বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

অধিকার-বিবর্জিত উন্নয়ন কাম্য নয়

নূরে আলম সিদ্দিকী

অধিকার-বিবর্জিত উন্নয়ন কাম্য নয়

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলটা মোটামুটি এরকম— আওয়ামী লীগ-৮২৮, বিএনপি-৯০, জাতীয় পার্টি-৮, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য মিলিয়ে ২০৩। এবারের নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য বা বিশেষত্ব হলো এই যে, দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনটি কোনো জোটের মাধ্যমেও হয়নি। যার যার দল নিজ নিজ দলীয় প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশে এটি নতুন হলেও অন্যান্য দেশে দলীয়ভাবে ইউনিয়ন কেন, গ্রাম্য পঞ্চায়েতও দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেখানে সংঘর্ষও হয়, সেই সংঘর্ষে জীবনহানিও ঘটে। কিন্তু যেসব দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে, সেসব দেশ মৌলিক অধিকার-বিবর্জিত নয়। তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতন্ত্রের অনুশীলন, চর্চা সেসব দেশে এতই শক্তিশালী যে, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানো। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দেখা গেছে, সংগঠনের মধ্যে ব্যক্তি বা পরিবারের প্রচণ্ড প্রভাব পরিলক্ষিত হলেও সেখানকার সংগঠনগুলোর মধ্যে যোগ্য ও প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের সমাহার রাজনৈতিক সংগঠনসমূহকে কখনোই ব্যক্তিনির্ভর বা পরিবারতন্ত্রের অভিশাপে সমগ্র রাজনীতিটাকে দূষিত হতে দেয়নি। জনগণ ও সংগঠনের কর্মীদের কাছে নেতৃত্বের জবাবদিহিতার পথটাও রুদ্ধ করেনি।

যাই হোক, এবার নির্বাচন প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক জোটগুলোর দিকে তাকালে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় জোটে মাটি ও মানুষের সঙ্গে শিকড়বিহীন ভ্রান্ত বামের সমাহারে প্রতীয়মান হচ্ছিল যে, সরকার ও বিরোধী জোট বাম দ্বারা পরিচালিত। কী প্রশাসন, কী সংগঠন, কী গণমাধ্যম— সর্বত্রই তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা নিখাদ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, যারা স্বৈরতন্ত্র তো বটেই, ব্যক্তিতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রের বিরোধিতা করেন এবং কোনো কোনো অকুতোভয় সত্তা ভয়ভীতি ও প্রাপ্তি প্রত্যাশার ঊর্ধ্বে উঠে এই সকরুণ চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করেন, তাদের সংখ্যা যতই সীমিত হোক না কেন, জনমতের কাছে, এদেশের গণতান্ত্রিক মানসিকতায় উজ্জীবিত, উদ্বেলিত জাগ্রত জনতার কাছে তারা সমাদৃত। বোবা জনতা পারিপার্শ্বিকতার চাপে বিস্ফোরিত হওয়া তো দূরে থাক, তারা নির্বাক, নিষ্পৃহ ও নিষ্প্রভ। নির্বাচন কমিশনের কথায় আমি পরে আসছি। বোধকরি, এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনটি দলীয় প্রতীকে করার পেছনে শেখ হাসিনার মননশীলতায় এটিই প্রভাবিত করেছে যে, জোটের আওতা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি নিজেও অনুধাবন করতে চেয়েছেন এবং অন্য সবার কাছেও প্রতিভাত করতে চেয়েছেন, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের শিকড়টি আসলে কোথায় অবস্থান করছে। খালেদা জিয়াও অন্তত এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। তবুও আমি তাকে সাধুবাদ জানাতে পারছি না এ জন্য যে, পরিবারতন্ত্রের প্রাসাদে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচনেও গণসংযোগের অভাবে কোনো শক্ত ভিত্তি প্রতিস্থাপিত করতে পারলেন না। আমি এখানে জনান্তিকে জানিয়ে রাখি, বেগম খালেদা জিয়া যতদিন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সোপান তৈরি না করবেন, অতীতের জ্বালানো-পোড়ানোর রাজনীতির জন্য প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে যতদিন না আত্মত্যাগী স্বেচ্ছাকারাবরণে প্রস্তুত, গণতান্ত্রিক অসহযোগ আন্দোলনের উদ্যোগী, অকুতোভয়, আত্মত্যাগী কর্মী সৃষ্টি করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত তিনি যতই হম্বিতম্বি করেন না কেন, আন্দোলনের সফলতা তো দূরে থাক, সুষ্ঠু সূচনাটাই করতে পারবেন না। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে একটা ইতিবাচক দিকের নির্দেশনা দিলেও তিনি বা তার দল সৌকর্য তো নয়ই, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ক্ষেত্রটিও তৈরি করতে পারেননি। আমার এ পরামর্শের বিপরীতে বিএনপির অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেন, আমাদের আন্দোলনের সময় আমরা সসম্মানে গ্রেফতার হতাম ও রাজবন্দীর মর্যাদা পেতাম। তারা বলেন, এখন গ্রেফতারের পর থেকেই যে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয় তার বীভৎসতা ৬০ দশকের ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কল্পনাও করতে পারবেন না। কথাটি নির্ভেজাল সত্য নয়। ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত সুদীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমণে আমাদের পূর্বসূরিদের নির্যাতন-নিগ্রহের কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেই একটা পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য রাজবন্দীর মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির নেতারা চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানের অনুকম্পা লাভের প্রচেষ্টায় নিমগ্ন ও নিয়োজিত না থেকে গ্রামে-গঞ্জে যদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতেন, যদি কর্মীদের উদ্দীপ্ত ও সংগঠিত করতেন তাহলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি ভিত্তিমূল অন্তত সৃষ্টি হতো। এখানে আরও একটি ছোট্ট বিষয় উল্লেখ করতে চাই। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখলাম, বেগম খালেদা জিয়া একটু একটু করে দলের নেতৃবৃন্দের পদ ও পদবি প্রদান করছেন। এভাবে না করে পূর্ণ পরিসরটি কাউন্সিল থেকে অনুমোদিত হলে শুধু সমীচীনই নয়, দলের অভ্যন্তরে অন্তত প্রাতিষ্ঠানিকতা কিছুটা হলেও রূপ লাভ করত। কাউন্সিলে একটি কাউন্সিলরও যদি যে কোনো একটি পদের বিরোধিতা করতেন, তাহলে গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলনের ধারাটি শুধু সৃষ্টিই হতো না, কাউন্সিলরদের মনে একটা আস্থা ও স্বস্তিবোধ কাজ করত। কিন্তু  জাতির দুর্ভাগ্য—  যথা পূর্ব তথা পরং।

এবার শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে আসা যাক। নৌকা প্রতীক নির্বাচনে কর্মীদের মধ্যে ঐক্যের যে রাখিবন্ধন তৈরি করা বাঞ্ছনীয় ছিল সেটি তো বাস্তবায়িত হয়ইনি, তৃণমূল থেকে জেলা নেতারা পর্যন্ত বিভাজন, অনৈক্য এবং দলের অভ্যন্তরীণ সহিংসতা প্রকটতর হয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত, শেখ হাসিনা নিজেও অবহিত, এ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কী বিশাল মনোনয়নবাণিজ্য হয়ে গেছে। জনগণের কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার চেয়ে মনোনয়ন ক্রয়ে প্রার্থীর আর্থিক ক্ষমতাই প্রাধান্য পেয়েছে। ২০১৪ এর সংসদ নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা ও জনগণের অংশীদারিত্ব নিয়ে অনেক প্রতিবাদ হয়েছে বটে কিন্তু মনোনয়ন লাভের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, শেখ হাসিনা এবং কেবল শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যের মাপকাঠি। যেহেতু সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্যের অধিকারী শেখ হাসিনা, তাই সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তিতে ব্যর্থরাও বিভাজনের পথটি বেছে নিতে চাননি এ কারণে— সেক্ষেত্রে দল থেকে তো ছিটকে পড়বেনই, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও ঘনঘোর অন্ধকারে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হবে। তাই মনোনয়নবঞ্চিতরা দীপ্তিহীন আগুনের নির্দয় দহনে দগ্ধীভূত হলেও বিস্ফোরিত হননি। এ সীমাহীন আনুগত্যের পুরস্কারও কেউ কেউ পেয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে মনোনয়নবঞ্চিতরা একটি কথাই ভেবেছেন যে, যে কোনো মূল্যে তাদের এ নির্বাচনে লড়তেই হবে। নইলে তারা শুধু গণসংযোগবঞ্চিতই হবেন না, নিজ সংগঠনের কর্মীদের কাছেও হেয়প্রতিপন্ন হবেন। তাই বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংখ্যাই শুধু প্রকট হয়নি, দলীয় অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষও বীভৎস রূপ নিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত আহত ও নিহতের সংখ্যা শিউরে ওঠার মতো। এ বৈরিতা মেটানো দণ্ডমুণ্ডের কর্ণধার শেখ হাসিনার পক্ষে কতটা দুঃসাধ্য বা আদৌ তিনি সফল হবেন কিনা এটা ভবিতব্য বিষয়।

এখন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের কথায় আসা যাক। কমিশনের প্রধান থেকে শুরু করে কমিশনাররা একদম লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে বসে আছেন। দৃশ্যত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করার সর্বপ্রকার ক্ষমতা তাদের ছিল। কিন্তু তোষামোদির প্রবণতায় নিরপেক্ষতা তো দূরে থাক, তাদের দলীয় আধিকারীকের রূপটিই প্রতিভাত হয়েছে। তারা সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে যখন তাদের নিরপেক্ষতার কথা নির্লজ্জের মতো বলেন, তখন নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জতা নিয়ে সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা তাদের প্রতি কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘একটা কিছু কর গোলাপি, একটা কিছু কর’। এর জবাবে হয় তাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল, না হয় বলা উচিত ছিল, তাত্ত্বিকভাবে কমিশনকে যত ক্ষমতাই দেওয়া হোক না কেন, প্রশাসন তো দূরে থাক, একটা চৌকিদারও তাদের কথা শোনে না। তা না বলে বরং নির্লজ্জভাবে তারা বললেন, তাদের নাকি এসব দায় নেই!

এর আগে যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন তারাও খুব কঠিন ভাষায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। যদিও নির্বাচন কমিশনের ওইসব সাবেক প্রধান ও কমিশনারদের নিরপেক্ষতা আদৌ ছিল না বলে জনগণ তাদের নামের বিপরীতে কৌতুকপূর্ণ তকমা জুড়ে দিয়েছিল। তাই বলে আমি এটা কখনোই মনে করছি না যে, চলতি নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কথা বলার কোনো অধিকার তাদের নেই। তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে শুরু করে উপজেলা, সিটি করপোরেশন, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান কমিশনের নিদারুণ ব্যর্থতা উত্কটভাবে প্রমাণ করেছে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা কতখানি ব্যর্থ। এবং দেশে-বিদেশে প্রমাণিত হয়েছে কাগজে-কলমে নির্বাচন কমিশন যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তারা দলকানা, অযোগ্য, অথর্ব এবং নির্লজ্জতার মূর্ত প্রতীক। আরও তিন দফা নির্বাচন এখনো বাকি আছে। এই অথর্ব কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে নিহত ও আহতের সংখ্যা শেষপর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ততার নিরিখে আমি আজকে অত্যন্ত ব্যথিত হই এই ভেবে, এ নির্বাচন দলের কর্মীদের মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি করল সেটা বাংলাদেশকে সোমালিয়ার পথে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করল কিনা।

আমি ক্ষমতাসীন জোট নেত্রীকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি শেখ হাসিনা, আমি আপনার দুশমন নই। তবে আমি আপনার কঠোর সমালোচক। ক্ষমতার দোর্দণ্ড প্রতাপে আপনি অন্ধ হয়ে গেছেন। স্তাবক মোসাহেবরা আপনাকে অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরেছে। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উত্তরাধিকার; এটা আমার সমালোচকরাও স্বীকার করে। কোনোরকম প্রাপ্তি-প্রত্যাশা আমাকে বিন্দুমাত্র লালায়িত করে না। নির্যাতন-নিগ্রহ আমাকে আমার বিশ্বাসের আঙ্গিক থেকে কখনো টলাতে পারেনি। শুধু আমার হৃদয়ের সিংহাসনে মুজিব ভাই ছিলেন মুকুটহীন সম্রাট। শেখ হাসিনা, আপনি অবশ্যই অবগত, একদিকে যেমন আমাদের প্রাণের মুজিব ভাইয়ের একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সারা বাংলাদেশের প্রান্তরে প্রান্তরে বাউলের মতো গান গেয়ে, কখনো চোখের জলে বুক ভাসিয়ে, কখনো আগ্নেয়গিরির গলিত লাভার মতো বিস্ফোরিত হয়ে তার নেতৃত্বে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সশস্ত্র বিপ্লবীদের ভ্রান্ত রাজনীতির কবল থেকে তাকে রক্ষা করার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছি। অন্যদিকে বাকশাল প্রতিষ্ঠালগ্নে অকুতোভয়ে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি। এর আগেও এ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু জনসভায়, এমনকি বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতেও অকুতোভয়ে উচ্চকিত কণ্ঠে বারবার আমি বলেছি— আমি তোমার সৃজনশীল সমালোচক, মোসাহেবরাই তোমার শত্রু। কী ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলাম যে, সারাজীবন সুবিধাবাদীদের স্রোতধারা ও রোমান্টিক বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সারাজীবন নৌকার গুন টেনে গেলাম। আক্ষেপ আমার একটাই, যারা রোমান্টিক বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আমাদের মুজিব ভাই থেকে জাতির জনককে নানাভাবে কটাক্ষ করেছে, তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনা করেছে এবং মৃত্যুর পরে নানাভাবে উন্মত্ত উল্লাস ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে, তারাই আজ মুজিব ভাইয়ের নৌকায় চড়ে কি মহাসমারোহে বসন্তের মৃদু হিল্লোলে পল্লবিত জীবনযাপন করছে!

আজও আমি কোনো প্রাপ্তি-প্রত্যাশার লোভে বা কোনো নির্যাতন-নিগ্রহের ভয়ে স্রোতের অনুকূলে কথা বলি না। জীবনসায়াহ্নে এসে আল্লাহর কাছে আমার এ ফরিয়াদ যে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত আমার এ সাহস, সততা চিরঞ্জীব রেখ। মৌলিক অধিকার-বিবর্জিত একটি সমাজের বিরুদ্ধে কথা বলার আমার যে নৈতিক দায়িত্ব, সেখান থেকে আমাকে কখনো বিচ্যুত হতে দিও না, হে পরওয়ারদিগার।

     লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।

সর্বশেষ খবর