বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

টেকসই উন্নয়ন ও আগামী দিনের নেতৃত্ব

টি. আই. এম. নূরুল কবীর

টেকসই উন্নয়ন ও আগামী দিনের নেতৃত্ব

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অর্জনের সম্ভাবনার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে বেশ প্রতিশ্রুতিশীল গতিপথ ধরে এগোচ্ছে। সামাজিক উন্নয়ন সরাসরি আর্থিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একই সঙ্গে আবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে নৈতিক সমন্বয় এবং সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্যের প্রশ্নও জড়িত। বাংলাদেশের সীমিত ভূমি এবং স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের  বিপুলসংখ্যক তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের অন্যতম বড় সম্পদ।

সাম্প্রতিক বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই, বিশ্ববাজারে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির প্রাধান্য ক্রমশ বাড়ছে। প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির প্রধান দুই চাবিকাঠি। বিশ্বে আজ যারা উদ্ভাবনানির্ভর সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণে সাফল্য দেখাচ্ছে বয়সে তারা তরুণ। মেধার বিচারে আমাদের দেশের তরুণরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছে বলা যাবে না। ও লেভেল, এ লেভেল পরীক্ষায় বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়ার নজির দেখাচ্ছে। অনুন্নত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে লেখাপড়া করেও আমাদের ছেলে-মেয়েরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে গিয়ে পুরস্কার নিয়ে আসে। তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বাঙালি ছেলে-মেয়েরা বিশ্বে বর্তমানে সুনাম অর্জন করছে।  

আজ যাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর, আগামী ২০ বছর পর তারাই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের হাল ধরবে— বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দান করার উপযুক্ত হয়ে উঠবে। উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কি সোনার ছেলে-মেয়েদের জন্য আগামীতে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য-পথে নেতৃত্ব দানের উপযুক্ত হয়ে ওঠার রাস্তা প্রশস্ত করতে পারছি?

উপরের প্রশ্ন নিয়ে সত্যি সত্যি মাথা ঘামানোর সময় এখনই। কেবল আলোচনা বা তর্কবিতর্কের পর্যায়ে নয়; আজকের পযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের গতির সঙ্গে তাল রেখে আমাদের তরুণ প্রজন্মের অগ্রগতির রাস্তা প্রশস্ত করতে আমরা যদি অচিরেই সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অবহেলা করি, আগামীতে হয়তো অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা ব্যাহত হতে পারে উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে। সেই সঙ্গে সামাজিক নৈরাশ্য, নৈতিক বিভ্রান্তি এবং সাংস্কৃতিক লক্ষ্যহীনতার গুরুতর সংকট জাতীয় পর্যায়ে আমাদের চরম মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা অসম্ভব নয়।  

জাতীয় পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সব পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের যথাযথ বিকাশের প্রশ্ন যুক্ত। সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ ‘খ’ ধারায় জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের সব অংশকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারার অন্তর্ভুক্ত করে সবার জন্য নির্বিশেষে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অন্যদিকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (গউ)ে উত্তর জাতিসংঘে গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (ঝউ)ে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য বৈষম্যমুক্ত মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং সব বয়সের নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা বিধান করা ও  সর্বাঙ্গীণ উত্পাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের অধিক জনগোষ্ঠীর বয়স ২৫ বছরের নিচে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে কোনো পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপের ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক। দেশের সুবিশাল তরুণ প্রজন্ম কোন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যক্তিজীবন, সামাজ জীবন এবং জাতীয় জীবন মূল্যায়ন করছে প্রথমত তা স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বুঝে দেখা খুবই জরুরি।

যখন আমরা তরুণ ছিলাম সে বয়সে যে ধরনের আর্থ-সামাজিক পরিবেশে নিজেদের ভবিষ্যত্ গড়ার সংকল্প গ্রহণ করি, বা যে ধরনের স্বপ্ন গড়ি, আজকের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের বাস্তবতায় তখনকার সেই আর্থ-সামাজিক পরিবেশ এক অর্থে অতীতের উপকথা যেন। আমাদের তরুণ বয়সে যখন টেলিভিশনের পর ভিসিপি এলো, আমাদের কাছে সেটাই ছিল এক অভিনব প্রযুক্তি। কিংবা ধরা যাক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফ্যাক্স মেশিন ছিল আমাদের দৃষ্টিতে মুগ্ধ হওয়ার মতো এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। অথচ চলমান তথ্য-প্রযুক্তি মাত্র কয়েক দশক আগের সেসব পৃথক পৃথক প্রযুক্তিকে একটি অভিন্ন যন্ত্রের মধ্যে সন্নিবেশিত করেছে। আজকের কোনো তরুণ যখন কোনো ভিডিও দেখতে চায়, কিংবা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে হালনাগাদ কী ঘটল জানতে চায়, অথবা সে যখন প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য খোঁজে, নতুবা পৃথিবীর যে কোনো কোনায় পরিচিত কিংবা অপরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়, নিজের কম্পিউটারে বসে অথবা স্মার্ট-ফোন টিপে বিনা কসরতে কাজ সেরে নিতে পারে। ফলে জীবনকে দেখার আমাদের যে অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি তার থেকে আজকের তরুণ প্রজন্মের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেকাংশে ভিন্ন হবে তা স্বাভাবিক। জীবনের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা তা থেকে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা কি অর্থে কতখানি আলাদা তা বাস্তবানুগ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মূল্যায়ন করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত এবং জাতীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ না করলে চলে না, আজকের বাণিজ্যমুখী পরিবেশে কিছু সংখ্যক তরুণ হয়তো নানামুখী বিভ্রান্তিতে আক্রান্ত হয়ে বিপথগামী হচ্ছে। সম্ভাবনাময় এই তরুণদের ভুল পথে যারা চালিত করছে তারা উন্নয়নের মর্ম জানে না এবং মানবিক উত্কর্ষের গঠনমূলক লক্ষ্য সম্পর্কে তারা নিরেট অন্ধ। আমাদের লক্ষ্য হওয়া চাই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সমন্বিত এক গঠনমূলক ধারা সৃষ্টি করা, যে পরিবেশের মধ্যে তরুণ প্রজন্ম ইতিবাচক মন-মানসিকতা নিয়ে ব্যক্তিগত মেধার উত্কর্ষ সাধন করতে পারবে এবং জাতীয় উন্নয়নে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার উপযুক্ত হয়ে বেড়ে উঠবে।  

আমি যখন আমার ছেলে বা মেয়েকে দেখি, লক্ষ্য করে বুঝতে পারি, জীবনের সম্ভাবনাকে তারা চলমান বৈশ্বিক বাস্তবতার আলোকে মাপে। তার সামনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিশেষ করে ইন্টারনেট পৃথিবীকে একটি বাধাহীন বিচরণক্ষেত্রে রূপান্তর করে দিয়েছে। ভূগোলকে খণ্ড খণ্ড ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে পৃথিবীর রাজনৈতিক বাস্তবতা। ইন্টারনেটের জানালা দিয়ে দেখলে বিশ্ব একটি বন্ধনহীন অভিন্ন পৃথিবী। ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত আজকের তরুণ প্রজন্মের কৌতূহল, আগ্রহ ও উদ্দীপনা স্থানিক সীমাবদ্ধতা দ্বারা বাধাগ্রস্ত নয়। বরং বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনার দরজা তার দৃষ্টির সামনে উন্মুক্ত।  

নতুন প্রজন্মকে আগামী দিনের নেতৃত্বদানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে। দেশে এক লাখের অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে দেড় কোটিরও অধিক শিশু শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। শিক্ষাদানের জন্য ৩ লাখের বেশি শিক্ষক নিযুক্ত রয়েছেন। সমাজের সব শ্রেণির শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও তিক্ত বাস্তবতা হলো, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা এখন পর্যন্ত সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। এখনো আমরা দক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক তৈরি করার কার্যকর উপায় নিরূপণ করতে সক্ষম হইনি।    

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক স্তরে যথাযথ তদারকির চরম অভাব বিরাজমান। হালনাগাদ অর্থনৈতিক উন্নয়ন মূলত কৃষির উত্পাদনের বাইরে নিম্ন-দক্ষতাসম্পন্ন শ্রম, যেমন পোশাক খাতের মতো রপ্তানিমুখী উত্পাদন ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানার ওপর নির্ভর করে আসছে। উন্নয়ন লক্ষ্যের পরবর্তী সিঁড়িতে উঠতে হলে আমাদের সৃজনশীল উত্পাদনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, যার জন্য ব্যাপক হারে দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বার্থে প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুসারে দক্ষ এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযুক্ত সৃজনশীল মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সময় এসেছে শিক্ষার লক্ষ্য উন্নীত করার। ‘সবার জন্য শিক্ষা’-এর পাশাপাশি মানসম্পন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং সৃজনশীল উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা দেশের সামনে এখন এক অনিবার্য লক্ষ্য।

কিছু দিন আগেও আমাদের দেশের তরুণ ছেলে-মেয়েরা মা-বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো একটি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে থাকত। সে চিত্র এখন বদলে গেছে। বর্তমানের তরুণরা সমসাময়িক বাস্তবতা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে অকপটে সোচ্চার। বিশ্বের গতির সঙ্গে ধাপ মিলিয়ে চলতে পারার ব্যাপারে তারা উন্মুখ। এখনকার তরুণরা যেসব বিষয়ে বাস্তবিক কৌতূহল অনুভব করে সেসব বিষয় নিয়ে পাঠ গ্রহণ করতেই বেশি আগ্রহী। সাম্প্রতিককালের নতুন বিষয়াদিতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় এবং অধিক সম্ভাবনাপূর্ণ পেশায় যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। তাদের বিষয় নির্বাচন, স্বাপ্নিকতা এবং জীবনযাত্রার ধরন থেকে আসলে প্রকাশ পায় তরুণ প্রজন্মের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সংকল্পবদ্ধতার প্রত্যয়। যে কারণে আজকের তরুণ প্রজন্ম নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত পেশায় অগ্রসরতা লাভ করার ব্যাপারে ভীষণ সক্রিয় এবং তার জন্য ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করতে তারা দিনরাত প্রস্তুত। 

প্রথাগত পেশার মধ্যে তরুণরা বর্তমানে ঘুরপাক খেতে নারাজ। যে কেন সৃজনশীল খাত এখনকার তরুণদের বেশি আকৃষ্ট করে। অনেকে  ইদানীং নিজেদের আগ্রহ অনুসারে সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করার ব্যাপারে যথেষ্ট ঝোঁক রাখে। নানা প্রকার প্রযুক্তিনির্ভর ক্ষুদ্র উদ্যোগ, অনলাইন বাণিজ্য এবং আরও নানা ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করছে তরুণরা বর্তমানে। তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনা ও সৃজনশীল উদ্যোগকে যথাযথ আর্থিক, বাণিজ্যিক এবং সামাজিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উত্সাহিত করার নীতি গ্রহণ করা জাতীয় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে গুরুত্ববহ পদক্ষেপ, যা কালক্ষেপণ না করে আমাদের অচিরেই গ্রহণ করা দরকার। 

বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে আগামীতে বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির অন্যতম হাতিয়ার হলো প্রযুক্তি। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা অনুসরণ করে অগ্রসর হচ্ছে। অথচ বাস্তবতার পরিহাস হলো, প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার রোধ করতে গিয়ে আমাদের সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দ্বিধা করছে না।

বর্তমানে বিশ্বে সবরকম কাজের জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতা ক্রমে বেড়ে চলেছে। শুধু যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনই মিটায় না ইন্টারনেট; বিশ্বে আজ ইন্টারনেট অব থিংস (ওড়ঞ) নিয়ে কথা হচ্ছে। অর্থাত্, ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে জাতীয় অবকাঠামোর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ, যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণসহ বহুবিধ প্রয়োজনীয় কাজ কম্পিউটারের সাহায্যে তত্ক্ষণাত্ এবং সূক্ষ্মভাবে সেরে ফেলা সম্ভব হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। চলমান বাস্তবতার আলোকে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর যথাযথ নজরদারি বাড়াতে হবে বটে, কিন্তু তার জন্য বরং প্রযুক্তিগত উত্কর্ষ ও দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তির গঠনমূলক ব্যবহার উত্সাহিত করার মাধ্যমে প্রযুক্তির সুফল লাভ করার জন্য উপযুক্ত নীতিমালা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।   

আমার নিজের ছেলে ও মেয়েকে দিয়ে আমি বুঝতে পারি, বিশ্বায়নের জোয়ারে উদ্বেল আজকের সৃজনশীল তরুণরা আমাদের কোনো কথার প্রতি ততক্ষণ পর্যন্ত মনোযোগী হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তাদের আগ্রহের জের ধরে কথা বলি। সামাজিক এবং রাজনৈতিক নানা অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে চায়। তারা যুগোপযোগী অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি নিবিষ্ট এবং নানা ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেতে চায়। আজকে যারা তরুণ সামনে তারাই দেশের ভবিষ্যত্। বর্তমানে নতুনরা যেসব বিষয়ের প্রতি আগ্রহী এবং মনোযোগী তাতে বিধৃত রয়েছে তাদের প্রত্যাশা, স্বপ্নময়তা এবং উদ্দীপনার প্রতিফলন।

দেশ গড়ার ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা সর্বকালেই অগ্রগামী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের নির্ভীক অবদানের কথা স্মরণ করে আমরা সে সত্য সহজে বুঝতে পারি। তরুণ প্রজন্ম দেশ ও জাতির শক্তি— প্রকৃতপক্ষে অনন্য এক অমূল্য সম্পদ। সে অমূল্য সম্পদ যথাযথ লালন করে আমরা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ গড়ে তুলতে পারি।  দেশের প্রতিটি খাতে আজকের তরুণ প্রজন্ম ক্রমে শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়ে উঠবে, আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে, সেটিই হওয়ার কথা সবার কাম্য।

লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি ও উন্নয়ন নীতিবিষয়ক বিশ্লেষক [email protected]

সর্বশেষ খবর