বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাট শিল্পের হাল হকিকত

আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিন

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সরকারি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে সৃষ্ট ঘোরতর অনিশ্চয়তার অবসান হলো। দেশের ২৭টি সরকারি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও পাট কেনার জন্য মন্ত্রিসভায় সোমবারের বৈঠকে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের একটি অংশ পয়লা বৈশাখের আগেই পরিশোধের কথাও বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়। দেশের ২৭টি সরকারি পাটকলে ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মরত। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ৩২ হাজার, অন্যরা বদলি শ্রমিক। বেতন ভাতা বকেয়া হয়ে পড়ায় খুলনা এলাকার শ্রমিকরা পাঁচ দফা দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে ধর্মঘট ও অবরোধের আশ্রয় নেয়। সাতটি পাটকলে টানা ছয় দিনের শ্রমিক ধর্মঘটে এক হাজার মেট্রিক টনের উৎপাদন ক্ষতি হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার কথা মনে রেখে প্রধানমন্ত্রী তাদের বকেয়া বেতন ভাতা ও পাট কেনার জন্য ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও প্রশ্ন উঠেছে এভাবে পাটকল চালু রাখার কোনো যৌক্তিকতা আছে কিনা! পাটকল চালু রাখতে সরকারকে যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে তা শ্রমিক-কর্মচারীদের দেওয়া বেতন ভাতার চেয়েও বেশি। সোজা কথায় পাট কলগুলো বন্ধ রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিনা কাজে বেতন দিলেও তাতে সরকারি অর্থের অপচয় কম হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রপাতির কারণে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বসানো পাটকলগুলোর উৎপাদন ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। বেসরকারি অত্যাধুনিক পাটকলের বিপরীতে সরকারি পাটকলগুলোর উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেশি। মাত্রাহীন লাগাতার লোকসান এড়াতে হলে পাটকলগুলোর আধুনিকায়নে নজর দিতে হবে। সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারে এমন পাটপণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি অবশ্যই একটি মানবিক প্রশ্ন। ঐতিহ্যগত কারণে পাটের প্রতি এ দেশের মানুষের স্পর্শকাতরতা থাকাও স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই যাতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি পাটশিল্পে লাভের দুরাশা না করাই ভালো। তবে লোকসান সহনীয় মাত্রায় আনার জন্য যা যা দরকার সব কিছু করা হবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর