মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

মা হওয়ায় অভিনন্দন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মা হওয়ায় অভিনন্দন

প্রিয় টিউলিপ!

মা হওয়ায় অভিনন্দন। মা হওয়া যে-সে কথা নয়, তাও আবার মেয়ের মা। জগতের অনেক বড় বড় জয় একত্র করলেও মেয়ের মায়ের কানাকড়িও নয়। তুমি, তোমার ভাই যখন জন্মেছিলে, তোমার মা বড় আগ্রহ নিয়ে আমায় জানিয়েছিল। তোমার খালাও দারুণ খুশি হয়ে তোমাদের জন্মের সংবাদ দিয়েছিলেন। সব সময় দিন-কাল একই গতি এবং লয়-তালে চলে না। সব কিছুরই ওঠানামা থাকে। আমাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। মা হওয়া জগতের শ্রেষ্ঠ গৌরব। যে কোনো সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী হওয়ার চেয়েও বড় কিছু। বাঙালি কৃষ্টি-সভ্যতায় প্রথম মেয়ের মা-বাবাকে সৌভাগ্যবতী, সৌভাগ্যবান বলে। তোমার নানার ছিল প্রথম মেয়ে। কষ্ট তিনি অনেক করেছেন। কিন্তু তার মতো সৌভাগ্যবান বাঙালি এ বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই। তোমার মা, খালা, এই মামার প্রথম সন্তান ছেলে। সে কারণে হয়তো দুঃখ-কষ্ট আমাদের পিছু ছাড়ে না। আমার বাবারও প্রথম সন্তান ছিল ছেলে। সারা জীবন দারুণ সরকারি নির্যাতন ও কষ্ট ভোগ করেছেন। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন অনেক। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী আমাদের পরিবারের প্রথম কন্যাসন্তানের পিতা। আমাদের দলে পড়ে তিনিও কষ্ট থেকে রেহাই পাননি। আলাদা একা থাকলে হয়তো এমনটা হতো না। ’৭৫-এর পর আমরা যখন নির্বাসনে তখন লতিফ ভাইয়ের দ্বিতীয় সন্তান ছেলে হয়। ওরা কথা বলতে শিখেই তর্কাতর্কি করত। মেয়ে রিয়া ভাইকে বলত, ‘তুই সাধারণ মানুষের ছেলে। আমি এমপির মেয়ে।’ রিয়ার যখন জন্ম তখন তিনি এমপি ছিলেন। কিন্তু অনিক সিদ্দিকী বাপ্পীর জন্মের সময় সর্বহারা পরদেশি একজন নিঃসঙ্গ মানুষ। আমার তিন ছেলেমেয়ে— দীপ-কুঁড়ি-কুশি। তিনজনই সাধারণভাবে লালিত-পালিত হচ্ছে। আমি যখন নির্বাসিত তখন দীপ-কুঁড়ির জন্ম। কুশি ঘরে আসার সময় যদিও এমপি ছিলাম কিন্তু আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন পরিবেশে অনেকটাই একা। তাই বলছি, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে তোমার সন্তান ভাবীকালে আমাদের এক অতুলনীয় গৌরবের আধার হবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে আর কোনো বাঙালি মা হয়েছে কিনা জানি না। তোমরা ভালো থাকো, সুন্দর-সুস্থ থাকো— এ কামনাই করি।

বেশ কিছুদিন হেরিটেজ নিয়ে মনটা বিষিয়ে আছে। বাড়ির কাছে পুরনো কোর্ট মসজিদে নামাজে যাই না ছয়-সাত মাস। টাঙ্গাইল থাকলে এ ক’মাস বিন্দুবাসিনী স্কুল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতাম। পুরনো কোর্ট বিল্ডিংয়ে শত বছর কিংবা আরও বেশি পুরনো মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে আধুনিক ইমারত তোলা হচ্ছে। মসজিদটি যখন দিনে দিনে জাহাজের মতো হচ্ছিল তখন বলেছিলাম, পুরনো স্মৃতিটি যেন নষ্ট করা না হয়। এখন কে শোনে কার কথা। ‘অ্যাঙ্গ উদে ব্যাঙ উদে, খইলস্যা কয় আমিও উদি’। একসময় টাঙ্গাইলের এমপি ছিলেন জননেতা আবদুল মান্নান। তার আগে আরও জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা ছিলেন। ভারত শাসন আইনে ’৪৬ সালে টাঙ্গাইল দক্ষিণে আইনসভার সদস্য ছিলেন মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ’৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হলে একসময় তিনি পদত্যাগ করেন। তার সেই শূন্য আসনে ’৪৯ সালে প্রথম উপনির্বাচন হয়। যাতে মুসলিম লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জননেতা শামসুল হক বিজয়ী হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেন। সেই আসনে এখন আবুল হাজীর ছেলে ছানোয়ার এমপি। মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের অন্যতম স্বাধীনতাবিরোধী বল্লার রাজ্জাক আনসারীর মসজিদ রোডে লোহা-লক্কড় এবং তামাকের দোকানে জনাব আবুল হাজী কয়ালের কাজ করতেন মানে গোমস্তা। তার ছেলেরা এখন বিপুল সম্পদের মালিক। তাদেরই একজন ছানোয়ার টাঙ্গাইল সদরে মাননীয় সংসদ সদস্য। মসজিদ ভাঙার ব্যাপারে তাকে বলেছিলাম, ডিসি বাহাদুরকেও চিঠি দিয়ে জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পুরনো কোর্ট বিল্ডিংয়ের মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪০০-৫০০ বছরের পুরনো টাঙ্গাইল সদর মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে নিচে মার্কেট, ওপরে মসজিদ। মানে ওপরে আল্লাহ, নিচে শয়তান। নিচে সারা দিন বেচাকেনা, ওপরে আল্লাহর আরাধনা কতটা উপযুক্ত হবে সেও আল্লাহই জানেন। বিষয়টা নিয়ে ক্ষোভে অন্তর জ্বলছিল কয়েক দিন, কয়েক মাস। বার বার বিষয়টি নিয়ে লিখতে চেয়েছি কিন্তু নানা সমসাময়িক ঘটনায় সামনে আনতে পারিনি।

ঠিক যখন বিষয়টি নিয়ে লিখছি তখন অনেকটাই উৎসাহ হারিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি। সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ আঙিনায় শেখ হাসিনা বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনই হয়তো পরিবেশবাদীরা হেরিটেজ রক্ষার নামে চেঁচামেচি শুরু করবেন। কিন্তু আমি যা দেশের কল্যাণ দেশের জন্য ভালো মনে করব তা করেই যাব। কারও কোনো চেঁচামেচি শুনব না। তার দিক থেকে কথাটা ঠিকই আছে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাজমহল গুঁড়িয়ে দেবেন কিংবা আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাগেরহাটের ষাট গুম্বজ কিংবা সোনারগাঁয়ের পানাম নগরী অথবা ঢাকার আহসান মঞ্জিল ভেঙে চুরমার করে ফেলবেন এটা কোনো জাতীয় কল্যাণের নিদর্শন নয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ আঙিনায় তার নামে বার্ন ইনস্টিটিউট করতে গিয়ে তিনি হেরিটেজ সম্পর্কে যা বলেছেন তা ছিল ঢাকা মেডিকেলের পুরনো বিল্ডিং ভাঙার প্রশ্নে কারও কারও আপত্তি নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির অশ্ববাহিনীর জন্য ভবনগুলো করা হয়েছিল। ঘোড় সৈনিকদের জন্য, না শুধু ঘোড়ার জন্য তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না। কিন্তু বিল্ডিংটি হয়েছিল অশ্ববাহিনীর জন্য। পাকিস্তান আমল থেকে সেখানে ঢাকা মেডিকেল। বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে সিট না থাকলে রোগী রাখে না। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল একমাত্র হাসপাতাল, তার যত লক্ষ-কোটি বদনাম থাকুক না কেন, মাটিতে পড়ে থাকলেও রোগীর জায়গা এবং চিকিৎসাও হয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ঢাকা মেডিকেলের বহু বিষয় গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। সরকারি হাসপাতালগুলোয় দালালদের দালালিতে মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত। কিন্তু তার পরও গ্রামের নাবুঝ রোগীদের কম-বেশি উপকারও হয়। তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরাজীর্ণ ভবন ভাঙা হলে হেরিটেজ নষ্ট হবে— এ দোষ অনেকেই হয়তো দেবেন না। কিন্তু তাই বলে ১৬০৫ সালে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর সময় নির্মিত আটিয়া মসজিদ ভেঙে ফেললে অথবা নাটোরের রাজবাড়ি কিংবা মুক্তাগাছার অথবা গৌরীপুরের রাজবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিলে নিশ্চয়ই হেরিটেজ ধ্বংসের কথা উঠবে। স্যার আনন্দ মোহন বোসের জয়সিদ্ধির বিশাল বাড়ি এক চেয়ারম্যান লুটেপুটে খাচ্ছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না! অবশ্যই উঠবে। টাঙ্গাইলের বহু পুরনো মসজিদটি ভেঙে ফেলার আগে যদি কেউ আমাকে বলত, তুমি যদি তোমার দুটি হাত কেটে দাও তাহলেই শুধু মসজিদ রক্ষা পাবে। আমি হাসিমুখে আমার দুটি হাত দিয়ে দিতে রাজি হতাম, কিন্তু মসজিদ ভাঙতে দিতাম না। ইটনায় গুরুদয়াল সরকারের বাড়ি একটা চমৎকার ভবন। তার বংশধরদের ক্ষমতা নেই। তাই আজ ভেঙে পড়ছে। হেরিটেজ হিসেবে সেটাকে রক্ষা করা কি আমাদের জাতীয় দায়িত্ব নয়? ইটনা সদরে ভূপেশ গুপ্তের বাড়ি। যে ভূপেশ গুপ্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছেন তার বাড়িটাকে হেরিটেজ হিসেবে গুরুত্ব না দিলে প্রশ্ন তো উঠবেই। এই গুরুদয়াল সরকার কিশোরগঞ্জে গুরুদয়াল কলেজ না করলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অত উচ্চাসনে যেতে পারতেন কিনা সন্দেহ। ওইসব এলাকায় শিক্ষার আলো ফুটত কিনা কে বলতে পারে। সামাজিক, রাজনৈতিক বিবর্তনে এক জায়গার মানুষ আর এক জায়গায় গিয়ে ঘর বাঁধে, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর যে ঘর ছিল অন্তত কবরের পাশে এক তলা দালানটি ওভাবে থাকলে কি ক্ষতি হতো? এখন সেখানে তিন তলা বিশাল দালান হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সাদামাটা জীবনযাপনের খবর কেউ জানবে না। বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশের ছোট্ট মসজিদ, যার পূর্ব-পশ্চিম ঠিক নেই। বাঁকা করে কাতার করা হয়। সেটা দেখতে যেমন দৃষ্টিকটু, শরিয়তের বিধানমতে গুনার কাজ। কতক্ষণ লাগে মসজিদটি ভেঙে কানিকোনা ঠিক করতে, পশ্চিমমুখী কাতার করে পূর্বমুখী মসজিদ করতে। কবরের দক্ষিণ-পশ্চিমে শেখ পরিবারের এখনো একটি পুরনো ইমারত আছে। জানি শরিকি মালিকানায় ইমারতটি বঙ্গবন্ধু কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নয়। কিন্তু ইমারতটি একটি ঐতিহাসিক হেরিটেজ। ওটি শেখ বংশের প্রতীক। এসব রক্ষা করা বা রক্ষা করতে তত্পর হতে বলা কি হেরিটেজবাদীদের খুব একটা অন্যায় কাজ?

দেশের জন্য যেমন নেতানেত্রীরা কাজ করবেন, তেমন দেশের জন্য সর্বস্তরের মানুষ, জ্ঞানী-গুণী-বিদগ্ধজন তাদের মতামত ব্যক্ত করবেন। এ নিয়ে কারও বিরক্ত হওয়ার কারণ নেই। সবাই ভালো বলবে, কেউ কোনো আপত্তি করবে না, কেউ কারও ত্রুটি দেখবে না, তাহলে তো জগত্সংসার একেবারে জঙ্গলে পরিণত হবে। নানাজনের নানা সমালোচনার মধ্য দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারাই তো দক্ষতা। নিশ্চয়ই সে দক্ষতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অর্জন করেছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর সব বিষয়ে নজর রাখা উচিত। কিন্তু সব বিষয় বলা উচিত নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু বলে ফেললে তারপর আর কারও কিছু করার থাকে না। তার কথা ভালো লোকের পক্ষে গেলে না হয় রক্ষা, কিন্তু দুষ্টদের পক্ষে যদি যায় তখন তাদের ভার বাড়ে। সেদিন কেরানীগঞ্জে জেলখানা স্থানান্তর নিয়ে বন্দীদের ব্যাপারে এক অভাবনীয় মানবিক অনুভূতি তুলে ধরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাতে বন্দীদের কারাবাস এমনিতেই কয়েক মাসের জন্য সহজ হয়ে গেছে। হ্যাঁ, এ ধরনের মানবিক গুণের বিষয় বার বার বলা এবং প্রচার করা উচিত। যাতে মানুষ চলতে ফিরতে এসব মহৎ গুণ নিয়ে বা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। রাস্তাঘাটের আলোচনা একসময় সমাজের দর্পণ হয়ে দাঁড়ায়। জেলে যেমন জঘন্য অপরাধী থাকে, তেমন বহু নির্দোষও থাকে। সবার জন্য একটা ন্যূনতম মানবিক সুযোগ থাকা উচিত। আমরা আমাদের রাজনৈতিক পিতার ওপর জেল-জুলুম থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিতে পারি। কিন্তু মুখে যা চান তা অনেক ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর অনেক দেশের জেলে টিভি পত্রিকা সব আছে। সরকার বা সমাজ একটি মানুষকে বন্দী রাখছে। তার সব যোগাযোগ ও মানবিক চাহিদা বন্ধ করে দিলে সেখানে অবশ্যই সংঘাতের সৃষ্টি হবে। তাই যতটা সম্ভব সবার জন্য শ্বাস নেওয়ার একটা জায়গা রাখা উচিত। জেলখানার বন্দীদের টেলিফোন সুবিধা, লাইব্রেরিতে পড়ালেখার সুযোগ থাকা উচিত। কারাবন্দীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকা উচিত। বন্দীজীবনে প্রায় সবার আর্থিক ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়। পরে তারা সমাজে আর জায়গা করতে পারে না। বন্দীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মননশীল চিন্তার জন্য মোবারকবাদ জানাই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লঙ্কাকাণ্ড ঘটতে দেখে শঙ্কিত না হয়ে পারছি না। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। ’৭৫-এ দেশের চরম দুঃসময়ে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের জন্ম দিয়েছিলেন। জেলা গভর্নর পদ্ধতি, কম্পলসারি কো-অপারেটিভ এবং একই দল থেকে ছয় প্রার্থীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের একটা সাময়িক পদ্ধতি চালু করতে চেয়েছিলেন। তার জন্য আজও বঙ্গবন্ধুকে কত কথা শুনতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন পদ্ধতি ধ্বংসের জন্য শেষ পর্যন্ত আপনাকে যেন দায়ী করা না হয়। এখনই এই একেবারে অথর্ব নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এসব খুন-খারাবির মধ্যে নিজেকে না জড়িয়ে সব বন্ধ করে দিন। ভালো মেরুদণ্ডওয়ালা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে জনগণের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উদ্যোগ নিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু মনে করবেন না, গণভবনে বসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের পরিপন্থী। সংসদ সদস্যের মনোনয়ন দেন সেটা ভালো কথা, ইদানীং আপনাকে দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী মনোনয়নও দেওয়ানো হচ্ছে এটা যেমন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়, তেমন আপনার জন্যও নয়— আশা করি ভেবে দেখবেন।

ক’দিন আগে কালিহাতীর প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র বল্লায় এক জনসভায় গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে হানাদাররা বল্লার বিপুল ক্ষতি এবং গণহত্যা করেছিল। সেই বল্লায় বেশ কয়েক বছর পর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সরকারের ছেলে মো. কামরুজ্জামান আসলামের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগ দিয়ে গামছা প্রতীকের প্রার্থী হওয়া উপলক্ষে এক চোখ-ধাঁধানো জনসভায় হাজির হয়েছিলাম। এত মানুষ কিসের আশায় এখনো আসে ভেবে পাই না। ’৭১-এর ১১ মে আমরা বল্লায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে কতজন আমাদের টিটকারী দিয়ে বলেছিল, ‘ঠাণ্ডু মোক্তারের পোলা বজ্জ, ওই করব যুজ্জ। দেশটারে আরও জ্বালাইব। পারলে ওরে ধরে দেওয়া উচিত।’ অস্ত্র হাতে ছিল। দূর থেকে কথাগুলো বলে প্রায় সবাই পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরদিন আমরা যখন মারাত্মক এক সম্মুখযুদ্ধে হানাদারদের মস্ত বড় বড় পাঁচটা লাশ বল্লা স্কুল মাঠে রেখেছিলাম তখন সেই লোকজনই বলেছিল, ‘ক্যা, কাইলকাই কইছি না, মুক্তিগো সাথে পারব না। দেখছ, দেখছ, আমাগো গুদা গুদা পোলারা কত বুইট্টা বুইট্টা মেলেটারি মাইরা ফালাইছে। দেইখো আর আমাগোর মুক্তিযোদ্ধাগো সাথে হানাদাররা পারব না। আমরা স্বাধীন হইয়া যাব।’

আমি সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম, মানুষ কথায় বিশ্বাস করে না, তারা কাজ চায়। হাজার কথা, এক কাজ। আগের দিন সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে পারেনি, ওই রকম দক্ষ হানাদারদের বিরুদ্ধে অসংগঠিত গ্রামগঞ্জের ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে যুদ্ধ করতে পারি। কিন্তু পরদিন বল্লার চারপাশে হাজার মানুষ যখন যুদ্ধ দেখেছে, মাটি কাঁপানো গুলিগোলার সামনেও আমরা টিকে থেকেছি। মুক্তিযোদ্ধারা বিনা ক্ষয়ক্ষতিতে পাঁচটি পাকিস্তানি হানাদারের লাশ এবং দখলকৃত অস্ত্রশস্ত্র তাদের উপহার দিয়েছে, তখন তাদের নড়বড়ে বিশ্বাসের ভিত শক্ত হয়েছে। এক যুদ্ধ দেখেই তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে, পাকিস্তান হানাদাররা পারব না, আমরা স্বাধীন হয়ে যাব। এটাই বাস্তব। মানুষ নিজে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। সে সুযোগ তারা কখনো কখনো পায় না। গণতন্ত্রের এই দুঃসময়ে তারা যদি অমন কিছু দেখে নিশ্চয়ই কেউ বলতে যাবে না, আমরা কী করব, পুলিশ তো আমাদের রাস্তায়ই দাঁড়াতে দেয় না।

আজ প্রায় আট মাস কালিহাতীর উপনির্বাচন নিয়ে ছোটাছুটি করি। প্রথম দিকে প্রায়ই শুনতাম ভোট তো দেব, কিন্তু জোর করে নিয়ে যাবে না তো? সেদিন অন্তত ২০-৩০ জায়গায় শুনলাম, এবার কেউ ভোট চুরি করতে পারবে না। ইচ্ছামতো ঘোষণা দিয়ে নিতে পারবে না। পা থেকে মাথা পর্যন্ত একজন রাজনৈতিক মানুষ হিসেবে আর কী চাই?

     লেখক : রাজনীতিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর