মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুই মন্ত্রীর জরিমানা

আদালত সম্পর্কে সবাইকেই দায়িত্বশীল হতে হবে

আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীকে সাজা পেতে হলো। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ আদালত সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের মন্তব্যকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ অভিহিত করে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন। সাত দিনের মধ্যে এ জরিমানার টাকা দুটি নির্দিষ্ট দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করা না হলে তাদের সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আদালত অবমাননার মাধ্যমে দুই মন্ত্রী শপথ ভঙ্গ করেছেন। সাংবিধানিক পদে যারা অধিষ্ঠিত তারা সংবিধান রক্ষার শপথ নেন। আদালতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে তারা সে শপথের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। দুই মন্ত্রী তাদের বক্তব্যের জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও আদালত তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেননি। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আদালতে দুই মন্ত্রীকে একসঙ্গে সাজা দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে এরশাদ সরকারের আমলে এক মন্ত্রীকে সাজা পেতে হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালতের সাজার ফলে দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব নিয়েও ইতিমধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংবিধানে আদালত অবমাননার অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্তদের মন্ত্রিত্বের বিষয়ে কিছু লেখা নেই। তবে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মন্ত্রী হিসেবে থাকবেন কিনা তা একটি নৈতিক প্রশ্ন। মন্ত্রী হিসেবে যারা শপথ নেন, তাদের কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধান সুরক্ষার শপথ ভঙ্গ করলে নৈতিকভাবে পদে থাকার যোগ্যতা হারান। আদালতের রায়ের মাধ্যমে যেহেতু শপথভঙ্গের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে সেহেতু এটি সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রীর জন্য নৈতিক দায় সৃষ্টি করেছে। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকারের মন্ত্রীদের কর্তব্য সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। সে দায়িত্বশীলতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে তারা নিজেদের পাশাপাশি সরকারের জন্যও বিড়ম্বনা বয়ে এনেছেন । আমরা আশা করব, সুপ্রিমকোর্টের এ-সংক্রান্ত রায় আদালতের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীন বক্তব্য প্রদানের কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রবণতা রোধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল হতে ও সতর্ক থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে। সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও তাগিদ সৃষ্টি করবে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত হলো বিচারপ্রার্থী মানুষের শেষ আশ্রয়। নিজেদের স্বার্থেই আদালতকে বিতর্কের বাইরে রাখা সবার কর্তব্য হওয়া উচিত। সুপ্রিমকোর্টের আলোচিত আদেশ যে কর্তব্যবোধের তাগিদ সৃষ্টি করবে এমনটিই কাঙ্ক্ষিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর