বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড

দোষীদের আইনের আওতায় আনুন

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বাদাবন সুন্দরবন যেন চর্যাপদের পঙিক্ত অপনা মাংসে হরিণা বৈরীর উদাহরণ হতে বসেছে। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বনাঞ্চলে মাঝে মধ্যেই ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। পুড়ে ছাই হচ্ছে বনের একাংশের গাছপালা। একই এলাকায় দুই-এক দিনের ব্যবধানেও লাগছে আগুন। বনাঞ্চলে আগুন লাগা বিচিত্র কিছু নয়। শুষ্ক আবহাওয়ার দেশগুলোতে বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত দাবানল ভয়াবহ বিপর্যয়েরও কারণ ঘটায়। সুন্দরবনে অবশ্য সে ধরনের বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। বিশ্বের এ বৃহত্তম বাদাবনে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে দুইভাবে। প্রথমত, দুর্ঘটনাবশত, দ্বিতীয়ত উদ্দেশ্যমূলকভাবে। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে বারবার অগ্নিকাণ্ডের পেছনে শেষোক্ত কারণটি জড়িত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরা এবং বনভূমির ওই এলাকাটি অপদখলের অসৎ উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়। সুন্দরবনের ‘অগ্নিকাণ্ড উপদ্রুত’ এলাকাটি বর্ষাকালে পানির নিচে ডুবে থাকে। অন্তত ৫০০ জেলে সে সময় ওই এলাকায় মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকে। লাখ লাখ টাকার মাছ ধরা হয় ধানসাগর স্টেশনের সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে। অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এলাকার রাজনৈতিক টাউটেরা বর্ষাকালে মাছ ধরা, বন এলাকায় অবাধে যাতায়াত এবং জমি অপদখলের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে বার বার বনে আগুন লাগাচ্ছে এমন অভিযোগই করা হয়েছে সহযোগী দৈনিকে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে সুন্দরবনের নিচু এলাকায় বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ কই, শিং, মাগুর মাছ পাওয়া যায়। মাছ ধরার সুবিধা সৃষ্টিতেই বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে বনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। বারবার অগ্নিকাণ্ড সুন্দরবনের সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হুমকি সৃষ্টি করছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত এ বাদাবনের অস্তিত্বের স্বার্থেই আগুন লাগানোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ওই এলাকায় বর্ষা মৌসুমে যাতে মাছ ধরার কোনো সুযোগ না ঘটে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন কর্মকর্তাদের দায় নির্ণয়েরও উদ্যোগ নিতে হবে।  এ ক্ষেত্রে তাদের কারও কোরোর কালো হাত যে জড়িত, তা ওপেন সিক্রেট। যথাযথ তদন্ত হলেই যা ধরা পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর