নবী করীম (সা.)-এর জীবনে শত্রুর প্রতি দয়া ও ক্ষমার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেখা যায়। তিনি হিজরতের আগে যখন জায়েদকে সঙ্গে করে তায়েফ নগরে ইসলাম প্রচার করতে যান, তখন সেখানকার মানুষ অকথ্য অত্যাচার করে তাকে তাড়িয়ে দেয়। তখন হুজুর (সা.) বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ এরা কী করেছে, তা তারা বুঝতে পারছে না। তুমি এদের অন্তঃকরণে জ্ঞানের আলো প্রজ্ব্বলিত কর।’ তিনি নিজে কখনো কারও ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। নিজ হাতে কোনো মানুষ এমনকি কোনা জীবজন্তুকে পর্যন্ত আঘাত করেননি। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন— হুজুর (সা.)কে আমি কখনো নিজের তরফ থেকে কারও জুলুমের বদলা নিতে দেখিনি, অবশ্য কেউ আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করলে হুজুরের চেয়ে বেশি রাগান্বিত হতেও আমি কাউকে দেখিনি। বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে প্রচুরসংখ্যক শত্রু বন্দি হয়। এদের অনেককেই নবী করীম (সা.) মুক্তি দেন মুসলমানদের স্বাক্ষর জ্ঞানদানের বিনিময়ে, আর যারা নিঃস্ব গরিব, তাদের এমনিতেই মুক্তি দিয়েছিলেন। শত্রুদের প্রতি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মহানুভব আচরণের আর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো— আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হেন্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া। ওহুদের যুদ্ধে এ নারী শহীদ আমির হামজার কলিজা চর্বণ করেছিলেন। হামজার হত্যাকারী ওহুশীকে দেখে হুজুর (সা.) শোক সংবরণ করতে পারেননি। তাই ওহুশীকে তিনি বলেছিলেন, তোমাকে ক্ষমা করলাম, কিন্তু তুমি আর আমার সামনে এসো না। একবার এক বেদুঈন এসে নবী করীম (সা.)-এর চাদর ধরে এমন জোরে টান দিয়েছিলেন যে, তার দেহে দাগ পড়ে যায় এবং ওই লোকটি বায়তুল মালের রক্ষিত শস্য সম্পদ কয়েকটি উটবোঝাই করে নেওয়ার কঠোর ইচ্ছা প্রকাশ করে। নবী করীম (সা.) তখন বললেন, এভাবে আমার চাদর টেনে ধরে আমাকে যে আহত করেছ, এর বদলা যতক্ষণ না দাও, ততক্ষণ আমি তোমাকে কিছুই দিচ্ছি না। লোকটি তখন শপথ করে বলল, আমি ঠিকই করেছি এবং বদলা আমি কিছুতেই দেব না। জবাব শুনে নবী করীম (সা.) হাসছিলেন এবং তার সঙ্গে তার উটের পিঠে শস্য বোঝাই করে দিয়েছিলেন। শত্রুর প্রতি হুজুর (সা.) ছিলেন এমন দয়াশীল। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার প্রতি তার অন্তর ছিল উদার ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। চরম শত্রুও তার অপূর্ব ক্ষমা ও দয়ায় হয়ে যেত বিমুগ্ধ।
লেখক : সভাপতি বাংলাদেশ সিরাত মিশন, ঢাকা।