শিরোনাম
বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সব সন্তানকে সমান চোখে দেখতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

আল্লাহতায়ালা আমাদের সন্তান দান করে পরীক্ষা করেন। তিনি কাউকে ছেলে দান করেন। কাউকে মেয়ে দান করেন। কাউকে পুত্র-কন্যা উভয়টি দান করেন। কাউকে এক সন্তান এবং কাউকে একাধিক সন্তান দান করেন। একাধিক সন্তানের বেলায় পিতা-মাতার দায়িত্ব সব সন্তানকে সমান দৃষ্টিতে দেখা। এক সন্তানকে অন্যের ওপর প্রাধান্য না দেওয়া। আমাদের দেশে সাধারণত কন্যা সন্তানকে অবহেলা করে পুত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কোনো কোনো পরিবারে দেখা যায়, মেয়ের সব চাওয়া পূরণ করা হয় না। অথচ ছেলে চাওয়া মাত্র সব কিছু হাজির করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের বৈষম্য করা কঠোরভাবে নিষেধ। হজরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, যার ঘরে কোনো কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করল আর সে তাকে কোনো কষ্ট দিল না, তাকে অপমানিত করল না এবং তার পুত্র সন্তানদের তার ওপর প্রাধান্য দিল না, আল্লাহ তাকে এই সন্তানের উসিলায় জান্নাতে দাখিল করবেন (মুসনাদে আহমাদ)। কোথাও কোথাও এক ছেলেকে আরেক ছেলের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। এটাও নিষেধ। হজরত নুমান ইবনে বশীর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, একবার তাঁর পিতা তাকে নিয়ে রসুল (সা.)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি আমার এ ছেলেটিকে একটি গোলাম দান করেছি। রসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তোমার সবগুলো সন্তানকেই এমন দান করেছ? পিতা উত্তর দিলেন, না। রসুল (সা.) তখন বললেন,  তা হলে এ গোলাম ফেরত নিয়ে নাও (বুখারি)। প্রিয় পাঠক! পিতা যেমন সব সন্তানের কাছ থেকেই ভালো ভালো ব্যবহার আশা করে, সন্তানরাও তেমন পিতার কাছ থেকে সমান আচরণের প্রত্যাশা করে। তাই সন্তানদের বেলায় এর ব্যতিক্রম করা মাকরূহ এবং এ ধরনের কাজ অনেক সময় পারিবারিক জীবনে কলহ ও তিক্ততা সৃষ্টি করে দেয়। এ বাস্তবতার নিরিখেই হাদিসে এমনটি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো কোনো সমাজে দেখা যায়, পিতা সব সম্পত্তি বা বেশির ভাগ সম্পত্তি এক সন্তানকে লিখে দেয়। অপর সন্তানদের ঠকানো হয়। এটাও নিষেধ। বরং সব সন্তানকে এই পরিমাণ স্বাবলম্বী করে যাওয়া উচিত যাতে তারা মানুষের কাছে হাত না পাতে। হজরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করিম (সা.) আমাকে রোগ শয্যায় দেখতে এলেন। তিনি হিজরত করে ছেড়ে যাওয়া ভূমিতে কারও মৃত্যুকে পছন্দ করতেন না। তাই তিনি বললেন, ইবনে আফরার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। (কেননা, সে মক্কায় মারা গেছে, তাই সে করুণার পাত্র।) আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি কি আমার সমস্ত মাল-সম্পদের ওসিয়্যত করে যাব? তিনি উত্তর দিলেন, না। আমি এবার বললাম, তাহলে অর্ধেক সম্পদের? তিনি উত্তর দিলেন, না। এবার আরজ করলাম, তাহলে কি এক-তৃতীয়াংশের? তিনি উত্তর দিলেন, এক-তৃতীয়াংশের করতে পার, আর এটাও তো বেশি হয়ে যায়। নিজের উত্তরাধিকারীদের সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া এর চেয়ে অনেক ভালো যে,  তাদের নিঃস্ব অবস্থায় ছেড়ে যাবে আর তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত বাড়িয়ে ফিরবে (বুখারি)।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর