ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই ঘটছে হামলা, পাল্টা হামলা ও গোলাগুলির ঘটনা। হুমকি-ধামকিও চলছে সমানতালে। দেশের ইতিহাসে দলীয় প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথমবারের মতো। নির্দলীয় নির্বাচনের চেহারা তাতে পাল্টে গেছে স্বাভাবিকভাবে। তবে দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে প্রায় সর্বত্রই সরকারি দলের উপস্থিতিই শুধু অনুভূত হচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে বিরোধী দলের কেউ প্রার্থী হয়নি ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ প্রবচনকে অনুসরণ করে। প্রার্থী হওয়ার পর ঘোষণা দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘটনাও কম নয়। এহেন একতরফা নির্বাচনেও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও বিরোধীদলীয় প্রার্থী না থাকলেও বহু এলাকায় রয়েছে সরকারি দলের বিরোধী প্রার্থী। নিজেদের ঘাঁটিগুলোতে বিএনপি ও জামায়াতও নেমেছে শক্তভাবে। নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে দুর্বিনীতরা এমন কোনো উপায় নেই যা অনুসরণ করছে না। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১৮ মার্চ সংখ্যার এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মাঠে দুই হাজার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী’। গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সন্ত্রাসী পাইপগান, রিভলবার, বন্দুক, শুটারগান, পিস্তল, কাটা রাইফেল ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই ও জালভোটের মচ্ছব শুরু হতে পারে। নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেই মামলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এই কর্তব্যটি তারা যথাযথভাবে পালন করতে পারবেন কিনা সেটি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের ভ্রুকুটির কাছে ভোটাররা যথাযথভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা সেটিও বড় মাপের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক তাতে সরকারের লাভক্ষতি থাকার কথা নয়। বরং সুষ্ঠু নির্বাচন করা গেলে তাতে তাদের শিরস্ত্রাণে সাফল্যের পালক সংযোজিত হবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর যে আস্থার সংকট রয়েছে তারও অবসান ঘটবে। নিজেদের স্বার্থেই তারা এ বিষয়টি মনে রাখবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।