মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতিহাস

গুপ্ত সাম্রাজ্যে উড়িষ্যা

চার শতকে উড়িষ্যা গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সাত শতকে তা হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যভুক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়। অতঃপর উড়িষ্যা নয় শতকে ভঁজ রাজবংশীয় শাসনাধীনে আসে। আট থেকে দশ শতকের মধ্যে ভোম্ম-কারা রাজবংশ কর্তৃক উত্কল শাসনকালে ‘উড়িয়া’ ভাষা একটা সুনির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহ করে। এগারো শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে বারো শতকের শেষ পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় গঙ্গ রাজবংশ উড়িষ্যায় তাদের শাসন পরিচালনা করে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরটি গঙ্গ রাজবংশীয় রাজা অনন্ত বর্মণ নির্মাণ করান। পূর্বাঞ্চলীয় গঙ্গ রাজারাই উত্তর ভারতীয় মুসলিম আক্রমণকারীদের হাত থেকে উড়িষ্যার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান ফিরোজশাহ তুঘলক উড়িষ্যা অধিকার করলেও তিনি উপঢৌকন হিসেবে অনেক হাতি গ্রহণ করে জাজনগর (উড়িষ্যা) ত্যাগ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। ১৫৬৮ সালে উড়িষ্যার শেষ হিন্দু রাজা মুকুন্দদেবকে বাংলার আফগান সুলতান সুলায়মান কররানি (১৫৬৪-৭২) হত্যা করে উড়িষ্যা জয় করেন। মুকুন্দদেবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভারতের শেষ হিন্দু রাজ্যের অবসান হয় এবং উড়িষ্যা তার স্বাধীনতা হারায়। ১৫৭২ সালে সম্রাট আকবর কর্তৃক উড়িষ্যা মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে বাংলা সুবার অন্তর্ভুক্ত একটি অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৬০৭ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় (১৬০৫-১৬২৭) উড়িষ্যা পৃথক একটি সুবার মর্যাদা পায়।

উড়িষ্যার প্রথম মোগল সুবাদার হাশিম খান (১৬০৭-১৬১১) এবং শেষ সুবাদার আলিবর্দি খান। ১৭৪১ সালে নাগপুরের রাজা ভোঁসলে উড়িষ্যায় ধ্বংসযজ্ঞ চালান। বাংলার নবাব আলিবর্দি খান মারাঠাদের কাছে উড়িষ্যা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং মারাঠারা ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ অধিকারের আগ পর্যন্ত উড়িষ্যা শাসন করে। এর আগে পর্তুগিজ, ইংরেজ, ওলন্দাজ ও ফরাসি কোম্পানি উড়িষ্যার পিপলি, হরিহরপুর এবং বালাসোরে আলাদা বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। আঠারো শতকের প্রথমার্ধেই উড়িষ্যা বাংলার নবাবের সরাসরি শাসনাধীন একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ১৭৪১ সালে গিরিয়ার যুদ্ধের পর বাংলা ও বিহারের নিয়ন্ত্রণ নবাবের অধীনে এলেও উড়িষ্যা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে যায়। তবে ১৭৪১ সালের শেষ ভাগে নবাব আলিবর্দি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার একচ্ছত্র কর্তৃত্বের অধিকারী হন। ১৭৫১ সালে নবাব উড়িষ্যার একাংশ মারাঠা নেতা রঘুজি ভোঁসলের কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং এ অঞ্চল ১৮০৩ সাল পর্যন্ত মারাঠাদের অধীনে শাসিত হয়। এর পরবর্তী সময়ে ভোঁসলে রাজা দেওগাঁও চুক্তির মাধ্যমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে উড়িষ্যা ছেড়ে দেন।

১৮২৩ সালে কটক, বালাশোর ও পুরী— এ তিন ভাগে উড়িষ্যাকে বিভক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি অধীন রাজ্য সৃষ্টি হয়। ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত উড়িষ্যা বাংলা প্রদেশের সঙ্গে সরাসরি গভর্নর জেনারেলের শাসনাধীনে থাকে এবং বাংলা ও বিহারের সঙ্গে উড়িষ্যাকেও একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের শাসনাধীনে প্রদান করা হয়। উড়িয়া ভাষার জনগোষ্ঠীর একটি পৃথক প্রদেশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১২ সালে উড়িষ্যার উপকূলীয় অঞ্চল বাংলা থেকে পৃথক করে বিহারের সঙ্গে একত্রিত করে পৃথক প্রদেশে রূপান্তর করা হয়।

সর্বশেষ খবর