বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

সরকারি নির্মাণ কাজ

হ-য-ব-র-ল অবস্থার অবসান হোক

সরকারি ভবন ও স্থাপনার নির্মাণ কাজে দুর্নীতি যেন ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, সরকারি অফিস, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বাসভবন— এমন কোনো স্থাপনা নেই যা নির্মাণে দুর্নীতি ও অসততার আশ্রয় নেওয়া হয় না। বিশেষত স্কুল-কলেজ, সরকারি অফিস এবং আবাসস্থল নির্মাণে বরাদ্দকৃত অর্থের অন্তত অর্ধেকই ভাগবাটোয়ারা হয় ঠিকাদার এবং দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে। ফলে সরকারি কোনো নির্মাণ কাজের ন্যূনতম মান বজায় রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারি টাকায় রাস্তা কখনো কখনো উদ্বোধনের মাস না ঘুরতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, দলীয় লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া এবং অদক্ষরা নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পাওয়ায় সিংহভাগ নির্মাণ কাজ যেনতেন ভাবে সম্পন্ন হয়। সরকারি নির্মাণ কাজ বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর যার মুল্লুক তার নীতির বাস্তবায়ন ঘটছে। পেশাদার অভিজ্ঞ ঠিকাদারদের বদলে রাজনৈতিক পরিচয়ে গজিয়ে ওঠা ঠিকাদাররা নির্মাণ কাজ পাচ্ছে। তাদের ভয়ে অভিজ্ঞ ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশগ্রহণ করতেও ভয় পান। এ ধরনের অনভিজ্ঞ এবং রাজনৈতিক ঠিকাদাররাই নির্মাণ কাজে রডের বদলে বাঁশের চটা ব্যবহারের ধৃষ্টতা দেখান। সরকারি কাজের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের লক্ষ্য থাকে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কীভাবে বেশি উেকাচ আদায় করা যায়; ফলে নির্মাণ কাজে মানহীন উপকরণ ব্যবহার করা হলেও তারা সে দিকে নজর দেন না। আগে সব সরকারি অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে। তারা দুর্নীতি করলেও ভবন নির্মাণের সময় ন্যূনতম মান রক্ষার ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সরকারি দফতর তাদের নির্মাণ কাজ নিজেদের তত্ত্বাবধানে করতেই বেশি আগ্রহী। ফলে কাজ তত্ত্বাবধানে অভিজ্ঞ জনশক্তি যেমন থাকছে না তেমন নির্মাণ কাজের দায়িত্ব যারা পাচ্ছেন তারা অবকাঠামো নির্মাণ কাজকে ছেলের হাতের মোয়া ভেবে বসছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি নির্মাণ কাজের ন্যূনতম মান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সব নির্মাণ কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। এর ফলে নির্মাণ কাজে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে। অভিজ্ঞ লোকদের তত্ত্বাবধানে অভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে কাজ করালে দুর্নীতি সত্ত্বেও ন্যূনতম মান রক্ষা নিশ্চিত হবে। চলমান হ-য-ব-র-ল অবস্থার অবসান হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর