বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

উপার্জন হালাল না হলে ইবাদত কবুল হবে না

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

কর্মজীবনে আমরা একেকজন একেক কাজ করি। কেউ ব্যবসায় জড়িত, কেউ চাকরি করি। কেউ আবার শিল্প-করাখানার মালিক, আবার কেউ শ্রমিক। কেউ কৃষি কাজ করি। যে যাই করি আমাদের উপার্জন যেন হালাল হয়। রুজি-রোজগার যেন বৈধ হয়। এই বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি কারও উপার্জন বৈধ না হয় তাহলে তার কোনো ইবাদত আল্লাহ কবুল করবেন না। ব্যক্তি জীবনে যতই ধার্মিক হওয়ার চেষ্টা করি, যদি আয়-রোজগার হালাল না হয় তাহলে সব বৃথা। নবী-রসুলরা ও আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দারা সব সময় শারীরিক ও কায়িক পরিশ্রম করে নিজের হাতের উপার্জন থেকে খাওয়া দাওয়া করতেন। সংসার চালাতেন। কারণ শারীরিক পরিশ্রম করে যে উপার্জন করা হয় তা সবচেয়ে উত্তম। হজরত মিকদাদ বিন মা‘দিকারাব (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তি নিজের হাতে উপার্জিত খাদ্য হতে উত্তম কোনো খাদ্য খায়নি। নিশ্চয় আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। বোখারি। অপর হাদিসে এসেছে, হজরত রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসুল (সা.), কোন উপার্জন সবচেয়ে উত্তম? রসুল (সা.) বললেন, মানুষের নিজ হাতের উপার্জন প্রত্যেক হালাল ব্যবসা। মুসনাদে আহমদ। অর্থাৎ নিজে শারীরিক পরিশ্রম করে যে ব্যবসা করা হয় সেটা সবচেয়ে উত্তম। প্রিয় পাঠক! নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো হালাল উপার্জন একটা পৃথক ফরজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সব ফরজের পর হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ। বায়হাকি। হালাল উপার্জন ছাড়া কোনোভাবেই ইবাদত কবুল হবে না। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস কবুল করেন। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের ওই জিনিসের হুকুম করেছেন, যেই হুকুম তিনি তার রসুলদের করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে রসুলগণ, তোমরা হালাল জিনিস খাও এবং নেক  আমল কর। তিনি আরও বলেন, হে ইমানদাররা তোমরা আমার দেওয়া হালাল খাদ্য খাও। তারপর নবী করিম (সা.) এমন এক ব্যক্তির আলোচনা করলেন, যে দীর্ঘ সফর করেছে ফলে তার চুল এলোমেলো ও ধূলিমলিন হয়ে আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে বলছে, হে আমার রব, হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম এবং হারামের মধ্যে সে প্রতিপালিত হয়েছে। এরপরও কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে? মুসলিম শরিফ। এই ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে রসুল (সা.) বোঝাতে চেয়েছেন যে, ইবাদত-বন্দেগি যতই করুক না কেন উপার্জন হালাল না হলে নিশ্চিত জাহান্নাম। হারাম খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে যে রক্ত তৈরি হয় এবং তা সারা দেহে সঞ্চালিত হয় তা সবই হারাম। হজরত জাবের (রা.) বলেন. রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ওই গোশত জান্নাতে যাবে না যা হারাম দ্বারা বর্ধিত হয়েছে। আর যে গোশত হারাম দ্বারা গঠিত হয়েছে জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান। মুসনাদে আহমদ, দারেমি, বায়হাকি। মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :  খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর