শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারীকে অধিক মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নারীকে অধিক মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

আজকের পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখতে পাই কন্যাশিশু জন্মগ্রহণ করাকে অনেকেই নিজেদের জন্য অপমান মনে করেন। অনেকে আবার জাহেলি বর্বরতাকে হার মানিয়ে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বিশেষ পদ্ধতিতে ভ্রূণ হত্যার মতো কবিরা গুনাহও করে ফেলেন। তারা মনে করেন এ মেয়ে লালন-পালন বাবদ অনেক ব্যয় বহন করতে হবে। এমন চিন্তা ও কর্ম খুবই অন্যায়। আল্লাহ বলেন, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না। কারণ তোমাদের এবং তাদের রিজিক আমরাই দিই।’ (সূরা আন’আম : ১৫১)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল সব প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর।’ (সূরা হুদ : ৬)

ধর্মে নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য বা বৈষম্য নেই। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো পুরুষ বা নারী ইমানের সঙ্গে সৎ কাজ করলে অবশ্যই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি বিন্দু পরিমাণও অবিচার করা হবে না।’ (সূরা নিসা : ১২৪) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘কোনো পুরুষ বা নারী ইমানের সঙ্গে সৎকাজ করলে অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেব।’ (সূরা নাহল : ৯৭)। মহান আল্লাহর কাছে তাকওয়া ভিন্ন অন্য কোনো মানদণ্ড নেই যা দিয়ে একজন মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অর্জন করতে পারে। তাকওয়া অবলম্বনকারী পুরুষ-নারী যেই হোক তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে বড়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে, তারপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে করে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাবান সেই ব্যক্তি, যে বেশি আল্লাহ ভিরু-মোত্তাকি। (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১৩)।

ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবের অন্ধকার সমাজে নারীর প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করা হতো। নারী মানুষ নয়। নারীর কোনো অধিকার নেই। নারী হয়ে জন্মানোই যেন আজন্ম পাপ। কোরআনের ভাষায়— ‘যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তান জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তাদের চেহারা দুঃখ-ব্যথা ও অপমানে কালো হয়ে যায়। সে ভিতরে ভিতরে গুমড়ে মরতে থাকে। কন্যা জন্মের অপমানে সে সমাজ থেকে আত্মগোপন করে এবং লোকদের থেকে লুকিয়ে চলতে থাকে। সে ভাবতে থাকে গ্লানি সত্ত্বেও সে কি এই সদ্য প্রসূত কন্যা সন্তানকে রেখে দেবে নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে? কন্যা শিশু সম্পর্কে তাদের এমন সিদ্ধান্ত খুবই নিকৃষ্ট। (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)। আরবের প্রায় কন্যা শিশুকেই জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হতো। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এ নির্মমতার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘যখন জীবন্ত পুঁতে ফেলা কন্যা শিশুকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?’ (সূরা তাকভীর : ৮-৯)। তাফসিরবিদ সাইয়্যেদ আবুল আ’লা (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আয়াতের বর্ণনাভঙ্গিতে চরম ক্ষোভ ও ক্রোধের প্রকাশ লক্ষণীয়। যে নিষ্ঠুর পিতা-মাতা নিষ্পাপ শিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলেছে তাদের প্রতি আল্লাহর ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি এত বেশি হবে যে, তাদের কিছুই জিজ্ঞেস করা হবে না। বরং ছোট্ট শিশুকে জিজ্ঞেস করবে তাকে মাটিচাপা দেওয়ার কারণ কী। হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘বিচারক যখন অত্যাচারীকে প্রশ্ন না করে অত্যাচারিতকে প্রশ্ন করে তখন স্বাভাবিকভাবেই অত্যাচারী অপ্রীতিকর ও চরম লজ্জার মুখে পড়ে। মূলত কন্যা হত্যাকারীদের অপরাধ ও শাস্তির তীব্রতা বুঝানোর জন্যই এমনটি বলা হয়েছে।’ মুফতি শফী (রহ.) বলেন, ‘এ আয়াতের মাধ্যমে জাহেলি যুগে জীবন্ত কন্যা শিশু কবর দেওয়ার ঘৃণ্য প্রথাকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নারীদের প্রতি বৈষম্য রোধে যার যার অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। বিশ্বব্যাপী নারীরা আজ নির্যাতনের জাঁতাকলে পিষ্ট। এ অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ধর্মীয় এবং নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের মাহরাম মহিলাদের মাধ্যমে তাদের কাছে কোরআনের আহ্বান পৌঁছে দিতে হবে। পৌঁছে দিতে হবে শান্তি ও সুন্দর জীবনের আহ্বান। নারীদের জানাতে হবে— ‘নারীকে সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার দিয়েছে ধর্ম। নারীর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে কোরআন। এককথায় নারীকে রানীর সিংহাসনে বসিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ বলেন, ‘তারা অর্থাৎ নারীরা তোমাদের পোশাক আর তোমরা তাদের পোশাক।  (সূরা বাকারাহ : ১৮৭)। নারী দিবসের এই সময়ে আমরা সবাই নারী বৈষম্য রোধের শপথ নিই। মহান আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর