সোমবার, ৭ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিকিৎসক ধর্মঘট

রোগীদের জিম্মি বানানো দুর্ভাগ্যজনক

চিকিৎসক ধর্মঘটে গত দুই দিন অচল হয়ে পড়েছিল খুলনার স্বাস্থ্যসেবা। দূরদূরান্ত থেকে শহরে আসা রোগীরা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। খুলনার তেরখাদা উপজেলা কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসককে মারধর করার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা এ ধর্মঘটে নামেন। তারা চিকিৎসকের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর দায়ে তেরখাদার এক আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা শাখাসহ চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট আরও দুটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। একজন চিকিৎসককে মারধর করার ঘটনা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। এ জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমনটিও প্রত্যাশিত। কিন্তু  নিন্দনীয় এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা ধর্মঘটের আশ্রয় নিয়ে হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা যেভাবে অনিশ্চিত করে তুলেছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কথায় কথায় ধর্মঘটে নামা চিকিৎসকদের একাংশের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে চিকিৎসক ধর্মঘট ঘটেছিল একাধিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলার দায়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে। চিকিৎসকদের একাংশ চিকিৎসাসেবার চেয়ে দলবাজিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। চিকিৎসা একটি মানবিক পেশা। চিকিৎসকদের ধর্মঘটের জন্য রোগীরা বিপন্ন হবেন তা মানবিক চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। চিকিৎসককে প্রহার করার প্রতিবাদে একদিন ধর্মঘট পালনের পর বিরতি দিয়ে আবারও ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের মাধ্যমে চিকিৎসকরা অপরাধীর বদলে নির্দোষ অসুস্থ মানুষদের যেভাবে কষ্ট দিয়েছেন তা দুর্ভাগ্যজনক। একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির অপরাধের জন্য জেলার লাখ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকাও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। চিকিৎসকদের ধর্মঘট এবং দোষী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা না হলে আরও বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি সত্ত্বেও তারা কেন বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেননি তা হতাশ হওয়ারই মতো। আইন এক্ষেত্রে নিজস্ব পথে চললে ধর্মঘট যে এড়ানো যেত তা সহজেই অনুমেয়। আমরা আশা করব খুলনার সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে পরিস্থিতি সম্মানজনক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর