভাল জ্ঞানবিজ্ঞানের বই কিনে দেওয়া এগুলো করি। কায়েস জার্মানি চলে গেছে চাকরি নিয়ে। কায়েস, আনিস ইত্যাদিরা আসে এবং যায়। এদের জন্য নিজের জীবন থামিয়ে রাখলে চলে না। আমার জীবন আমার ছাড়া আর কারওর নয়। জীবনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এই কথাটি আমি খুব গভীর করে অনুভব করি।

     লেখক : নির্বাসিত লেখিকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর