সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতিহাস

উড়িষ্যা

উড়িষ্যা মোগল আমলের শেষের দিকে সৃষ্ট সুবা বাংলার একটি অঙ্গ প্রদেশ এবং বর্তমানে ভারতের একটি প্রদেশ। প্রাচীন ভারতে উড়িষ্যা ছিল মগধ রাজ্যের নন্দ রাজাদের অধীনস্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ভারতের পূর্ব উপকূলে, বাংলার উত্তরে এবং অন্ধ্র অঞ্চলের দক্ষিণাংশে উড়িষ্যার অবস্থান। সংস্কৃত শব্দ ওড়া বিশ্বা বা ওড়া দেশা থেকে উড়িষ্যা নামের উত্পত্তি। পালি ও সংস্কৃত উভয় সাহিত্যে ওড়া’র জনগোষ্ঠীকে ‘ওড়াকা’ এবং ‘ওড়াহ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আধুনিক উড়িষ্যার কেন্দ্রীয় বলয়েই ওড়া অথবা উড়া আদিবাসীদের বাস। তবকাত-ই-নাসিরি, তবকাত-ই-আকবরি, রিয়াজ-উস-সালাতিন, তারিক-ই-ফিরুজশাহী প্রভৃতি মধ্যযুগীয় মুসলিম ইতিহাস গ্রন্থসমূহে ওড়া ভূখণ্ডকে ‘জাজনগর’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। সামস-ই-সিরাজ আফিফ তার গ্রন্থে প্রথম উড়িষ্যাকে ‘জাজনগর-উড়িষ্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

উড়িষ্যার ইতিহাসে কলিঙ্গ ও উত্কল আদি জনগোষ্ঠী সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন কলিঙ্গ রাজ্য সম্পর্কে বৈদিক ঘটনাপঞ্জিতে প্রাচীন তথ্যসূত্রসমূহ পাওয়া যায়। কলিঙ্গরা হিংস  ও স্বাধীন জনগোষ্ঠী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। বর্তমানের উড়িষ্যা রাজ্য প্রাচীনকালে মহাভারতীয় যুগের কলিঙ্গ, কাটারা বা মহাকাটারা এবং দক্ষিণ কোশালা— এ তিনটি ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তখন কলিঙ্গের অবস্থান ছিল বর্তমান উড়িষ্যার পূর্বাংশে, দক্ষিণ কোশালা উত্তর-পশ্চিমাংশে এবং কাটারা বা মহাকাটারা বর্তমান উড়িষ্যার দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল। কটক-ভুবনেশ্বর এবং কলিঙ্গনগর (উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ) ছিল কলিঙ্গ রাজ্যের কেন্দ্রীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত। 

অশোক কর্তৃক কলিঙ্গ বিজয় নবযুগের সূচনাকারী সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে এনেছিল। ২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্রাট অশোক কর্তৃক কলিঙ্গ বিজিত হলে ভারতের ইতিহাসে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। মৌর্য সাম্রাজ্যের ইতিহাসে কলিঙ্গ রাজের বিরুদ্ধে অশোকের ক্রম অগ্রসরমান বাহিনীর আক্রমণ ও কলিঙ্গ অধিবাসী কর্তৃক তার বিরোচিত প্রতিরোধের ফলাফল ছিল ধ্বংসাত্মক। অশোক কর্তৃক কলিঙ্গ বিজিত হলেও যুদ্ধের ফলে অমানবিক হত্যাযজ্ঞ ও রক্তপাত অশোককে ব্যথিত করে এবং তিনি এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি তার জীবনের আদর্শ হিসেবে অহিংসার পথ বেছে নেন এবং বৌদ্ধধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারীতে পরিণত হন। পরবর্তীকালে ২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অশোক বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে পরিগণিত হন। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের মধ্যে কলিঙ্গের শাসক কারভেলা উপমহাদেশের বৃহত্তর অংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মগধ তার সাম্রাজ্যভুক্ত একটি প্রদেশে পরিণত হয়। কারভেলা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের প্রথম পর্বে তার রাজ্য শাসন করেন। উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরের কাছে উদয়গিরিতে এখনো টিকে থাকা সর্বপ্রাচীন স্থাপনাটি কারভেলার সময়ের নির্মিত। কারভেলার পরবর্তী কয়েক শতক উড়িষ্যার ইতিহাস স্পষ্ট নয়। উল্লেখ্য, এ অঞ্চলে ক্ষত্রিয়দের মতো কোনো যোদ্ধা জনগোষ্ঠীর বসবাস গড়ে ওঠেনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর