বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙেছে

শ্যালা নদীতে জাহাজ চলাচল বন্ধ প্রশংসাজনক

সুন্দরবনে কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবির পর অবশেষে কর্তৃপক্ষের কানে পানি ঢুকেছে। বিশ্বের বৃহত্তম বাঁদাবন জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনের সর্বনাশ এড়াতে শ্যালা নদীতে সব ধরনের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৫ মাস আগে শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবে তিন লাখ লিটার তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দরবনের গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যে নদী দূষণ ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। পরিবেশবিদরা দাবি তোলেন সুন্দরবনের নদী ও জলাশয়ে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কোর পক্ষ থেকেও সুন্দরবন সুরক্ষায় একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তারপরও কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন। কেউ কেউ পিঠে বেঁধেছি কুলো আর কানে দিয়েছি তুলো কলাকৌশলের অনুসরণ করে সমস্যা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কসরত করেন। সুন্দরবনপ্রেমীদের সামনে মুলো ঝুলিয়ে বলা হয় বিকল্প নৌপথ খনন করা হচ্ছে। সেটি চালু হলেই শ্যালা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ করা হবে। তাদের এই কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের কারণে গত ১৫ মাসে শ্যালা নদীতে বড় ধরনের তিনটি নৌযান ডুবি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ কয়লাবোঝাই জাহাজ ডুবির পর ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত শ্যালা নদীতে ডলফিনের দেখা মিলছে না। দূষণের কারণে ডলফিনগুলো শ্যালা নদী থেকে গভীর সাগরে আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আশার কথা কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ করেই বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তত্পর হতে শুরু করেছে। বিআইডব্লিউটিএ শ্যালা নদীতে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছে গত সোমবার থেকে। বনবিভাগ ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসন আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাহাজ ডুবির তদন্তে। ডুবে যাওয়া জাহাজের মালিকসহ ছয়জনকে আসামি করে বন বিভাগ ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলাও করেছে।  দেরিতে হলেও কর্তৃপক্ষের কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে ওঠার ঘটনা আশাজাগানিয়া। আমরা আশা করব বিশ্বের বৃহত্তম বাঁদাবনের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা তাদের এই জাগ্রত অবস্থা অটুট রাখবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর