সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

পৌর নির্বাচন ও বিএনপির রাজনীতি

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

পৌর নির্বাচন ও বিএনপির রাজনীতি

৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ২৩৪টি পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে অফিশিয়ালি দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। অর্থাৎ দল থেকে মনোনীত চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। কাউন্সিলররা অফিশিয়ালি দলীয় প্রার্থী ছিলেন না। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ২৩৪টি পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় এটিকে এক প্রকার মিনি পার্লামেন্ট নির্বাচন হিসেবে দেখেছেন অনেকে। বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ ২০টি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নেয়। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ হওয়ার পর থেকে শুরু এবং তারপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটার পর একটা ভুল ও হঠকারী কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৫ সালের শেষের দিকে এসে সাংগঠনিকভাবে বিএনপির যে অবস্থা দাঁড়ায় তাকে এক কথায় লেজেগোবরে অবস্থা বললেও কম বলা হয়। তাই দলীয় ভিত্তিতে পৌর নির্বাচন ঘোষণার পর বিএনপির জন্য সৃষ্টি হয় উভয় সংকটের পরিস্থিতি। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে হেরে গেলে, যার আশঙ্কা প্রবল তাতে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস হওয়ার ধুয়া তুলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি অসার হয়ে যায়। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে লাভ তো নেই বরং তৃণমূল পর্যায়ে দলকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। এ রকম একটা দলীয় পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বোধহয় মন্দের ভালো হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় ও উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ পায় এবং স্থানীয় নির্বাচনে সবসময়ই যে রকম গোলযোগ এবং অনিয়ম হয় সেটিকে সম্বল করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আগের মতো পক্ষপাতের অভিযোগ অব্যাহত রাখারও সুযোগ বহাল থাকে। ভোটের দিন এবার মিডিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। যেখানে যে রকম অনিয়ম গোলযোগ হয়েছে তার প্রতিটি ঘটনা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তুলে ধরেছে। পরের দিন  বড় বড় পত্রিকায় সব অনিয়মের সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে নয়, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গণ্ডগোল হওয়ায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের আর কোথাও বড় আকারের হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিগত সময়ে স্থানীয় নির্বাচনে এর থেকে অনেক বেশি সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো জায়গায় ভোট কেটে নেওয়ার এবং অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রতিবেদন পত্রিকায় এসেছে। এরকম গোলযোগ ও হস্তক্ষেপের ঘটনা মোট কতটি কেন্দ্রে ঘটেছে সেটি পত্রিকাভেদে কিছুটা হেরফের আছে। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৬১টি কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করেছে একটি পত্রিকা। তবে ২৬১টি কেন্দ্রের সব জায়গায় গোলযোগ ও অনিয়ম, এ দুটি বৈশিষ্ট্য একই কেন্দ্রে দেখা গেছে তা নয়। কোথাও শুধু গোলযোগ হয়েছে, অনিয়ম হতে পারেনি। আবার অনিয়ম হয়েছে, গোলযোগ হয়নি এমনও আছে। দুইশ থেকে আড়াইশ কেন্দ্রের অনিয়ম ও গোলযোগের প্রতিবেদনে পত্রিকার পাতা বোঝাই, বাকি সাড়ে তিন হাজার ভোটকেন্দ্রে যে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট হয়েছে তার দৃশ্য স্বাভাবিক কারণেই পত্রিকায় আসেনি। কারণ ভালো ঘটনা সাধারণত সংবাদ মূল্য বহন করে না। সর্বোচ্চ সংখ্যক ধরে হিসাব করলেও মোট সাড়ে তিন হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে শতকরা হিসাবে গোলযোগ হয়েছে মাত্র ৭.৩ ভাগ কেন্দ্রে। ভোট স্থগিত হয়েছে ৫১টি কেন্দ্রের, যা শতকরা হিসাবে একেবারেই নগণ্য। উল্লিখিত গোলযোগ ও অনিয়মের ঘটনাকে স্বাভাবিক, নাকি অস্বাভাবিক বলা হবে সেটি একটি প্রশ্ন হতে পারে। কেউ বলতে পারেন জিরো টলারেন্স, একটি গোলযোগও হতে পারবে না। আর জিরো টলারেন্স না হলে কোন মাত্রা পর্যন্ত স্বাভাবিক বলা হবে তা নিয়েও বিতর্ক হতে পারে। তবে উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশের স্থানীয় নির্বাচনের উদাহরণ, স্থানীয়ভাবে প্রভাব-প্রতিপত্তি বজায় রাখার দ্বন্দ্ব, বাংলাদেশের রাজনীতির চরম বৈরী বাস্তবতা এবং বিগত সময়ের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনের গোলযোগ অনিয়মকে কেউ অস্বাভাবিক বলতে পারবেন না। অন্তত একশ্রেণির স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞের রক্তের গঙ্গা বয়ে যাওয়া এবং ভয়ানক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ২৮টি সংগঠনের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, যতটুকু অনিয়ম হয়েছে তা পুরো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। কারণ যতটুকু গোলযোগ, অনিয়ম হয়েছে সেটি ভোটের সার্বিক ফলের ওপর তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলার কথা নয়। গত শতকের নব্বই দশকের শুরু থেকে গত প্রায় ২৫ বছরে ভোট পড়ার ও প্রাপ্তির একটা প্যাটার্ন গড়ে উঠেছে। ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন অফিশিয়ালি সম্পূর্ণ দলীয়ভাবে, দলীয় পরিবেশ ও আমেজে হয়েছে এবং দলের মার্কা বিবেচনায় মানুষ ভোট দিয়েছে, যেমনটি হয়ে থাকে জাতীয় নির্বাচনে। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এ চারটি জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে অন্তত দলীয় বলয়ের বাইরের মানুষ ভালো ও গ্রহণযোগ্য বলে উদাহরণ দিয়ে থাকেন। এ চারটি নির্বাচনে যথাক্রমে শতকরা ৩০.৮০, ৩৭.৪৪, ৪০.২১ এবং ৪৮.০৪ ভাগ ভোট পায় আওয়ামী লীগ, যার গড় করলে দাঁড়ায় ৩৮.৯৪ ভাগ। অন্যপক্ষে একইভাবে যথাক্রমে প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৩০.৮১, ৩৩.৬০, ৪০.৮৬ এবং ৩২.৫০ ভাগ ভোট পায় বিএনপি, যার গড় করলে দাঁড়ায় ৩৪.৪৪ ভাগ।

অর্থাৎ গড়ে প্রায় শতকরা ৪ ভাগের ঊর্ধ্বে সবসময় ভোট বেশি পেয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এ চারটি নির্বাচনের শেষ তিনটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ৭৫ ভাগের ঊর্ধ্বে এবং ২০০৮ সালে ছিল সর্বোচ্চ ৮৭.১৩ ভাগ। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র শতকরা দশমিক ৬৫ (০.৬৫) ভাগ বেশি ভোট পেয়ে আসন বেশি পায় শতকরা ৪৭ ভাগ, ১৩১ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেলায়ও প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটে। এবার ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনের প্রদত্ত ভোট ও দলগতভাবে প্রাপ্তির প্যাটার্নের দিকে তাকালে দেখা যায় আগের দলীয় নির্বাচন থেকে বড় কোনো পার্থক্য নেই। মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৫১.৫৭ ভাগ ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগ, আর বিএনপি পেয়েছে ২৮.১৫ ভাগ। এতে দেখা যায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৩২.৫০ ভাগ প্রাপ্ত ভোটের পরিবর্তে পৌর নির্বাচনে ৪.৩৫ ভাগ কম পেয়েছে বিএনপি। ঠিক এই ভোটগুলো চলে গেছে আওয়ামী লীগে, যার জন্য ২০০৮ সালের জাতীয় পরিষদে প্রাপ্ত ভোটের থেকে ৩.৫৭ ভাগ ভোট বেশি পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন দেখা প্রয়োজন এই যে প্রায় চার ভাগ ভোট বিএনপির কমে গেল এবং আওয়ামী লীগের বেড়ে গেল তার পেছনে কোনো যুক্তি আছে কিনা। এক. বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ মিত্র, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা, বর্তমান এলডিপি নেতা কর্নেল অলি আহমদ ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বলেছিলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততাই বিএনপির বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ (সমকাল-৪ জানুয়ারি, ২০০৯)। গত সাত বছরে এ অবস্থান থেকে বিএনপির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং পৌর নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বেগম খালেদা জিয়া ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলায় তার মুখে জামায়াত, রাজাকার ও পাকিস্তানের কথারই প্রতিধ্বনি শুনেছেন বাংলাদেশের মানুষ। একই সময়ে দলের বড় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নির্বোধ বলেছেন। দুই. দল মত নির্বিশেষে দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি চায়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় নিজামী, সাঈদী, সাকাকে রাজবন্দি দাবি করে তাদের মুক্তি চেয়েছেন। ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে মওদুদ আহমদ ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বেগম জিয়ার উপদেষ্টা ব্যারিস্টার খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এখন যুদ্ধাপরাধী বিচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার বিচার করা হবে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, ইতিমধ্যে চারজনের ফাঁসি কার্যকর করেছে। তিন. ২০১১ সাল থেকে বিএনপি একের পর এক হঠকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেওয়া এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছে। যেমন— ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র, যা আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কার্যকর হয় না। এ বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ফোনালাপ ও দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনার কথোপকথন ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারিতে একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে প্রকাশিত হয়। তারপর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাঈদীর ফাঁসির প্রতিবাদে জামায়াতের জাতীয় পতাকা পোড়ানো, শহীদ মিনার ভাঙা ও ধ্বংসযজ্ঞে বিএনপির যোগদান, হেফাজতের ১৩ দফা সমর্থন ও ধ্বংসযজ্ঞে যোগদানের নির্দেশ, মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের নকল বিবৃতি, ভারতের বিজেপি নেতা অমিত শাহর ফোন করার মিথ্যা বিবৃতি, ইত্যাদি সব হঠকারী কর্মকাণ্ড ও দেউলিয়াত্বের কারণে জনগণের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার. ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রাক্কালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বিএনপিকে দেওয়ার কথাসহ প্রধানমন্ত্রীর আপসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং টেলিফোনে বেগম খালেদা জিয়ার ভাষা ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আপস বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, বেমানান প্রতিশোধ প্রতিহিংসার প্রতিচ্ছবি মানুষ দেখেছে। নির্বাচন প্রতিহতের নামে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা এবং আবার ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস অবরোধের নামে পেট্রলবোমার বিভীষিকার কথা মানুষ সহজে ভুলতে পারবে না। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার অজুহাতে এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবৈধ বলে উত্খাতের নামে সব আপসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষের প্রাণহানি করা হয়। এখন সেই সরকার ও সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে দলীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় প্রমাণিত হয় বিএনপির ভুল ও হঠকারী রাজনীতির কারণে ২০১৪-২০১৫ সালে কয়েকশ নিরীহ, অসহায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আরও অনেক কারণ আছে, তবে উপরে এক থেকে চার ক্রমিকে উল্লিখিত কারণে ২০০৮ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট থেকে শতকরা মাত্র চার ভাগ ভোট কমে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলা যায় না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি কী এমন কোনো ইতিবাচক কাজ করেছে যার জন্য বিএনপির প্রতি মানুষের অতিরিক্ত আকর্ষণ সৃষ্টি হতে পারে? বিএনপি কি তাদের কর্মকাণ্ডে বা রাজনীতিতে ভবিষ্যতের কোনো দিকনির্দেশনা মানুষের কাছে তুলে ধরেছে? নিকট অতীতে বিএনপি পূর্ণ দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। বিএনপি আত্মবিশ্বাসী হলে নিজেদের দুই মেয়াদ এবং আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদের মধ্যে উন্নয়নের সব সূচকের একটা তুলনামূলক চার্ট তৈরি করে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের জায়গা দুটি। প্রথমত, কৃষি উপকরণের ব্যবস্থাপনা ও খাদ্যদ্রব্যের সহজলভ্যতার বিষয় এবং দ্বিতীয়ত, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি। এই দুটি জায়গাতেই আওয়ামী লীগ সরকার অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। মূল কথা হলো— গোড়ায় গলদ রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি আগামী দিনেও এগোতে পারবে না। গত শতকের সত্তর-আশির দশকে জিয়া-এরশাদের রাজনীতি, নব্বই দশকের শুরুতে, এমনকি ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপির রাজনীতি আজ ২০১৫ সালে এসে অচল। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির উত্কর্ষতায় সব কিছু অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। এর মধ্যে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতির সমীকরণে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে সব মিথ্যাচার, বিকৃতি, ভণ্ডাচারকে ভেদ করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম আধুনিক, প্রগতিশীল ও একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী মুক্তিযুদ্ধের দর্শন, আদর্শ, ঐতিহ্য এবং ঔজ্জ্বল্যের প্রতি প্রবলভাবে আকর্ষিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে সাম্প্রদায়িক, ধর্মাশ্রয়ী এবং অপাঙেক্তয় পাকিস্তানপন্থি রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে। নিজেরা বললে হবে না, বাংলাদেশের মানুষ যেন তাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল বলতে পারে তার জন্য যা করণীয় তার সবকিছু বিএনপিকে করতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর